Friday, August 22, 2025

সামান্য মাসোহারা বন্ধ, সময় থমকেছে চন্দননগরের ক্লক টাওয়ারে

Date:

Share post:

ফরাস ডাঙা চন্দননগর। আলোর শহর। জগদ্ধাত্রী পুজোর শহর। আর এ শহর ইতিহাসের।

সেই শহরের ঐতিহ্যবাহী চন্দননগর স্ট্র্যান্ড ঘাটের ক্লক টাওয়ারে এখন সময় গিয়েছে থমকে। ঘোরে না আর ঘড়ির কাঁটা। চিরপরিচিত অভ্যেসবশত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কেউ হাতঘড়ির সময়টা মেলাতে গিয়ে হতাশ হন। আসলে করোনার জের পড়েছে ঘড়িতেও।

ঐতিহ্যবাহী এই ঘড়ি বছরের পর বছর যিনি পরম যত্নে দম দিয়ে আসছিলেন, সেই সুশান্ত দত্তের সামান্য মাসোহারাও বন্ধ হয়েছে কোভিড মহামারিতে। মাসে মাত্র ৫৫০ টাকার বিনিময়ে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওই টাওয়ারের ওপর উঠে ঘড়িতে প্রতিদিন দম দিয়ে যেতেন তিনি। সন্তান স্নেহেই ঘড়ির কাঁটা ঘোরাতেন সেই মিস্ত্রি। খারাপ হলে ডাক পড়ত তাঁর।কারণ, ফরাসিদের এই ঘড়ির যন্ত্র বাজারে মেলে না। তা সারানোর কারিকুরিও সকলের জানা নেই। আর হেরিটেজ কমিশনের ৫৫০ টাকা মাসোহারায় সংসারে একটু হলেও আয় হত। ঘড়িটিকে নিয়েই ছিল মিস্ত্রি সুশান্ত দত্তর বেঁচে থাকা। এখন স্ট্র্যান্ড এসে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হতাশভাবে ফিরে যান তিনি। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। একবুক দুঃখ নিয়ে ঘাস কাটতে যান মিউজিয়ামে।সংসার চালাতে হবে তো।

আরও খবর : স্কুলের পাঠ্যবই ও কয়েনে ভারতের ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দেখাচ্ছে নেপাল!

লকডাউন শুরু হতেই ৫৫০ টাকার সামান্য অনুদান বন্ধ হয়েছে। হেরিটেজ কমিশন ব্যবস্থা করতে পারছে না মাসোহারার। তাদের পক্ষে আর এই টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলা হয়েছে। তবে ঘড়ি সচল রাখতে কর্পোরেশন, পুলিশ, প্রশাসন সকলের কাছেই আবেদন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ঘড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও দম দেওয়ার জন্য মাসিক ভাতার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার। কিন্তু কোনও উচ্চবাচ্য করেনি সরকার থেকে প্রশাসন। উহ্য থেকে গিয়েছে মাসিক ভাতার প্রস্তাবও। আর সেই কারণেই ঘড়ি টিকটিক আওয়াজ আজ স্তব্ধ।

চন্দননগর মানেই ফরাসিদের স্থাপত্য। গঙ্গার তীরবর্তী স্ট্র্যান্ডঘাট। যার টানে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। আজও গুগলে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড লিখে সার্চ করলে, ৫টির মধ্যে ২টি ছবি আসে ক্লক টাওয়ারের। ফরাসিদের নিজস্ব মেকানিজমে তৈরি ঘড়ি বসানো হয়েছিল ওই টাওয়ারে।সাক্ষী ছিল বহু ইতিহাসের।তাই চন্দননগরবাসীর কাছে এই ঘড়িটি শুধু সময় মাপার যন্ত্র নয়, গর্বের প্রতীক। আর সেটি বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ ফরাস ডাঙার লোকেরা। বাসিন্দাদের দাবি অবিলম্বে সচল হোক ঘড়ি।

হেরিটেজ কমিশনের সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তীও চান ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির কাঁটা ফের ঘুরুক। আর সুশান্ত দত্ত যিনি বহুবার ঘড়ি সাড়িয়েছেন তাঁর মাসোহারা বন্ধ হওয়ায় যত না খারাপ লাগা, তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হয় বন্ধ ঘড়ি দেখলে।

সময় সময়ের হিসেবে বয়ে যাবে। চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির কাঁটা ফের কি ঘুরবে!বলবে সময়ই।

আরও পড়ুন- ‘হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে চাই’, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইচ্ছেপূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

spot_img

Related articles

সোনা জয়ী অভিনবকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ জুনিয়র (Asian Shooting Championship) এয়ার রাইফেল বিভাগে বাংলার অভিনব সাউয়ের (Abhinaba Shaw)। তাঁর এই সাফল্যই...

পুজোর আগে রাজ্য পুলিশের শীর্ষস্তরে রদবদল! পরিবর্তন হল ৬ জেলার এসপি-ডিসি

পুজোর মুখে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ পদে বড়সড় রদবদল করল নবান্ন। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, একাধিক জেলায় পুলিশ...

‘নোরা ফাতেহি’ হতে হবে! স্ত্রীকে জোর করে শরীরচর্চা করিয়ে গর্ভপাত শিক্ষকের

যোগীরাজ্যে স্কুলশিক্ষকের ফ্যান্টাসির চূড়ান্ত নমুনা! স্ত্রীকে হতে হবে রোগা ছিপছিপে চেহারার। আর সেই চেহারা বানাতে গিয়েই স্বামীর নির্মম...

গান-কবিতায় সংসদে সরব তৃণমূল! বয়কট রাজ্যসভার চা-চক্র

বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদ উত্তাল হল বাংলা গান, কবিতা, বিক্ষোভ, প্রতিবাদে। সংসদের অন্দরে যেমন কালাকানুন, এসআইআর, ভাষাসন্ত্রাসের...