Saturday, August 23, 2025

গেরুয়া নেতাদের ‘স্ট্যাণ্ড-আপ কমেডিয়ান’ বানালেন দিল্লিবাসী

Date:

Share post:

টানা ২৭ বছর বিজেপি’র অধরা থাকলো দেশের রাজধানী দিল্লি৷

দিল্লি-দখল করতে এবার মরিয়া ছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ৷ ভোট প্রচারে প্রতিশ্রুতির জোয়ারের পাশাপাশি হুমকিও ছিলো বিরামহীন৷ দিল্লির ভোটের ফল বুঝিয়ে দিয়েছে মোদি- শাহদের যাবতীয় বক্তব্যকেই ‘স্ট্যাণ্ড-আপ কমেডি’-র বাইরে আর কিছু ভাবেননি দিল্লিবাসী৷ একজন কমেডিয়ানের উপস্থিত জনতার সামনে কোন বিশেষ বিষয়কে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমায় সরাসরি উপস্থাপনকে ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডি’ বলে৷ ভোটের ফল বলছে দিল্লিতে বিজেপি প্রায় সেই কাজই করেছে৷

এই উপ-রাজ্যে বিজেপি- রাজ ছিল শেষবারের মতো ছিলো ২২ বছর আগে৷ প্রয়াত সুষমা স্বরাজ ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে শেষবারের জন্য ৫২দিনের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ তার পর থেকে ওই চেয়ারের ধারেকাছেই যেতে পারছে না গেরুয়া-নেতারা৷

২০২০ সালে ফের ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় এলো আম আদমি পার্টি৷ যদি না কোনও ‘পরিকল্পিত’ অঘটন ঘটে, তাহলে দিল্লিতে সেই ২০২৫ সাল পর্যন্ত ‘বিরোধী’-ই থাকতে হবে “দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী” নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ-কে৷ সেই ২০১৪ থেকে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে জিতে আসা বিজেপি’র রথী-মহারথী নেতারা৷ মোদিজি, শাহজি তো আছেনই৷ কিন্তু ২০২০ সালেও কোনও কিছুই কাজে এলো না৷ মোদিজি ক্ষমতায় আসার পরের বছর, ২০১৫ সালে, দিল্লি বিধানসভার ভোট হয়েছিলো৷ তখনও ‘হনিমুন-পিরিয়ড’ কাটেনি৷ বিজেপি’র গায়ে তখনও নতুন বৌ-এর গন্ধ৷ সেবার মোদিজির একাধিক সভা সত্ত্বেও ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি পায় মাত্র ৩টি আসন৷ বাকি ৬৭ আসনই চলে যায় আম আদমি পার্টির দখলে৷

দিল্লিতে কোনওদিনই বিজেপির রেকর্ড ভালো নয়৷ এই উপ-রাজ্যে বিজেপি-রাজ ছিল দু’দশক আগে৷ ১৯৫২ সালে দিল্লিতে বিধানসভা চালু হওয়ার পর কখনই টানা ৫ বছর শাসনক্ষমতায় টিঁকে থাকতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৫২ থেকে এ পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৭ জন৷ প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের চৌধুরি ব্রহ্মপ্রকাশ,দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীও কংগ্রেসের, গুরমুখ নিহাল সিং৷ এরপর ১৯৫৬ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত বিলোপ ঘটানো হয় বিধানসভার৷ ১৯৯৩ সালে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির মদনলাল খুরানা৷ পদে ছিলেন ২ বছর ৮৬ দিন৷ ১৯৯৬-তে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপিরই সাহিব সিং বর্মা ৷ তিনি এই পদে থাকতে পেরেছেন ২ বছর ২২৮ দিন৷ দিল্লির পঞ্চম এবং প্রথম মহিলা-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ১৯৯৮ সালের ১২ অক্টোবরে দায়িত্ব নেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ৷ তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল মাত্র ৫২ দিন৷ সুষমা স্বরাজই দিল্লিতে বিজেপির আপাতত শেষ মুখ্যমন্ত্রী৷ সুষমা-বিদায়ের সঙ্গেই দিল্লিতে বিজেপি-রাজ খতম হয় ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর৷ সুষমা স্বরাজের পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত৷ আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন মাত্র ৪৯ দিন, ২০১৩-র ডিসেম্বরের শেষভাগ থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি’র শুরু পর্যন্ত৷ ২০১৫-র নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন সেই কেজরিওয়াল৷ তখন থেকে দিল্লিতে টানা আপ-জমানা৷ এবারও বিজেপিকে লজ্জায় মুখ ঢাকতেই হচ্ছে৷

দিল্লির এবারের নির্বাচন বিজেপির কাছে ছিলো অতীব গুরুত্বপূর্ন৷ এবারও দিল্লি হাতছাড়া হওয়ায় গোটা দেশেই বিজেপির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ এমনিতেই তো দখলে থাকা একের পর এক রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছে৷ তার উপর এবারও দেশের রাজধানী বিজেপির অধরা, ফলে মোদি-শাহের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট রইলো না৷ ২০১৫ সালের দিল্লির ভোটে নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি৷ এবার ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ছিলেন মোদি-শাহ জুটি, কিন্তু দিল্লিবাসী এবারও ছুঁড়ে ফেলে দিলো বিজেপিকে৷

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...