Sunday, August 24, 2025

বঙ্কিমচন্দ্রের সমালোচনাও সহ্য করেছিলেন বিদ্যাসাগর

Date:

Share post:

সুখেন্দু শেখর রায়, সাংসদ

আজ, 26 সেপ্টেম্বর, পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদন।

1830 সাল নাগাদ বিধবাদের অবর্ণনীয় দু:খকষ্টে বম্বে ও কলকাতা প্রেসিডেন্সির উদারপন্থাী শিক্ষিত সমাজে সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করে।মূলত ব্রাক্ষ সমাজ ও কিছু পত্রপত্রিকা বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করে। ওইসময় কলকাতার দুই গুরুত্বপূর্ন ধর্মীয় সংগঠন, তত্ত্ববোধিনী সভা ও ধর্মসভায় এবিষয়ে নানা আলোচনা হয়। কিন্তু বিধবা বিবাহের পক্ষে ঐক্যমত্য তৈরি হয়নি। এগিয়ে আসেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি উদারনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু নানা বাধার সম্মুখীন হন তিনি। এমনকি, বঙ্কিমচন্দ্রেরও সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাঁকে। সমস্ত বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে চললেন এই একরোখা পন্ডিত । বিখ্যাত ধর্মগ্রন্থ ‘পরাশর সংহিতা’-র ভিত্তিতে বই লিখলেন-‘বিধবা বিবাহ।’ পাতায় পাতায় উল্লেখ করলেন বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে শাস্ত্রের নিদান। কিন্তু সতীদাহের দেশে, কন্যাসন্তানের প্রতিনিয়ত হত্যা হয় যে পুরুষশাসিত সমাজে, সেখানে যুক্তিবাদী বিদ্যাসাগর গুরুত্ব পাবেন কেন? তা তিনি যতই পন্ডিত হন না কেন। লর্ড ডালহৌসির গভর্নর-ইন-কাউন্সিল এবিষয়ে যাবতীয় বিতর্ক ও উদ্ভূত পরিস্থি উপর নজর রাখছিল। সতীদাহ বন্ধে আইন করা গেছে। কাউন্সিল বিধবা বিবাহ প্রচলনেও আইন করতে আগ্রহী। সংস্কৃত কলেজের সুবাদে কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁরা বিদ্যাসাগরকে বিধবা বিবাহের বিষয়ে কাউন্সিলের কাছে গণ€-দরখাস্ত জমা দেওয়ার কথা বললেন। ঈশ্বরচন্দ্র হিন্দুশাস্ত্রের বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে তৈরি করলেন স্মারকলিপি। প্রায় এক হাজার বিশিষ্টজন ঐ আবেদনে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু বিরোধী পক্ষ, রাজা রাধাকান্ত দেব-এর নেতৃত্বে পাল্টা স্মারকপত্র জমা দেয়। রাজামশাইয়ের টাকার জোর, প্রভাব-প্রতিপত্তি যে অনেক বেশি ছিল তা বলা বাহুল্য।তাঁর ওই লিপিতে প্রায় 4 হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেন। কিন্তু গভর্নর জেনারেল ডালহৌসি বিদ্যাসাগরের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি বিধবা পুন:বিবাহের খসড়া আইন তৈরি করান। কিন্তু আইন তৈরির আগেই তাঁকে বিলেতে ফিরে যেতে হয়। নতুন গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন ক্যানিং। শেষপর্যন্ত তাঁর প্রচেষ্টায় মহাবিদ্রোহের এক বছর আগে গভর্নর-ইন-কাউন্সিল 1856 সালের 25 জুলাই পাশ করে বিধবা পুন:বিবাহ আইন।

আজ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মদিন । নবজাগরণের পথিকৃৎ, এই মহামানবের প্রতি জানাই প্রণতি ।

spot_img

Related articles

উড়ালপুল–সেতুর নীচে বেআইনি দখলদারি সরাতে ‘উচ্ছেদ অভিযান’! উদ্যোগী কেএমডিএ 

কলকাতার উড়ালপুল ও সেতুর নীচ থেকে বেআইনি দখলদারি সরাতে উদ্যোগী হল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। ইতিমধ্যেই চারটি...

ফের জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী, ২৬ অগাস্টে বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠক 

চলতি সপ্তাহ থেকেই ফের শুরু হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফর। আগামী মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট তিনি পৌঁছাবেন বর্ধমান।...

ঠাকুরবাড়ির স্বার্থের রাজনীতি ফাঁস: শান্তনুকে কাঠগড়ায় তুললেন মা-দাদা

বিজেপির মধ্যে ঝগড়া ও স্বার্থের লড়াই শুরু হয়েছে বনগাঁর ঠাকুরনগরে। মতুয়া (Matua) সমাজের প্রভূত উন্নয়ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা...

মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার কার: চরম দ্বন্দ্ব শান্তনু-সুব্রতর

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে এবার গোটা ঠাকুর পরিবার। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের ঘটা করে যে নাগরিকত্ব দেওয়ার খেলায়...