Saturday, November 8, 2025

লকডাউনে কলকাতা পুলিশের মানবিক মুখ, সিভিক ভলান্টিয়ারের রক্তে প্রাণ ফিরে পেল ১১ বছরের সুপ্রিয়

Date:

Share post:

কলকাতা পুলিশের মানবিক মুখ দেখলেন এক বিপদগ্রস্ত অসহায় পিতা, আর তার সাক্ষী থাকল শহরবাসী । পুরো ঘটনা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। বিষয়টি খুলে বললেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ঘটনার সূত্রপাত
শুক্রবার, ২১ আগস্ট। ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে এগারোটা। রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনে জনশূন্য হাওড়া ব্রিজ। কলকাতার দিকে পুলিশের নাকা চেকিংয়ে থামানো হয়েছিল হাওড়ার দিক থেকে আসা একটি বাইক। আরোহীর গায়ে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। স্বাভাবিকভাবেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা বাইক আরোহীর কাছে জানতে চান রক্তের উৎসবে সম্পর্কে । তাদের একটাই প্রশ্ন ছিল যে কেন শরীরে, জামা-কাপড়ে রক্তের দাগ?
আসলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ১১ বছরের ছেলে সুপ্রিয়র জন্য এক বোতল রক্ত আনতে হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থেকে কলকাতার পদ্মপুকুরে একটি ব্লাড ব্যাঙ্কে আসছিলেন বাবা শুভেন্দু ভুক্ত। কুড়ি দিন অন্তর ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয় সুপ্রিয়র। শুক্রবার ছিল সুপ্রিয়র ব্লাড ট্রান্সফিউশনের দিন। করোনা পরিস্থিতির জন্য স্বেচ্ছা-রক্তদাতা না পেয়ে শুভেন্দুবাবু ঠিক করেছিলেন, ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে বিনিময়ে ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত নেবেন । একদিকে ছোট্ট ছেলের জন্য রক্ত জোগাড় করার টেনশন, অন্যদিকে লকডাউন। সবমিলিয়ে তাড়াহুড়োয় হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখেই দুর্ঘটনায় পড়েন। রাস্তায় বাইকের চাকা পিছলে কেটে-ছড়ে যায় শরীরের নানা জায়গায়। তাতেই পোশাকে রক্তের দাগ লাগে।
কিন্তু অসুস্থ সন্তানের জন্য রক্ত দরকার । তাই চোটের পরোয়া করেন নি । সেই অবস্থাতেই বাইক তুলে ফের হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন শুভেন্দুবাবু। নাকা চেকিংয়ে তাঁকে আটকান কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা। তার মুখে সব শুনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার মহম্মদ নিয়াজুদ্দিন।
আহত শুভেন্দুবাবুকে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, এই শরীর নিয়ে তাঁর রক্ত দেওয়ার দরকার নেই, তার বদলে তিনিই শুভেন্দুবাবুর সন্তানের জন্য রক্ত দেবেন।
নিয়াজুদ্দিনের এই প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গেই নাকা চেকিংয়ে উপস্থিত অফিসারেরা তাঁকে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেন। পদ্মপুকুরে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে ‘এ পজিটিভ’ রক্ত দেন মহম্মদ নিয়াজুদ্দিন। পরিবর্তে ছেলের জন্য ‘ও পজিটিভ’ রক্ত নিয়ে হাওড়ার হাসপাতালে ফেরেন শুভেন্দুবাবু। রক্ত পায় ১১ বছরের সুপ্রিয়। ততক্ষণে সিভিক্স ভলান্টিয়ার নিয়াজুদ্দিনের এই মানবিকতায় চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে সুপ্রিয় বাবার।
আর খোদ নিয়াজুদ্দিন বলছেন, এই মনুষ্যত্বটুকু না থাকলে বেঁচে থেকে লাভ কী? বরং তার প্রশ্ন মনুষ্যত্বের কি আর লকডাউন হয়?

spot_img

Related articles

ঝুলনের চোখে বাংলার সেরা ক্রিকেটার রিচা, মহিলা ক্রিকেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌরভ

বাংলার বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ক্রিকেট তারকা রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন...

সৌরভ ছাড়া অন্য কারও ICC সভাপতি থাকার কথা নয়: বললেন ‘ঠোঁটকাটা’ মমতা

ছিল বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শনিবার ইডেনে সেই অনুষ্ঠানে বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের...

বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন দল! চেয়ারম্যান হিসাবে নিজের নাম ঘোষণা হুমায়ুন কবীরের

বারবার দল বিরোধী কথাবার্তা। দলের পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা। এবার মুখোশ খুলল হুমায়ুন কবীরের। তিনি এবার নিজেই দল...

আপনি কি মোটা বা সুগারের রোগী? বাতিল হতে পারে আপনার মার্কিন ভিসা

বিদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম লাগু করল আমেরিকা। দেশের সম্পদ রক্ষা করার নামে এবার একাধিক শারীরিক...