Thursday, November 13, 2025

যেভাবে রহস্য সমাধান জিয়াগঞ্জ কাণ্ডের

Date:

Share post:

জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন। মঙ্গলবার সকাল ১০.৪৫ মিনিটে বহরমপুরের পুলিশ সুপার সাংবাদিক সম্মলেন করে রহস্যের পর্দা তুললেন। জানালেন, ঘটনায় কোনও রাজনৈতিক যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পিছনে স্পষ্ট ব্যবসায়ীক বিবাদ, লেনদেনের প্রশ্ন।

ঘটনা ঘটেছিল যেভাবে —
বন্ধুপ্রকাশ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ড, পলিসির ব্যবসা করতেন। করতেন মাল্টি লেভেল মার্কেটিংও। এইভাবেই তিনি পলিসি করতেন জিয়াগঞ্জে, আবার নিজের গ্রামের বাড়ি সাগরদিঘির সাহাপুরে। তাকে এই ব্যবসায় নামিয়েছিল সৌভিক বণিক। ব্যবসার কারনেই প্রায় সারাক্ষণই বন্ধু মোবাইলে ব্যস্ত থাকত।

ঘটনার সূত্রপাত :

উৎপল বেহরার বাবা মাধব বন্ধুপ্রকাশের কাছে একটি পলিসি করান। এই কারনে তিনি দুটি কিস্তিতে টাকা দেন। দু’দফায় ২৪ হাজার টাকা করে। কিন্তু বন্ধু ওই পলিসির একটির রিসিট দিলেও বাকিটির দেননি। বারবার চেয়েও লাভ হয়নি। এই কারনে মাধববাবু প্রায়ই জিয়াগঞ্জে বন্ধুর স্কুলে চলে আসতেন, তাগাদা দিতেন। বলতেন, হয় রিসিট দাও, নইলে টাকা ফেরত দাও। এই নিয়ে বচসাও হয়েছে। মাধববাবু জানতে পারেন, বন্ধু এই ধরণের কাজ অন্য অনেকের সঙ্গেও করেছেন। পুজোর আগে মাধববাবু ছেলে উৎপলকে বলেন ফোন করে টাকা চাইতে। উৎপল ফোন করে টাকা অথবা রিসিট চাইতে। উৎপল ফোন করে চাইলে বন্ধু তাঁকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। মাথায় খুন চেপে যায় উৎপলের। ঠিক করে এর বিহিত করবে।

পুজোর আগে অস্ত্র কেনা :

পুজোর ঠিক মুখে উৎপল জিয়াগঞ্জে আসে। বোনের বাড়িতে ওঠে। বাজার থেকে একটা কুড়ুলের মতো ধারাল ও ভারী অস্ত্র কেনে। সেটা বোনের বাড়িতেই রেখে যায়। বন্ধুর বাড়ির খোঁজ করে। কিন্তু পাড়ায় এলেও বাড়ি খুঁজে পায়নি। ফের ফিরে যায় সাহাপুরে।

ফের জিয়াগঞ্জে, এবং চরম প্রতিশোধ :

দশমীর দিন ফের উৎপল আসে জিয়াগঞ্জে। রাতে ফোন করে বন্ধুকে। জানায় তার সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে যেতে চায়। বন্ধু বাড়ির ঠিকানা বলে। সে ভাবতেও পারেনি চরম ঘটনা ঘটতে চলেছে।
রাত বারোটার কিছু পরে বন্ধুর দরজায় কড়া নাড়ে উৎপল। দরজা খুলে দেয় বন্ধু। দরজা খুলে পিছন ঘুরতেই উৎপলের অস্ত্রের কোপ পড়ে বন্ধুর মাথায়। তারপর ডানহাতে। পাশের বিছানার উপর লুটিয়ে পড়ে বন্ধু। ঘরে ঢুকে বিছানার কাছে বন্ধুর স্ত্রী বিউটিকেও একইভাবে মারা হয়। আর তাদের শিশুপুত্রকে মাথায় আঘাত করে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর দৌড়ে সে বাড়ি থেকে বেরোয়। রক্তমাখা গেঞ্জি রাস্তায় ফেলে। গেঞ্জির তলায় আর একটি গেঞ্জি ছিল। আর প্যান্টের তলায় আর একটি প্যান্ট। সেই প্যান্টও ছেড়ে ফেলে দেয়। এরপর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে সে ঘাট পেরিয়ে সাগরদিঘি চলে আসে। বাড়িতেই এই ক’টা দিন সে ছিল।

উৎপলকেই কেন সন্দেহ হল :

মোবাইল ডাম্প করে ঘটনার দিন রাতে উৎপলের মোবাইল নম্বর পায় পুলিশ। এবার সাহাপুরে বহু মানুষ বন্ধুর কাছে পলিসি করে। তাদের কেউ এই ঘটনায় জড়িয়ে কিনা জানতে পলিসি হোল্ডারদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, কথা বলতে গিয়ে লক্ষ্য করা গেল মাধববাবু স্বাভাবিক আচরণ করলেও, উৎপলের আচরণ একটু অন্যরকম। ফলে তাকে দু’বার জেরা করা হয়। তাতেও সে মুখ খোলেনি। সোমবার রাতে ফের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উৎপল ভেঙে পড়ে জানায় টাকা ফেরৎ না দেওয়া এবং সেই টাকা চাওয়ার জন্য অশ্রাব্য গালিগালাজ শোনায় মাথার ঠিক ছিল না। খুন চেপে যায়। তারপরেই পরিকল্পনা।

বন্ধুর বাড়ি থেকে :

বন্ধুর মোবাইল ফোন দুটি পাওয়া যায়নি। বহু লোক বাড়িতে ঢোকার সময় কেউ হাতিয়েছে বলে ধারণা।

বন্ধুর বাড়ির টাকা বা সোনা কিছুতেই হাত দেয়নি উৎপল।

রাত বারোটা ছ’মিনিট পর্যন্ত ঘটনার দিন হোয়াটস অ্যাপ করেন বন্ধুর স্ত্রী বিউটি। ফলে ঘটনা তারপরেই ঘটেছে। কারন, ফোন এলেও তা ধরেনি বিউটি।

বাড়িতে একটি চটি, কিছু জায়গায় পায়ের ছাপ মিলেছিল। সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়িতে দুধ দেওয়ার লোক ফোন করে। ফোনে সাড়া না পেয়ে বাড়ির জানলায় গিয়ে রক্তাক্ত বন্ধুকে দেখে। খবর দেয় পড়শিদের। আসে পুলিশ।

চিঠির উত্তর মেলেনি :

বিউটির লেখা চিঠির উত্তর দেননি পুলিশ সুপার। তুমি ছেলেকে দেখ, আর পেটেরটাকে আমি নিয়ে গেলাম। এই চিঠির কারন কী? সত্যি এটি বিউটির লেখা? যদি তাই হয়, তাহলে রহস্যটা কী? যদি না হয়, তবে কে লিখল এমন চিঠি!!!

তাহলে সৌভিক!! :

পুলিশ আটক করেছে সৌভিককে। সুপার জানান, প্রথমে তদন্তে নেমে সকলেই বলেছেন, সৌভিকের কথা। কারন, তাকে দেখা যেত বন্ধুর সঙ্গে। বন্ধুকে শেয়ার, ডিবেঞ্চার, মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ে নামায় সৌভিক। যার দরুণ বেশ কিছু টাকা ধার হয়ে যায় বন্ধুর। সেই টাকার পাওনাদাররা তাগাদা দিত বন্ধুকে। চাও বাড়ছিল। সৌভিক মাসে একবার করে বন্ধুর কাছে আসত। বেশ কিছু টাকা সেও আত্মসাৎ করেছে বলে খবর। পুলিশ জানাচ্ছে, অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

spot_img

Related articles

“রিচার নামে স্টেডিয়াম ইতিহাস হয়ে থাকবে”, উচ্ছ্বসিত ঝুলন

শিলিগুড়িতে রিচা ঘোষের(Richa Ghosh)  নামে স্টেডিয়াম হচ্ছে শিলিগুড়িতে। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের নামে...

‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-র ট্রেলার-পোস্টার লঞ্চে ‘বাবা-মেয়ে’র রসায়নে চিরঞ্জিৎ-রুক্মিণী

অর্ণব মিদ্যার ছবি 'হাঁটি হাঁটি পা পা'-র ট্রেলার ও পোস্টার লঞ্চের জমজমাট অনুষ্ঠান হল ফ্লোটেলে। বৃদ্ধ বাবা ও...

লক্ষ্য ২০২৭! ২৫ নভেম্বর শুরু ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে। রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস...

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে স্বচ্ছতা আনতে চালু অনলাইন অডিট ব্যবস্থা

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এ বার থেকে সমস্ত সমবায় সমিতি...