Tuesday, May 6, 2025

ব্রিগেড এড়ালেন কেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

এমন ‘বিপাকে’ তিনি আগে পড়েননি৷

বাংলার বামেরা আপাতত কংগ্রেসের ‘বন্ধু’৷ এই বন্ধুত্বে সিলমোহরও লাগিয়েছে দিল্লি৷ শুধু বন্ধু নয়, ‘পরম-মিত্র’৷ হাত আর হাতুড়ি একজোট হয়ে এবং যৌথভাবে আব্বাস সিদ্দিকির ‘দোয়া’ নিয়ে এ রাজ্যে হারাতে চায় একুশের ভোটের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপিকে৷

কিন্তু কেরলের ছবি ঠিক উল্টো৷ কেরলের বামেরা ‘ভয়ঙ্কর’ শত্রু কংগ্রেসের৷ ওখানে এই বন্ধুত্বের লেশমাত্র নেই৷ কেরলে বামেদের হারিয়েই ক্ষমতা দখল করতে চাইছে কংগ্রেস ৷

২০১৬-তেও অবশ্য কং-বাম জোট হয়েছিলো বাংলায়৷ কিন্তু তখন এমন জটেও তিনি ফাঁসেননি৷ তখন ছিলেন ‘মুক্তপুরুষ’৷ কেরলের সঙ্গে এভাবে ‘সহ-বাস’ করতে হয়নি৷ তাই ২০১৬-র ২৭ এপ্রিল ২০১৬ পার্ক সার্কাস ময়দানে কংগ্রেসের তৎকালীন সহ- সভাপতিকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিলো রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে৷ ২০১৬ সালে কৌশলগত কারণে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি পার্ক সার্কাসের সভা এড়িয়ে গিয়েছিলেন৷ আর এবার, ২০২১-এ ‘অন্য ধরনের’ কৌশলগত কারণে ২৮ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশ এড়িয়ে গেলেন তিনি৷ তিনি মানে রাহুল গান্ধী৷ এআইসিসি’র প্রাক্তণ সভাপতি৷ সব অঙ্ক ঠিকঠাক থাকলে তিনিই ফের ওই পদে ফিরছেন৷ এবার বড়ই বিপাকে এই কংগ্রেস সাংসদ৷

না, কোনও আদর্শগত কারনে নয়, স্রেফ নিজের লোকসভা কেন্দ্রে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতেই এবার আর ব্রিগেডমুখী হলেন না রাহুল৷ তিনি এখন কেরল থেকে নির্বাচিত সাংসদ৷ এজন্য অবশ্য দায়ী সেই বিজেপি- ই৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে প্রায় ৫৫ হাজার ভোটে হেরে যান রাহুল গান্ধী ৷ সৌভাগ্যবশত দ্বিতীয় একটি কেন্দ্রেও প্রাথী ছিলেন তিনি৷ উত্তরপ্রদেশের আমেথির পাশাপাশি কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্র থেকেও লোকসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন রাহুল গান্ধী৷ ওই কেন্দ্রে জয়ী হয়েই তিনি এখন সাংসদ৷
ওই কেরলে বিধানসভা নির্বাচন হবে বাংলার সঙ্গেই৷ কংগ্রেস হাই কম্যাণ্ডের এবার ধারনা হয়েছে, কেরলে এবার ক্ষমতায় আসবে কংগ্রেস৷ কেরল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, ওই রাজ্যে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কলকাতায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলে, কেরলে তাঁর এতটুকু বিশ্বাসযোগ্যতাও আর থাকবেনা৷ এটা হাড়ে হাড়ে বুঝেই রাহুল গান্ধী সম্ভবত বাংলায় এসে কং-বাম যৌথমঞ্চে উঠতে নারাজ৷ গোটাটাই ব্যক্তিগত,এর মধ্যে কোনও ব্যস্ততা বা নীতি-আদর্শ নেই৷

ব্রিগেডে রাহুল গান্ধী না হয় ব্যক্তিগত কারনে এলেন না,কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেডে কংগ্রেসের ‘মুখ’ কে? বাংলার রাজনীতিতে একটা ব্রিগেড সমাবেশের মূল্য এখনও আছে৷ ইচ্ছা থাকলেও এই মুহুর্তে এককভাবে কংগ্রেসের ব্রিগেড ডাকা কার্যত অসম্ভব৷ বামেদের অবস্থাও একই রকম৷ তাই দু’তরফ একে অপরের পিঠ চাপড়ে একসঙ্গে নেমেছে ব্রিগেড সফল করতে৷ কিন্তু প্রশ্ন একটাই, ব্রিগেডে কংগ্রেসের ‘মুখ’-কে ? সোনিয়াজি অসুস্থ৷ তাঁর পক্ষে আসা সম্ভব নয়৷ সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নেই, তিনি উত্তর প্রদেশে বিরাট ব্যস্ত, রাহুল গান্ধী তো নেই-ই৷ তাহলে রাজ্যের কংগ্রেস কর্মী- সমর্থকদের বাড়তি অক্সিজেন যোগাবেন কে ? পাল্টা প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন, প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারাই তো যথেষ্ট ? হাইকম্যাণ্ডের শীর্ষনেতাদের আসা কি বাধ্যতামূলক?

এটা নেহাতই অবান্তর প্রশ্ন৷ বিধানসভা ভোটের মুখে ‘মিলিজুলি’ ব্রিগেড সমাবেশ করছে কংগ্রেস, আর সেখানে গোটা গান্ধী-পরিবার গরহাজির থাকবেন কেন ? প্রদেশস্তরের নেতাদের ভাষণ তো বাংলার মানুষ রোজই শোনেন, শুনবেনও৷ ব্রিগেড সমাবেশেও তাঁদের কথাই শুনতে হবে ? জানা নেই, তবে হয়তো দিল্লি থেকে জনাকয়েক ‘জাতীয়’ নেতাকে পাঠানো হবে ভাষণ দিতে৷ আপাতত শোনা যাচ্ছে ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, রাজ্যসভায় যার বিদায়বেলায় নরেন্দ্র মোদি চোখের জল ফেলেছেন, সেই গোলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম৷

কিন্তু তাঁরা কতখানি প্রাসঙ্গিক এ রাজ্যে ? দিল্লির ওই সব তথাকথিত ‘ওজনদার’ নেতাদের থেকে বঙ্গ- রাজনীতিতে অনেক অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এবং বিশ্বাসযোগ্য জেলাস্তরের ‘ডেডিকেটেড’
কংগ্রেস নেতারা৷ যারা শত সুযোগ এবং প্রলোভন উপেক্ষা করে আজও বাংলায় কংগ্রেস পতাকা বহন করে চলেছেন৷ তাই বাংলায় ন্যূনতম প্রভাব নাথাকা দিল্লির ওই সব কাগুজে নেতারা এসে কংগ্রেস বা জোটের ক’টা ভোট বাড়াবেন ?

ব্রিগেডে কে বা কারা হবেন কংগ্রেসের মুখ, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে এখনও ব্যর্থ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাহুল বা প্রিয়াঙ্কা, কেউই আসছেন না৷ দলের তরফে বক্তা ঠিক করতে বারবার ধাক্কা খাচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস৷ তবে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে, প্রবীন দু-একজন নেতা পাঠিয়ে দায় এড়াবে হাইকম্যাণ্ড৷ কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন, কেন আসবেন না, প্রিয়াঙ্কা বা রাহুল গান্ধী ? তার জবাব নেই বিধান ভবনের কাছে৷ যান্ত্রিকভাবে প্রদেশ নেতারা বলেই যাচ্ছেন, ‘ওই দু’জনই বড্ড ব্যস্ত ৷ পরে আসবেন’৷ এতই ব্যস্ত যে প্লেনে চেপে ৫ ঘন্টার জন্য কলকাতায় এলে উত্তর প্রদেশ এবং কেরল কংগ্রেসের ‘হাতছাড়া’ হয়ে যাবে৷

এসব কোনও যুক্তিই নয়৷ আসলে, রাহুল কেরলের সাংসদ৷ কেরালায় বামেদের উপড়ে ফেলার ডাক দিচ্ছেন যে রাহুল গান্ধী, সেই তিনিই বাংলায় এসে বামের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানালে, কেরলের কংগ্রেসিরা তা কখনই মেনে নেবেন না৷ একঘরে হবেন রাহুল৷ কেরলে কংগ্রেসকে জেতানোর দায় রাহুলেরও৷ তাছাড়া ওই রাজ্যে কংগ্রেস বাংলার তুলনায় ভালো অবস্থায় ৷ এআইসিসি জানে, বাংলায় কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা বড়ই ক্ষীণ৷ বলা ভালো তৃতীয় হওয়ার সুযোগও সীমিত৷ তাহলে এখানে এসে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা তাঁদের অমূল্য সময় এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করবেন কেন ? প্রদেশ নেতারা এখনও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বটে, কিন্তু এবারের কংগ্রেসের ব্রিগেড ‘গান্ধী’-হীন হওয়ার আশঙ্কাই বেশি৷

তবে এখনও সময় আছে, প্রদেশ কংগ্রেস একবার ট্রাই করতে পারেন বাংলা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ তথা কংগ্রেসের ‘সর্বভারতীয়’ নেতা ও মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি’কে৷ আগামী ২০২৪-এর ২ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলার সাংসদ ৷

বাংলার রাজনীতি, প্রশাসন, জোট ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁর ধারনা অসীম৷ কোন লক্ষ্যে কং-বাম জোট হয়েছে, ব্রিগেড- মঞ্চে দাঁড়িয়ে তা বিশদে বুঝিয়ে বলতে পারতেন কংগ্রেস সাংসদ সিংভি ৷

বাংলার গ্রাম-শহরে এখনও যে সব নেতা-কর্মী নিঃস্বার্থভাবে, প্রলোভন উপেক্ষা করে দলের জন্য কান্না- ঘাম-রক্ত দিয়েই চলেছেন, যারা আজও কোনও প্রত্যাশা না করে নীরবে কংগ্রেস প্রতীকে ভোট দিয়ে চলেছেন, তাদের সঙ্গে এআইসিসি এবং গান্ধী পরিবার স্পষ্টতই অবিচার করছে৷ অবিচার শব্দের বদলে ‘বেইমানি’ শব্দটি ব্যবহার করলেও ভুল কিছু হবে না৷

আরও পড়ুন- চালু হচ্ছে এনজেপি-ঢাকা ‘ননস্টপ’ রেল পরিষেবা, কবে থেকে জানুন

Advt

spot_img

Related articles

টানা ১২ দিন ধরে সীমান্তে গোলাবর্ষণ পাকিস্তানের, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার বাড়ছে উত্তেজনা

সীমান্ত সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে একটানা ১২ দিন ধরে ভারতীয় সেনা (Indian Army Camp) ছাউনিকে টার্গেট করে...

দিঘায় ‘জগন্নাথ ধাম’ লেখা সরানোর অভিযোগ মিথ্যে, গুজবের বিরুদ্ধে মামলা পুলিশের

পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় 'জগন্নাথ ধাম' (Jagannath Dham) লেখা সরানো নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটালো জেলা পুলিশ। ছবিসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়...

আজ মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ

ওয়াকফ সংশোধনী আইন (WAQF ammendment act) নিয়ে অশান্তির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আজ দেখা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা...

ICSE-তে তৃতীয় সম্পূর্ণা সংবর্ধিত মোহনবাগানে

আইসিএসই(ICSE)-তে তৃতীয়। সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত্। কিন্তু সেই সম্পূর্ণাকে(Sampurna Sinha) যদি পড়াশোনা এবং মোহনবাগানের(Mohunbagan) মধ্যে কোনও একটা বেছে নিতে...