প্রশাসনের অস্বস্তি না বাড়িয়ে ইস্তফা দিন রাজীব কুমার

■ গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের রায় ঘোষনার পরমুহূর্ত থেকে রাজ্যের ADG-CID রাজীব কুমারের কোনও পদক্ষেপই পুলিশোচিত নয়। একজন কর্মরত IPS গত 2-3 দিন ধরে তিনি যা করে চলেছেন, পুলিশ সার্ভিস কোডে সে সবের কোনও স্থান নেই। যে ধরনের কাজ সাধারনভাবে কোনও দুঁদে অপরাধী অথবা বিজয় মালিয়া-নীরব মোদি মার্কা ‘হোয়াইট কলার’ অপরাধীরা করে থাকেন, সে ধরনের কাজের সঙ্গেই মিল পাওয়া যাচ্ছে পরাজীব কুমারের কাজকর্মে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য রাজীব কুমার যে পথে হাঁটছেন, তাতে কোনও ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও অস্বস্তিতে পড়ছে রাজ্য প্রশাসন। এ ধরনের কাজ রাজীব কুমার করতে পারেন না। কেন তিনি এখনই ADG-CID পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না ?

■ নির্দিষ্ট বিধি মেনে গঠিত এক পুলিশ বাহিনির ADG পদমর্যাদার অফিসার রাজীব কুমার। এই পদে আসার আগে রাজীব কুমার বিধান নগর এবং কলকাতা পুলিশের শীর্ষপদে ছিলেন। এই সব গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশের পুলিশ-সার্ভিসের নিজস্ব বিধি,পদ্ধতি মেনে চলার অঙ্গীকার করেই তিনি IPS স্বীকৃতি পেয়েছেন।
তাই এটা নিশ্চিত, পুলিশ আইন, পুলিশের নিজস্ব বিধি, পুলিশি তদন্তের ধরন এবং প্রক্রিয়া কেমন হয়, উনি জানেন। রাজীব কুমার এটাও জানেন কোনও অভিযোগের তদন্তের স্বার্থে পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থা কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইতেই পারে। এবং উনি জানেন পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার কোনও তদন্তে সহযোগিতা করার পরিবর্তে পদে পদে বিরোধিতা করা আইনি নজরে অপরাধ। CBI তদন্ত এবং তদন্তকারীদের এড়াতে রাজীব কুমার যা করে চলেছেন, কোনও সাধারন মানুষ সেই কাজ করলে, অনেক আগেই তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হতো। শুধু সাধারন মানুষই বা কেন, একাধিক প্রভাবশালীও যে একই কারনে হেফাজতে গিয়েছেন, তা এ রাজ্যের মানুষ সাম্প্রতিক অতীতে দেখেছেন। এটা ধরে নেওয়াই যায়, IPS পদমর্যাদার একজন কর্মরত পুলিশ অফিসারের প্রতিটি পদক্ষেপ ‘পুলিশোচিত’ হবে। না হওয়াটাই অস্বাভাবিক এবং আইনবিরুদ্ধ। রাজীব কুমারের এই মুহূর্তের আচরন, মনোভাব, পদক্ষেপ এবং কর্মধারা পুলিশোচিত তো নয়ই, উল্টে দুঁদে অপরাধীদের কাজকর্মের সঙ্গে খানিকটা মিল পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত কিছুর পরেও এই রাজীব কুমার পুলিশের উচ্চপদে থাকতে পারেন কিনা, তাঁকে এখনও ওই পদে রাখা সঙ্গত কিনা এবং ‘পুলিশোচিত’ মানসিকতার অভাব থাকা কোনও IPS-কে উচ্চপদে বহাল রেখে রাজ্য প্রশাসন বিতর্ক বা সমালোচনায় পরোক্ষে জড়িয়ে যাচ্ছে কি’না !

■ রাজীব কুমার ঠিক যে তদন্তটি এড়িয়ে যেতে চাইছেন, তা মূলত
এক অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং প্রতারণা, যে প্রতারণার শিকার হয়েছেন লক্ষাধিক আমানতকারী এবং সংস্থাটির নানা বিভাগের কর্মরত কয়েক হাজার কর্মী, তার শিকড় খোঁজার তদন্ত।এই ষড়যন্ত্রের তদন্ত করছে CBI বা দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা। আরও গুরুত্বপূর্ণ, নিজেদের সিদ্ধান্তে বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নয়, CBI-কে এই ষড়যন্ত্র এবং প্রতারণার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমে তদন্তকারী সংস্থার প্রাথমিক ধারনা এই অপরাধমূলক
ষড়যন্ত্র এবং প্রতারণার বিষয়ে রাজীব কুমার এমন কিছু তথ্য জানেন, যে তথ্যগুলি তদন্তে সাহায্য করবে। একজন কর্মরত IPS এই অপরাধের তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে CBI গত প্রায় দু’বছর যাবৎ আদালতের ভেতরে এবং বাইরে বলেই চলেছে। কর্মরত এক IPS-এর বিরুদ্ধে এ ধরনের শিষ্টাচার ও আইনবিরোধী অভিযোগ ওঠা কাম্য নয়। আর যদি অভিযোগ উঠেই যায়, তার পরেও সেই পুলিশ অফিসারকে উচ্চপদে বহাল রাখাও কাম্য নয়। ছ

■ রাজীব কুমার রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, CID-র ADG হিসেবে কর্মরত। রাজ্যের একাধিকপ্রান্তে নানা ধরনের অপরাধ চলছে।ভিনদেশি জঙ্গিদের তৎপরতার খবর আসছে। ধরাও পড়ছে ভিনদেশি জঙ্গিরা। পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর। এই অবস্থায় রাজ্যের ADG-CID- র ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই পদে থাকা রাজীব কুমার এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, মাসের পর মাস বিধিনিষেধের আওতায় আছেন, শত প্রয়োজনেও আদালতের{ নির্দেশক ছাড়া কলকাতা বা বিধাননগরের বাইরে যেতে পারেননি, আর এখন তো কার্যত ‘ফেরার’। তাহলে রাজ্যের সার্বিক নিরাপত্তা এই ADG-CID ব্যক্তির হাতে কতখানি নিরাপদ ? এত গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন কেউ বসে থাকবেন কেন, যিনি রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা বা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চিন্তাভাবনাকে পিছনের সারিতে পাঠিয়ে, এখন নিজেই ব্যস্ত নিজের হেফাজত যাওয়া আটকাতে।

■ রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন স্তরে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠেছে, যে অফিসার দীর্ঘদিন যাবৎ দফতরে আসেন না বা ছুটিতে আছেন বা নিজের কাজে দিল্লি-উত্তর প্রদেশ করছেন, তাঁর হাতে থাকা রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থাকবে কেন? গোয়েন্দা শাখা যে দিন দিন মুখ থুবড়ে পড়ছে, সেই খোঁজ রাখার দায়িত্ব কার বা কাদের ? প্রতিকূল পরিবেশে আজ রাজ্য তথা রাজ্যবাসীর নিরাপত্তাখ নিয়ে এহেন বিলাসিতা কি আমরা করতে পারি ?
■ রাজীব কুমারের
এমন মনোভাব দেখানোর অর্থ, তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চলা এক তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছেন। কর্মরত অবস্থায় এই কাজ কতদূর তিনি করতে পারেন ? রাজ্য প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে নিজের পদ এবং পদমর্যাদা তিনি ব্যবহার করে চলেছেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার এই কাজ কি আইনসঙ্গত? একথা অনস্বীকার্য, যে কোনও মানুষের অধিকার আছে নিজেকে বাঁচানোর। রাজীব কুমারেরও আছে। এটা নীতিবিরুদ্ধ অধিকার নয়। কিন্তু একজন ADG-CID কখনই নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য জলাঞ্জলি দিয়ে এ মাথা থেকে ওমাথা, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে দৌড়ে বেড়াবেন, এ কেমন কথা ? নিজের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা এই অফিসার কি এখনই “কর্তব্যপালনে অবহেলার” দায়ে বিভাগীয় বিধিতে অভিযুক্ত হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেননি ? তাহলে কেন এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি থাকবেন ? কেন তিনি এখনই ADG-CID পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না ?
■ শীর্ষস্তরের এক অফিসার যখন মাসের পর মাস নিজের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের থেকেও অগ্রাধিকার দিচ্ছে নিজস্ব অ্যাজেণ্ডা-কে, তখন সেই অফিসারকে পদে বহাল রেখে অকারনে সমালোচনা বা বিতর্কে কেন জড়াচ্ছে প্রশাসন ?

Previous articleআত্মঘাতী অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন স্পিকার, কিন্তু কেন?
Next articleস্কুলের মধ্যে ট্রেন, চমকে দিল মল্লারপুর