Thursday, August 28, 2025

ছোট দেশ তো কী! নয়া দিল্লির পক্ষে নেপালকে চোখ রাঙানো সম্ভব নয়

Date:

Share post:

করোনা মহামারীর মাঝেই ভারত নেপাল সম্পর্কে ফাটল। কিন্তু কেন?

ব্রিটিশরা যখন ভারতের ছড়ি ঘোরাচ্ছে তখন নেপালের সীমান্ত চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়েছিল। পূর্বে মেচি নদী আর পশ্চিমে মহাকাল নদী। উত্তরের তিব্বত, আর দক্ষিনে তরাই অঞ্চল। ১৮১৬ সালে সুগৌলির সন্ধিতে সেটাই নির্দিষ্ট করা হয়। তারপর ২০০ বছর ধরে হয়নি সমস্যা। ১৯৪৭-এ ভারতের স্বাধীনতার সময়েও কোনও টানাপোড়েন হয়নি। তাহলে হল কেন?

অনেকে বলছেন এটার কারণ মহাকালী নদীর উৎস। মহাকালী নদী ভারত-নেপাল উভয় দেশের হিন্দুদের কাছে পবিত্র। ভারত-নেপাল সীমা বরাবর প্রবাহিত থাকার সময় তার নাম মহাকাল। উত্তরাখণ্ডে নাম শারদা। উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের কালাপানি থেকে উৎপত্তি এই নদী— ধর্মবিশ্বাস এই রকমই। কয়েকটি প্রস্রবণ মিলে মহাকালী নদী তৈরি করেছে বলে মানুষের বিশ্বাস। ওই প্রস্রবণগুলিকে স্থানীয় হিন্দুরা পবিত্র হিসেবে মানেন।

মহাকালীর খাতে আরও দু’টি ধারা এসে মিশছে। একটা কালাপানি নদী, আর একটি ধারার নাম কুঠি নদী। অতএব কুঠি নদীর পূর্ব তীর পর্যন্তই হল নেপালের সীমানা এবং লিপুলেখ, কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা মোটেই ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পিথোরাগড় জেলার অংশ নয়, নেপালের মহাকালী জেলার অংশ— কাঠমান্ডু তা প্রমাণে মরিয়া।

একসময়ে ভারত যখন ব্রিটিশ অধীন, তখন নেপালের গোর্খা রাজত্ব স্বাধীন। নেপালের রাজা ধীরে ধীরে উত্তরপ্রদেশের অবধে হানা দিচ্ছিলেন। দখল করে নিয়েছিলেন তরাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। পূর্বে মেচি পেরিয়ে তিস্তা, আর পশ্চিমে কুমায়ুন ও গাড়বাল পেরিয়ে শতদ্রু নদের তীর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। ফলে বৃটিশকে ব্যবস্থা নিতে হয়। নেপালের বিরুদ্ধে ১৮১৪ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বছর দুয়েক চলে সে যুদ্ধ। পিছু হঠতে বাধ্য হয় গোর্খা সাম্রাজ্য। সন্ধিতে বাধ্য হয়। ১৮১৬ সালে বিহারের সুগৌলীর চুক্তিতে নেপালের সীমানা নির্ধারিত হয়ে হলো পশ্চিমে মহাকালী থেকে পূর্বে মেচি পর্যন্ত এলাকা। প্রায় ২০৪ বছর আগে থেকেই এই সীমার মধ্যে আবদ্ধ নেপাল।

তাহলে?

লিপুলেখ থেকে লিম্পিয়াধুরা পর্যন্ত যে এলাকাকে সম্প্রতি নিজেদের মানচিত্রের মধ্যে দেখাতে শুরু করল নেপাল, সেই এলাকা কিন্তু স্বাধীনতার সময় থেকেই ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৫০-এর দশকে চিন যখন তিব্বত দখল করল, তখন নেপাল-চিন সীমান্তে ভারত বেশ সেনা বসায়, নেপালের অনুমতি নিয়ে। ১৯৬৯ সালে ভারতকে ওই চৌকিগুলি নেপাল সরিয়ে নিতে বললে, ১৭-১৮টি চৌকি ভারত সরিয়ে নেয়। এরমধ্যে কালাপানির নাম ছিল না। অর্থাৎ তখনও নেপাল কালাপানিকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করেনি। ২০১৫ সাল থেকে নেপাল সুর চড়াতে শুরু করেছিল লিপুলেখ, কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা নিয়ে। মে মাসে ধরচুলা থেকে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত মহাসড়ক তৈরির কাজ ভারত শেষ করার পরে নেপালের সুর চড়েছে। ভারতের তৈরি এই নতুন সড়কটা তৈরি হওয়ার ফলে মানস সরোবরে যাওয়া ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের পক্ষে অনেক সহজ হবে। মানস সরোবরে যেতে আগে সিকিমের নাথু লা দিয়ে বা নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে তিব্বতে অর্থাৎ চিনে ঢুকতে হত।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের এই অবস্থানের নেপথ্যে চিনের ভূমিকা রয়েছে। তবে ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় হাতে পেতে ভারতকে কৌশলী হতে হবে। প্রয়োজনে নেপালিদের আবেগ উস্কে দিয়ে তীর্থ বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নেপালের নাগরিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার করে দেওয়া যেতে পারে। ভারতের পরিকাঠামো ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া যেতে পারে।

কারণ? প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা একটু তাকিয়ে দেখুন…

পাকিস্তান এবং চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সাপে-নেউলে।

শ্রীলঙ্কার সরকার চিনের সমর্থক। সাম্প্রতিক ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দলকে মোটেই সমর্থন করেনি।

মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল এটা বলা যাবে না।

ভুটান ভারত নয়, চাইছে চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে!

দিল্লির সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নয় ঢাকার। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির ঠিক আগে মোদির ঢাকা সফর বাতিল করার পথ খুঁজতে হচ্ছিল।ভাগ্যিস সবকিছু বন্ধ হলো! নইলে…

আর ভারত-নেপাল সম্পর্কটা কেমন? এতটা লেখা হলো তো সেই কারণেই।

এবার বুঝুন এই বিরাট দেশ নিজেদের বিদেশ নীতির কারণে ফান্দে পড়িয়া কান্দে ….

spot_img

Related articles

হাসিনার প্রত্যাবর্তনে ভয় পাচ্ছে বিএনপি! নির্বাচন ভণ্ডুলের আশঙ্কা খালেদা জিয়ার দলের

বাংলাদেশ(Bangladesh) জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। চাপের মুখে পড়ে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে...

রেস্তোরাঁয় বিল মেটাতে না পেরে বাসন ধুয়েছিলেন! ঘরভাড়া মেটাতে হিমশিম খেতেন আশিস

বলিউড (Bollywood) অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থী (Ashish Vidyarthi)। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও আর্থিক সমস্যার...

দু’দিনেই তিন হাজার আবেদন! পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে বিপুল সাড়া

রাজ্যে ফিরেছেন কর্মসংস্থানহীন বহু শ্রমিক। তাঁদের আর্থিক সুরাহার লক্ষ্যে নবান্নের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘শ্রমশ্রী’ অ্যাপ। আর যাত্রা শুরুর...

ওয়াক ফর প্যারালিম্পিকসে হাঁটলেন একাধিক বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাথলিটরা

প্রতিবছরের মতো এই বছরও হয়ে গেল সিভিলিয়ান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে walk for paralympics পদযাত্রা। এই পদযত্রা শুরু হয়েছিল...