Sunday, August 24, 2025

যেদিন তিনি ২৬ বছর পূর্ণ করেন, সেদিনই প্রথম আত্মীয়দের মধ্যে পালিত হয় রবীন্দ্র- জন্মদিন

Date:

Share post:

রবীন্দ্রনাথের জন্মোৎসব প্রথম পালিত হয় আত্মীয়দের মধ্যে ১৮৮৭ সালে তথা ১২৯৪ সনের পঁচিশে বৈশাখে, যেদিন তিনি ২৬ বছর পূর্ণ করে সাতাশে পড়লেন।

অভিনব সে-ঘটনাটি সম্পর্কে কবির ভাগনি, স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা প্রখ্যাত দেশনেত্রী সরলা দেবী তাঁর জীবনস্মৃতিতে লিখছেন :

“রবিমামার প্রথম জন্মদিন উৎসব আমি করাই। তখন মেজমামা (সত্যেন্দ্রনাথ) ও নতুন মামার (জ্যোতিরিন্দ্রনাথ) সঙ্গে তিনি ৪৯নং পার্ক স্ট্রীটে থাকেন। অতি ভোরে উল্টাডিঙ্গির কাশিয়াবাগান বাড়ি থেকে পার্ক স্ট্রীটে নিঃশব্দে তাঁর ঘরে তাঁর বিছানার কাছে গিয়ে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালা ও বাজার থেকে আনান বেলফুলের মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধুতি-চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাঁকে জাগিয়ে দিলুম। তখন আর সবাই জেগে উঠলেন- পাশেই নতুন মামার ঘর। রবির জন্মদিন বলে একটি সাড়া পড়ে গেল। সেই বছর থেকে পরিজনদের মধ্যে তাঁর জন্মদিনের উৎসব আরম্ভ হল (জীবনের ঝরাপাতা)।”

জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ অনাত্মীয়র কাছ থেকে প্রথম সংবর্ধনা-অভিনন্দন পেয়েছিলেন এর ২৩ বছর পরে ১৯১০ সালে অর্থাৎ ১৩১৭ সনের পঁচিশে বৈশাখ, যেবার কবি ঊনপঞ্চাশ পার হয়ে পঞ্চাশে পড়লেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠান সেবারেই প্রথম আয়োজিত হয়েছিল শান্তিনিকেতন আশ্রমের নিরালা শান্ত সমাহিত পরিবেশে। এ দিনকার ভাষণে তাঁর জন্মদিন সম্বন্ধে কবি বলেছেন- “একদিন আমি আমার পিতামাতার ঘরে জন্ম নিয়েছিলুম- সেখানকার সুখদুঃখ ও স্নেহপ্রেমের পরিবেষ্টন থেকে আজ জীবনের নূতন ক্ষেত্রে জন্মলাভ করেছি।…আজ আমার জন্মদিনে তোমরা যে উৎসব করছ তার মধ্যে যদি এই কথাটি থাকে, তোমরা যদি আমাকে আপন করে পেয়ে থাক, আজ প্রভাতে সেই পাওয়ার আনন্দকেই যদি তোমাদের প্রকাশ করবার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তা হলেই উৎসব সার্থক।” (জন্মোৎসব ভাষণ : শান্তিনিকেতন- গ্রন্থ)।

কবির মর্ত্যজীবনের শেষ জন্মদিন, অশীতিতম জন্মদিন উদযাপিত হয় শান্তিনিকেতনে, ১৩৪৮ সনের নববর্ষের দিনে, ১৪ এপ্রিল ১৯৪১ সালে। ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত বর্ণনা থেকে জানা যায় সেদিন ভোরে আশ্রমিকগণ বৈতালিক গান গেয়ে শান্তিনিকেতন পরিক্রমা করেন। সকালে ক্ষিতিমোহন সেনের পরিচালনায় মন্দিরে নববর্ষের উপাসনা অনুষ্ঠিত হয়। গীত হয় এই উৎসব উপলক্ষে বিশেষভাবে রচিত দুখানি গান- হে পুরুষোত্তম এবং ঐ মহামানব আসে। সন্ধ্যায় উত্তরায়ণে নির্মিত একটি মণ্ডপের নিচে আয়োজিত হয় জন্মোৎসব। ক্ষিতিমোহন সেনের কণ্ঠে পঠিত হয় মানব জাতির প্রতি রবীন্দ্রনাথের শেষ বাণী ও মর্মস্পর্শী ভাষণ সভ্যতার সংকট। জীবনের শেষ পঁচিশে বৈশাখে উপনীত হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সারা দেশে জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে মহাসমারোহে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রবীন্দ্র-সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকার রবীন্দ্রসংখ্যায় রবীন্দ্র-জীবনের নানা দিক নিয়ে লিখেছেন প্রমথ চৌধুরী, গোপাল হালদার, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, নীহাররঞ্জন রায়, মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত, উমা দত্ত প্রমুখ। পূরবী কাব্যের পঁচিশে বৈশাখ কবিতাটিকে রবীন্দ্রনাথ হে নূতন, দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ গানে রূপান্তরিত করেছিলেন তেইশে বৈশাখ। গানটি আনন্দবাজারে মুদ্রিত হয়েছে শান্তিদেব ঘোষ-কৃত স্বরলিপিসহ। শান্তিনিকেতনে চলছে গ্রীষ্মের ছুটি। তবু আশ্রমবাসীগণ একান্ত ঘরোয়াভাবে গুরুদেবের জন্মদিন পালনে উদ্যোগী হয়েছেন। যথারীতি বৈতালিক ও মন্দিরে উপাসনা অনুষ্ঠিত হয়েছে সকালে আর সন্ধ্যায় সকলে সমবেত হয়েছেন উত্তরায়ণে কবিকে প্রণাম জানাতে। গান ও নাচের পর অভিনীত হয়েছে বশীকরণ নাটক।

রোগপীড়িত রবীন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত দেখেছেন সেই অনুষ্ঠান। আশ্রমবাসীদের বলেছেন, সংসারে বড় জিনিস হচ্ছে প্রীতি,খ্যাতি নয়।

সৌজন্যে: আবদুস শাকুর

Advt

spot_img

Related articles

আবেগঘন বার্তা দিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় চেতেশ্বর পূজারার

ভারতীয় ক্রিকেট দলের বহু টেস্ট জয়ের স্বাক্ষী তিনি। বহু ম্যাচে একা হাতে ভারতকে বাঁচিয়েওছেন। এবার সেই চেতেশ্বর পূজারাই(Cheteshwar...

বিহারে এত পাক নাগরিক! জানেই না প্রশাসন

বাংলার অরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ নিয়ে চিৎকার করছেন অমিত শাহ। এবার সীমান্তে অমিত শাহের (Amit Shah)...

চলন্ত ট্রেনের ওপর ছিঁড়ে পড়ল বিদ্যুতের তার, আতঙ্কিত যাত্রীরা

বড়সড় ট্রেন দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা। সঠিক সময়ে ট্রেন দাঁড় না করালে রবিবার সকালেই ঘটে যেত এক ভয়ঙ্কর...

দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশে সবচেয়ে ধনী মুখ্যমন্ত্রী কে? রইল তালিকা

দেশে কোটিপতি মুখ্যমন্ত্রীদের ভিড়ে ব্যতিক্রম শুধু একজন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বর্তমানে দেশে সবথেকে গরিব মুখ্যমন্ত্রী তিনি।...