২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের কমপক্ষে ৫৫ জন তৃণমূল কাউন্সিলর নিজেদের ওয়ার্ডে পিছিয়ে আছেন!

গেরুয়া ঝড়ের জেরে ওই ভোটে মুখ্যমন্ত্রীর ওয়ার্ডও হাতছাড়া হয় তৃণমূলের৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়াতেই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি কলকাতা পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ন্তগত। লোকসভা নির্বাচনের ফল অনুযায়ী, ওই ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল! পিছিয়ে থাকা কাউন্সিলরদের মধ্যেই আছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ৬ জন কাউন্সিলর৷ ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে এই ফলাফল দেখার পর ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রতন মালাকার হতবাক হয়ে বলেছিলেন, “কী এমন ঘটলো যে, লোকসভা ভোটে এই বিপরীত ফল?”

বিজেপির এই চোরা হাওয়া লোকসভা ভোটে ধরতে পারেনি তৃণমূল ৷ কিন্তু সেই হাওয়া যে আর ‘চোরা’ নেই, নিশ্চয়ই শাসক দল বুঝেছে ফল প্রকাশের পর৷ সুতরাং, আসন্ন কলকাতা পুরভোটে তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কি’না, সেদিকে যেমন সবার নজর, একইসঙ্গে গোটা রাজ্যের কৌতূহলি দৃষ্টি মুখ্যমন্ত্রীর বাসস্থানের ওয়ার্ড ৭৩-এর দিকেও৷ একইসঙ্গে এটাও তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও ভবানীপুরে টান পড়েছিলো তৃণমূলের ভোটে৷ সামান্য কয়েকশো ভোটে হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিলো বিজেপি৷

লোকসভা ভোটে ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল অল্প ভোটে পিছিয়ে থাকলেও সেই ধাক্কার একটা অভূতপূর্ব অভিঘাত তৈরি হয়েছে৷ ভোট-বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় কম৷ এই কারনেই লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী প্রায় ৫০০ ভোটে পিছিয়ে যায় তৃণমূল ৷ তৃণমূলকে একসময় কটাক্ষ করে দক্ষিণ কলকাতার পার্টি বলা হতো। গেরুয়া দাপটে সেই দক্ষিণ কলকাতাও উদ্বেগে রাখছে শাসক দলকে৷

পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট, বাকি ১৪৪টি ওয়ার্ডের মতো ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিতে সলতে পাকাচ্ছে বিজেপি৷ এমনিতেই এই ওয়ার্ডে বিগত একাধিক নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে আছে বিজেপি৷ কংগ্রেস-বামেরা তৃণমূল-বিরোধী ভোট কাটলেও লোকসভা ভোটে বিজেপিই এগিয়ে ছিলো৷ আগামী পুরভোটেও মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে বিজেপি৷ এই ওয়ার্ড ধরে রাখতে তৃণমূলকে ‘লড়াকু’ ইমেজের প্রার্থী দিতেই হবে৷ নাহলে একুশের বিধানসভা ভোটে খারাপ প্রভাব পড়বে৷ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর নিষ্ঠাবান তৃণমূলি হলেও এলাকার বক্তব্য, ‘জোশ’-এর ঘাটতি আছে৷ অথচ এবার এই অতি-সক্রিয়তাই প্রধান ও প্রথম বিষয়, যা মাথায় রাখতে হচ্ছে তৃণমূলকে৷ এলাকা থেকেই তাই দাবি উঠছে, বর্তমান কাউন্সিলরকে অন্য ওয়ার্ডে সরিয়ে ৭৩ নম্বরে জোড়া-ফুল প্রতীক তুলে দেওয়া হোক কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভাই হলেও কার্তিক দীর্ঘদিন ধরেই নিজের যোগ্যতায় দক্ষিণ কলকাতায় শক্তপোক্ত সংগঠন গড়ে তুলেছে৷ গতবার এই এলাকায় একটি দুর্গাপুজো উদ্বোধনে আসার কথা ছিলো বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের৷ এই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েই বিজেপির এই পাকা ঘুঁটি ‘খেয়ে’ নেন৷ ফলে শাহের আর ওখানে গতবার দুর্গাপুজো উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি৷ জনপ্রতিনিধি না হয়েও কার্তিকের পরিচিতি, প্রভাব, সংগঠন কারো থেকে কম নয় বলে তৃণমূলের একাংশও মনে করে৷
তবে এলাকার তৃণমূল শিবির একইসঙ্গে এ বিষয়েও নিশ্চিত, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পুরভোটের স্টিয়ারিং থাকায় দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপি যতখানি সাফল্য আশা করছে, তা কিছুতেই হবেনা৷

আরও পড়ুন-মোদি জমানায় গণতন্ত্র বিপন্ন, বিভাজনে মদত, সমালোচনায় ‘দ্য ইকনমিস্ট’
