Sunday, November 23, 2025

আজ মরলে ‘না খেয়ে’, কাল মরলে করোনায়

Date:

Share post:

 

সুভাষ দত্ত
(পরিবেশবিদ)

এ বছরের ২ মার্চ পর্যন্ত অন্ততঃ ১০ বার দিল্লি যেতে হয়েছে। ইউরোপের সাথে যোগসূত্রের সুবাদে করোনার ঝড় ওঠার খবর আগেই জানতাম। কলকাতা এবং দিল্লি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের হালও স্বচক্ষে দেখেছি। একবার বিদেশের যাত্রী নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতায় আসা বিমানেও চড়তে হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরে কোন বিশেষ পরীক্ষা ব্যবস্থা চোখেই পড়েনি। ১৫ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে দু’জায়গায় বিমানে যাবার কথা ছিল৷ টিকিট কেটেও তা Cancel করেছিলাম।

সারা বিশ্বকে বিপন্ন হতে দেখে আমার মতন সামান্য একজন ব্যক্তি যে সিদ্ধান্ত মার্চ মাসের মাঝামাঝি নিতে পারলো, বিদেশ থেকে আগত বিমানের ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকারের তা নিতে লাগালো বাড়তি আরও ১ সপ্তাহ।

দেশে ৩০টার মতন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রত্যহ ১০০-র মত উড়ান চলে। সেই Check post-টা কিন্তু আমরা ঠিকসময়ে লক করতে পারিনি।

মালয়েশিয়াতে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ একটি ধর্মীয় সন্মেলন হয়, যেখানে কয়েক হাজার মানুষ যোগদান করেছিলেন৷ ভারত থেকেও অনেকে সেখানে গিয়েছিলেন। ওই সন্মেলনে যোগদানকারীর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি করোনা’র হদিশ (পরে আরও বেড়েছে) পাওয়া যায়৷ ভারতের বিমানবন্দরে কোনপ্রকার পরীক্ষা ছাড়াই তারা অবতরন করেন এবং দেশের জন-অরণ্যে ছড়িয়ে পড়েন। এখনও তাদের খোঁজ চলছে।

সম্প্রতি দিল্লিতেও এমন একটি ধর্মীয় সমাবেশে যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যেও করোনা ধরা পড়েছে। আমাদের সবাইকে অবাক করে লকডাউনকে নিল-ডাউন করিয়ে, প্রশাসনের নাকের ডগায় সন্মেলন সুসম্পন্ন হল এবং ভাইরাস নিয়ে অনেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লেন। একটা সূঁচকে খড়ের গাদায় ফেলে, তারপর সেটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করলে যেমন হয়, আমাদের অবস্থাও এখন ঠিক তেমনই। ১৩০ কোটির দেশেবিদেশ থেকে আগত প্রত্যহ মাত্র ২৫ হাজার (আনুমানিক) মানুষকে আমরা ঠিকভাবে চেক- আপ করতে পারলাম না৷ আর সবাইকে তারপর লকডাউন করে দিলাম।

এই মুহুর্তে লকডাউন ছাড়া উপায় নেই একথা ঠিক৷ কিন্তু আরও যথার্থ হতো যদি প্রথম থেকেই সরকারি পর্যায়ে সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হত। ভারতবর্ষের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ স্বনির্ভর এবং বেশিরভাগই গরীব। এই আর্থ-সামাজিক বাতাবরণে ঠিকঠাক লকডাউন অসম্ভব। করোনা ছাড়াও এক বিরাট স্বাস্থ্য ও আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছি আমরা। সেই সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতি আজ সত্যিই চিন্তায় ফেলেছে।

২০০৮ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে ভেজাল তেলে চলা টু-স্ট্রোক অটোরিক্সা বাতিল করে এলপিজি-র ৪-স্ট্রোক অটোরিক্সা চালুর নির্দেশ দেওয়ার সময় আমাকে সরাসরি একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ইংরেজিতে কথাটি ছিল, “Today’s bread is more important than tomorrow’s breath” অর্থাৎ “আজ খেতে পাবো কিনা সেটা আমাদের (অটোচালক) কাছে বেশি জরুরি, কাল বাঁচব কিনা তার থেকেও বেশি।”
‘দিন আনা দিন খাওয়া’ কিছু মানুষের পাশে আমাকে এখন দাঁড়াতে হচ্ছে। ওঁদের হয়েই বলছি “মরতে তো হবে একদিন, যদি আজ মরি তাহলে “না খেয়ে” মরবো, আর কাল মরলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে।”

spot_img

Related articles

কমিশনের SIR প্রক্রিয়া বেআইনি: BLO-দের সমস্যা তুলে তোপ কল্যাণের

গোটা দেশের ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১ মাসের মধ্যে তৈরি হবে খসড়া ভোটার তালিকা (draft voter list)।...

মন্দারমণিতে গিয়ে বিপত্তি: সমুদ্রে তলিয়ে নিখোঁজ আইটি কর্মী 

মন্দারমণি বেড়াতে এসে বড়সড় বিপদের মুখে পড়লেন এক যুবক। শনিবার বিকেলে সমুদ্রে নামার পর থেকেই নিখোঁজ তিনি। ঘটনার...

কসবার হোটেলে যুবক খুনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ২ মূল অভিযুক্ত

কলকাতা শহরের বুকে হোটেলে যুবক খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য। খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই মূল অভিযুক্তকে...

অসুস্থ স্মৃতির বাবা, স্থগিত বিবাহ অনুষ্ঠান

স্মৃতি মান্ধানার বাবা অসুস্থ, আপাতত স্থগিত হয়ে গেল পলাশ- স্মৃতির বিবাহ অনুষ্ঠান। বিগত কয়েক দিন ধরেই তারকা জুটির...