Tuesday, August 26, 2025

মা- বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দুই তরুণ-তরুণী

Date:

Share post:

এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। একজন ৩০ বছরের তরুনীর মা, আর একজন ২৮ বছরের তরুণের বাবা। কোভিড পরিস্থিতিতে যখন চতুর্দিকে চলছে লকডাউন, তখন এই ঘটনা আশা দেখালো নতুন করে । নিশ্চয়ই ভাবছেন কী সেই ঘটনা? মানসিক হাসপাতাল থেকে মা- বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন দুই তরুণ তরুণী । এই ঘটনা শুধুমাত্র বেনজির নয়, দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। অসুস্থতার কারণে এতদিন দুজনেই ছিলেন মানসিক হাসপাতালে। তাই সন্তানের প্রতি কোনও দায়িত্বই তারা পালন করে উঠতে পারেননি। কিন্তু তবুও এভাবে যে পরিবারে ফিরতে পারবেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি তারা । শুধুমাত্র কাগজে-কলমে তারা পিতা-মাতা । এর বাইরে সন্তানের প্রতি কোনও দায়িত্ব তারা পালন করতে পারেন নি। মহামারীর সংক্রমণে যখন প্রিয়জনকেও মানুষ দূরে ঠেলে দিচ্ছে, তখন এভাবে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দুই তরুণ তরুণী। চলতি সপ্তাহে কলকাতার পাভলভ হাসপাতলে এমনই দুটি ভিন্ন ঘটনার সাক্ষী রইলেন চিকিৎসক থেকে নার্স প্রত্যেকেই। বিবাহসূত্রে এখন টালিগঞ্জের বাসিন্দা অঙ্কিতা। মায়ের কোনও স্মৃতি তার কাছে নেই ।কারণ , জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তিনি কখনও মাকে কাছে পাননি। মানসিকভাবে অসুস্থ মা একদিন দেওঘরের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান ।ঘুরতে ঘুরতে চলে আসেন কলকাতায় পুলিশের হেফাজতে । পুলিশ তাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার পাভলভ হাসপাতালে ভর্তি করায় । সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসকের পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রায় দেড় বছর পর সুষমা জানতে পারেন তার বাড়ির কথা। আদতে দেওঘরের বাসিন্দা সুষমাকে ফেরাতে উদ্যোগ নেয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। যোগাযোগ করে তার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সুষমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও ইচ্ছাই তাদের নেই । ততদিনে অঙ্কিতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মায়ের কথা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মারফত জানতে পেরে মাকে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগী হন অঙ্কিতা ও তার স্বামী সতীশ । অঙ্কিতা জানিয়েছেন, তার স্বামীর উৎসাহেই তিনি মাকে ফেরাতে পেরেছেন নিজের বাড়িতে। তার দু কামরার ফ্ল্যাটের একটি ঘর এখন মায়ের জন্য বরাদ্দ। এভাবেই সন্তানস্নেহে অন্ধকার জগত থেকে আলোর দিশা দেখেছেন সুষমা।
ঠিক যেমন পুত্র, পুত্রবধূ ও তিন বছরের নাতিকে নিয়ে নতুন জীবন এখনও অবিশ্বাস্য বলে মনে হয় গৌতম মুখোপাধ্যায়ের।
ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের একটি স্কুলের চাকুরে রাহুল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী পাভলভ থেকে গৌতমবাবুকে নিয়ে গিয়েছেন নিজেদের সংসারে। অসুস্থ হওয়ার পরে কয়েক জন আত্মীয় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে যান। সুস্থ হওয়ার পরেও কেউ ফেরত না নেওয়ায় হাসপাতালেই থাকতে বাধ্য হচ্ছিলেন তিনি। প্রথম বিয়ের সূত্রে সম্তান হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলেও  সেই পুত্রকে অবশ্য বাবার খবর দেন মা। পুত্র রাহুল বলেন, ‘‘পরিবারটা ভেঙে গিয়েছিল। আমি স্বপ্ন দেখছি নতুন করে বাঁচার । বাবাকে নিয়ে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি ভবিষ্যতে মাকেও নিয়ে আসতে। তা হলে সবাই একসঙ্গে থাকতে পারব।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী রত্নাবলী রায়ের বক্তব্য , ‘‘এই অস্থির সময়ে পারিবারিক মূল্যবোধই হারিয়ে যাচ্ছে । একে অন্যের সঙ্গে মানসিক ভাবে যুক্ত থাকার প্রবণতা যদি অতিমারির মধ্যেও কিছুটা আশা জাগায়, তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে। আর পরিবার ফিরে পেয়ে যারপরনাই খুশি দুই প্রবীণ।

spot_img

Related articles

বনতারায় কতটা সুরক্ষিত পশুরা: জানতে SIT গঠন সুপ্রিম কোর্টের

বিপদগ্রস্ত পশুদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নজর কাড়ার চেষ্টা চালিয়েছিল গুজরাটের বনতারা (Vantara)। এবার প্রশ্ন উঠেছে সেখানে দেশের ও...

কীভাবে দুর্নীতিবাজদের সমর্থন করতে হয় মোদিকে দেখে শিখুন! তীব্র কটাক্ষ তৃণমূলের

দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে বসিয়ে বাংলায় এসে বড় বড় কথা বলে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সর্বক্ষণ...

ট্রাম্পের শুল্কবাণে অস্থিরতা শেয়ার বাজারে! পড়ছে সেনসেক্স-নিফটি

আমেরিকার(USA) ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঠিক একদিন আগেই ধরাশায়ী শেয়ার বাজার(Share Market)। দেশের শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধস। দুপুর...

‘জামাই আদর’ করে নিয়ে গিয়ে ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের হেনস্থা কেন? গর্জে উঠলেন মমতা

ভিনরাজ্যে ‘জামাই আদর’ করে নিয়ে গিয়ে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার, বর্ধমান শহরের পরিষেবা প্রদান মঞ্চ...