পাহাড়ে রাজনীতির ময়দানেও ঘন কুয়াশা, গোর্খাল্যান্ডের নামে নিত্যনতুন দল

পাহাড়ে রাজনীতির ময়দানেও ঘন কুয়াশা, গোর্খাল্যান্ডের নামে নিত্যনতুন দল
কিশোর সাহা

বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে দার্জিলিঙে। রাতে তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। দিনেও হিমেল হাওয়া বইছে। কোভিড পরিস্থিতির জেরে পর্যটকদের দেখা তেমন নেই। কিন্তু কনকনে শীতে পাহাড়ে নিত্যনতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা হচ্ছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবি সামনে রেখে স্বঘোষিত নেতার দেখাও মিলছে। তাতেই চা-পানশালা, রাস্তার মোড়, সব জায়গার আড্ডাই জমজমাট হয়ে উঠছে।

কেন এমন হচ্ছে?
আসলে বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংদের অনুগামীদের একাংশের আকচাআকচি আগের তুলনায় কম হলেও এখনও চলছেই। গোর্খা লিগ নিভু নিভু। প্রায় ঘরে ঢুকে যাওয়া জিএনএলএফের মন ঘিসিং কবে রাজনীতির ময়দানে ফের দাপিয়ে বেড়াবেন তাও বোঝা মুশকিল। এই অবস্থায় “গোর্খাল্যান্ড এনে দেব অথবা গোর্খাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করব”—এমন আপ্তবাক্য সামনে রেখে নিত্যনতুন দল দার্জিলিং পাহাড়ে মাথাচাড়া দিচ্ছে।

এই নিয়ে পাহাড়বাসীদের মধ্যেই ফিসফাস শুরু হয়েছে। কারা নতুন দল করছেন, কেন তা করছেন, কতটা পাহাড়বাসীর ভালোর জন্য, আর কতটা নিজের আখের গোছানোর জন্য তা নিয়েই চলছে নানা আলোচনা। কারণ, গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে পাহাড়ে নানা সময়ে একাধিক দল তৈরি হয়েছে। এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নতুন দল গড়ে গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনের নামে চাঁদা তোলা, শিলিগুড়ি, কলকাতায় সম্পত্তি কেনার ঘটনাও রয়েছে। পাহাড়ের এক নেতা তো দেরাদুন, শিলংয়েও সম্পত্তি কিনেছেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। পাহাড়ের এক ডাকসাইটে নেতার অস্ট্রেলিয়া যোগাযোগও রয়েছে বলে বাতাসে অভিযোগ রয়েছে। স্বভাবতই নিত্য নতুন দলের ঘোষণায় পাহাড়বাসীরা অনেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

ঘটনাচক্রে, বিমল-বিনয় শিবিরের দ্বন্দ্ব শুরুর পরে পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ড রাজ্য নির্মাণ কমিটি গড়ে আসরে নেমেছেন কয়েকজন। শুক্রবার সোনাদায় কয়েকজন মিলে রাষ্ট্রীয় গোর্খা আদিবাসী পরিষদ নামে আরেকটি সংগঠন করে পাহাড়ের গোর্খা জনজাতি ও চা শ্রমিকদের মূল দাবি আদায় করার ব্যাপারে আন্দোলনে নামবে জানিয়েছে। সূত্রের খবর, আরও দুটি নতুন দল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কয়েকজন। তাঁদের একদল থাকেন দার্জিলিঙে। আরেকপক্ষ কালিম্পঙে। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই পাহাড়ে আরও দুটি নতুন রাজনৈতিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিঙের মুখপাত্র বিন্নি শর্মা জানান, তাঁরাও সব খেয়াল রাখছেন। তিনি বলেন, “যাঁরা দল তৈরি করে নানা ঘোষণা করছেন, তাঁরা কতটা পাহাড়ের মানুষের জন্য কাজ করতে চান আর কতটা নিজের জন্য কাজ করতে চান সেটা দেখার বিষয়।“

কয়েক বছর আগে পাহাড়ে নতুন দল গড়েছিলেন কালিম্পঙের প্রাক্তন মোর্চা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী। তিনিও মনে করেন, পাহাড়ের মানুষ যাঁকে নেতা বলবেন, তিনিই হবেন, জোর করে ঘোষণা দিয়ে কেউ নেতা বনতে পারবে না।

জিএনএলএফের কার্শিয়াঙের একাধিক নেতা জানান, তাঁদের নেতা সুবাস ঘিসিংয়ের পরে পাহাড়ে যে কটি দল গড়া হয়েছে তাদের কাজকর্ম মানুষ দেখেছেন. তাই নতুন দলের উপরে আর আশ্থা রাখতে পারবেন বলে তাঁরা মনে করেন না। মোর্চার বিনয় গোষ্ঠীর এক নেতা জানান, পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে বলেই যে কেউ দল গড়ে আন্দোলনের ঘোষণা করতে পারছেন। তবে দল গড়ে শুধু চাঁদা তোলার ছক কষলে তাঁরা তা হতে দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মোর্চার বিমল গুরুং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা জানান, কেউ রাজনৈতিক দল গড়ে তোলাবাজি কায়েম করতে চাইলে পুলিশ-প্রশাসনই তথা দেখে ব্যবস্থা নেবে।
প্রবল ঠাণ্ডা, নেতাদের ঠেলাঠেলি, নিত্যনতুন দল গঠন, দার্জিলিঙের রাজনীতির ময়দানেও যেন কুয়াশা জাঁকিয়ে বসছে।

আরও পড়ুন-পিতৃহীন দীপালির বিয়ের খরচ দিলেন বন অফিসার, করলেন কন্যাদানও