লক্ষ্য বাংলা দখল। লক্ষ্য নবান্ন। লক্ষ্য একুশের ভোট। লক্ষ্য তৃণমূলের বিনাশ। আর সেই লক্ষ্যেই দিল্লি অভিযান। দিল্লি অভিযান বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ ব্রিগেডের। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি, নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য রাজধানী শহর দিল্লিতে সপ্তাহব্যাপী বৈঠক চলছে বিজেপির। দলের সর্বভারতীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ এবং পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক মুকুল ঘনিষ্ঠ কৈলাস বিজয়বর্গীয়ই বৈঠক ডেকেছেন। তবে এই বিশেষ বৈঠকে কাদের ডাকা হবে বা হবে না, কারা থাকবেন বা থাকবেন না, সে সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজের হাতে রাখতে চাইছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের খবর। আর সেখান থেকেই পরিস্থিতি জটিল ও গরম হতে শুরু করে। আর শেষ পর্যন্ত তা দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়ের মতানৈক্যর জেরে কার্যত
সঙ্ঘাতের চেহারা নেয় বলেই দিল্লির খবর।

বিজেপির একটি বিশ্বস্ত ও জোরালো সোর্স জানাচ্ছে, গত বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে দিলীপ ঘোষ শিবিরের তৈরি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট পেশ করেছিলেন শিব প্রকাশ। তাতে বাংলায় বিজেপির প্রায় ১৯০টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনার আভাস ছিল। কিন্তু মুকুল সংশয় প্রকাশ করে ভরা সভায় সেই তথ্য কার্যত উড়িয়ে দেন। রাজ্যজুড়ে যতই মিটিং-মিছিল হোক কিংবা গেরুয়া শিবিরের একটা হইহই-রমরমা ব্যাপার চলুক, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলায় বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যুক্তি-তথ্য সহকারে তুলে ধরেন মুকুল। আর তাতেই ক্ষেপে লাল দিলীপ ঘোষ শিবির। সবমিলিয়ে বৈঠকের মধ্যেই যুক্তি-পাল্টা যুক্তির লড়াইয়ে শুরু হয় বাদানুবাদ। মতানৈক্য থেকে ধীরে ধীরে তা চরম সংঘাতের রূপ নেয়। বাড়ে তিক্ততা। বিজেপির অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুকুল শিবির দিলীপের বিরুদ্ধে রাজ্যের সংগঠন “কুক্ষিগত” করতে চাইছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে নালিশ জানিয়েছে।


এদিকে প্রথমদিনের বৈঠক শেষে দিল্লি নেতৃত্বকে মুকুল সাফ জানিয়ে দেন, পরের বৈঠকগুলিতে তিনি থাকবেন না। যথারীতি শনিবার চোখের ইনফেকশনের তত্ত্ব তুলে ধরে কালো চশমা পড়ে কলকাতায় ফেরেন মুকুল। বিমানবন্দরে নেমে জানান, একান্তই ব্যক্তিগত ও চোখের ইঞ্জেকশনের জন্য। বাকি সব দ্বন্দ্ব মিডিয়ার তৈরি। অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষ তার আগেই বৈঠকে মুকুলের গরহাজিরা নিয়ে করোনা আতঙ্কে মুকুল দূরে দূরে থাকছেন মন্তব্য করে বাজার গরম করে দেন।

তবে মুকুল কলকাতায় ফিরে তাঁর এই প্রত্যাবর্তন নিয়ে যাই বলুন না কেন, রাজ্য বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি স্পষ্ট। ৬, মুরলিধর সেন লেনের হেভিওয়েটদের মন্তব্য থেকেই জল্পনা আরও স্বচ্ছতা পাচ্ছে। দিলীপ-মুকুল বিতর্ককে নস্যাৎ করার চেষ্টা তো তাঁরা করেছেনই না, বরং দলের প্রায় প্রত্যেকেই অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন!

