‘দলবদলু’ বিধায়ক: দিলীপ ঘোষের মূল্যায়ণ ঘিরে জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে

'দলবদলু' বিধায়ক: দিলীপ ঘোষের মূল্যায়ণ ঘিরে জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে

চাণক্য চৌধুরি : অনেকেই বলছেন যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে৷

রাজ্য-বিজেপি’র সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজের ফেসবুক ওয়ালে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি ‘খোলা চিঠি’ লিখেছেন৷ এই ‘চিঠি’ লেখা হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি, পশ্চিমবঙ্গের ‘আমার প্রিয় কার্যকর্তা বন্ধু’-দের উদ্দেশ্যে ৷

খোলা চিঠিতে দিলীপবাবু অনেক কথা লিখেছেন৷ দীর্ঘদিনের চেষ্টা সত্ত্বেও রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি তেমন দাগ না কাটতে পারার কথা যেমন লিখেছেন, তেমনই দিলীপবাবু লিখেছেন, তিনি বঙ্গ-বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর কীভাবে এ রাজ্যে একটু একটু করে দল বড় হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে, সে সব কথা৷ সন্দেহ নেই, চমৎকার লিখেছেন৷

'দলবদলু' বিধায়ক:  দিলীপ ঘোষের মূল্যায়ণ ঘিরে জোর চর্চা রাজনৈতিক মহলে

রাজ্য রাজনীতিতে কীভাবে বিজেপি ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে আজ বাংলার ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেমেছে, সে কথা বলতে গিয়ে এক জায়গায় এক জায়গায় ‘মারাত্মক’ একটি বাক্য লেখা হয়েছে৷ ওইখানে তিনি লিখেছেন, “আজ আমরা তিন থেকে শুরু করে ১৬ জন প্রথিতযশা বিধায়ক বিজেপির ঝুলিতে পুরতে পেরেছি”৷ এই লাইনটিতে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবেই বোঝা গিয়েছে৷ বলতে চেয়েছেন, দলের বেড়ে ওঠার কথা৷

ওই লাইনের ভাষায় প্রাথমিকভাবে খটকা লাগলেও, বস্তুত ওই দলবদলু ‘প্রথিতযশা বিধায়কদের’ সম্পর্কে ‘ঝুলিতে পুরতে পেরেছি’ শব্দচয়ন প্রশংসিতই হয়েছে৷

বাংলা ভাষায় ‘ঝুলিতে পোরা’ শব্দবন্ধটির ব্যবহার চালু থাকলেও কোনও জনপ্রতিনিধিকে অন্য দল থেকে ভাঙ্গিয়ে নিজের দলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়না৷ তৃতীয় পক্ষ সমালোচনার সুরে একথা বলতেই পারেন৷ এটা অনেকটা ঝুলিতে কাপড় পুরে রাখা, জেলে পোরা, ভিতরে আবদ্ধ করা, সিন্ধুকে পুরে রাখা-র মতো শোনাচ্ছে৷ আবার মনুষ্যেতরদের সম্পর্কেও ব্যবহার করা যায়৷ যেমন, বিড়ালটিকে ঝুলিতে পুরে পাচার করা হলো ইত্যাদি ৷

এই লাইনটি কি সচেতনভাবেই লিখেছেন দিলীপবাবু ? অন্য দলের বিধায়কদের টোপ দিয়ে নিজেদের দলে সামিল করানোকে তাই ‘ঝুলিতে পুরতে পেরেছি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন৷ সম্ভবত, একটুও ভুল করেননি দিলীপবাবু৷ নীতি- আদর্শের তোয়াক্কা না করে যারা ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে রাজনৈতিক শিবির দুম করে বদল করেন, সেই ‘মালপত্র’ নিজের দলের ভিতরে আবদ্ধ করার কথাই বলেছেন বিজেপি সভাপতি৷ এই দলবদলু- বিধায়কদের নিয়ে দিলীপবাবুদের হয়তো তেমন ভরসা নেই৷ এরা ফের বিজেপির দেওয়া টোপের তুলনায় থেকে বড় টোপ গিলে ফের দল বদলাতে পারেন৷ তাই বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি এই বিধায়কদের দলে আটকে রাখা প্রসঙ্গেই ওই ‘ঝুলিতে পুরে রাখার’ কথা স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন৷ দিলীপবাবুর আজকের আশঙ্কা হয়তো ভবিষ্যৎ-এ মিলেও যেতে পারে৷ সামান্য সুযোগ পেলে বা বিজেপি তাদের ‘মর্যাদা’ না দিলে ফের উল্টোরথের সওয়ার হতে পারেন অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ‘১৬ জন প্রথিতযশা বিধায়ক’৷

নেতিবাচক নজরে নয়, দলবদলুরা ফের দল বদল করতে পারেন, এই আশঙ্কার নিরিখেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলীপ ঘোষের ওই অভিমতের ব্যাখ্যা করেছে রাজনৈতিক মহল৷

একইসঙ্গে রাজনৈতিক মহল জানতে আগ্রহী, ‘মাল’ হিসাবে অন্য দলের যেসব বিধায়ককে বিজেপি ‘ঝুলিতে পুরেছে’, দিলীপবাবুর এই ‘মূল্যায়ণ’-কে তাঁরা কে কোন নজরে দেখছেন ? ঝুলি থেকে মুখ বার করে ওই ‘প্রথিতযশা’ বিধায়করা কিছুই কী বলবেন না ?

আরও পড়ুন-আদালতের তদারকিতে হাথরাস কাণ্ডের তদন্ত, জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

Previous articleকলেজের সামনেই গুলিতে মৃত্যু ছাত্রীর, উত্তপ্ত হরিয়ানা
Next articleবিদ্রোহে ইতি, বিজয়ার রাতেই দিলীপের বাড়ি গিয়ে আত্মসমর্পণ সৌমিত্রর