কর্মীদের আস্থা রাখার বার্তা, না’কি রাজ্যকে হুমকি? কোন ছকে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে

এলাকা পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় দল

রাজ্যে ‘সন্ত্রাস’ দেখতে দিল্লি থেকে কেন প্রতিনিধিদল পাঠালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ?নির্বাচনে পরাজয়ের পর কোনও নির্দিষ্ট কারন বা কৌশল ছাড়া কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন ভাবার কোনও কারন নেই৷ কী হতে পারে সেই ছক? আজ, রবিবারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে রিপোর্ট দেওয়ার কথা এই প্রতিনিধিদলের। এর পর কেন্দ্র কোন পথে হাঁটে, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের৷

ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত দু’দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে রবিবার দিল্লি ফিরেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাঠানো কেন্দ্রীয় দল৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব গোবিন্দ মোহনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের এই দল পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগণা, বীরভূমের বেশ কিছু এলাকা ঘুরেছেন৷ এছাড়াও কথা বলেছেন রাজ্যপাল, মুখ্যসচিব, ডিজিপি-সহ একাধিক শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে৷

আরও পড়ুন-শিশিরকে তুলোধনা তৃণমূলের, স্পিকারের কাছে যাচ্ছে চিঠিও

রাজনৈতিক মহলের ধারনা, একাধিক কারন এর পিছনে থাকতে পারে৷ প্রথমত, মোদি বা শাহ-স্তরের বিজেপি নেতারা গত প্রায় দু’মাস যাবৎ দফায় দফায় এ রাজ্যে এসে বুঝিয়েছিলেন, বাংলায় ক্ষমতায় আসছে বিজেপিই৷ ভোটের ফল প্রমান করেছে, মোদি- শাহের দাবি কতখানি অসার ছিলো৷ এই ফলের পরই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বঙ্গ-বিজেপির অন্দরেও৷ এই মুহুর্তে দল পরিচালনায় আর কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ মানতে চাইছে না রাজ্য নেতৃত্ব৷ রাজ্য নেতাদের এই মনোভাবে প্রমাদ গুণেছে দিল্লি৷ বাংলায় আর মুখ দেখানোর উপায় নেই, ফলে মুখরক্ষায় এমন কিছু ‘আইওয়াশ’ করতে হবে, যাতে বাংলার নেতা, কর্মী, সমর্থকদের আস্থা থাকে দিল্লির উপর৷ সে কারনেই এভাবে কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়ে বঙ্গ- বিজেপিকে মোদি-শাহ বার্তা দিতে চেয়েছেন, ‘আমরা পাশে আছি’৷ তাই এই ‘লোক দেখানো’ কেন্দ্রীয় দল, লোক দেখানো ওই দলের অতি-সক্রিয়তা৷

প্রথম কারনটি এতখানি শিশুসুলভ হলেও, দ্বিতীয় কারনটি খুবই সিরিয়াস৷ মোদি-শাহের জামার আস্তিনে যদি সত্যিই এমন তাস লুকানো থাকে, তাহলে গোটা দেশে বিজেপি’র বিপদ বাড়বেই, আগুন জ্বলবে দেশজুড়ে৷ এমনিতেই বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে মোদিকে মুখ বানিয়ে ভোটে নেমে একের পর এক রাজ্য থেকে পদ্ম-পতাকা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে৷ তার উপর, মোদি-শাহ বাংলার জন্য এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করলে ভয়ঙ্কর বিপদে হবে বিজেপি’র৷ ২০২৪-এর ঢের আগেই ছাড়তে হতে পারে কেন্দ্রের শাসনভার৷

রাজ্যে পাঠানো কেন্দ্রীয় দলের ‘তৈরি করা’ রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলার এক বা একাধিক জেলাকে ‘উপদ্রুত এলাকা’ হিসাবে ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র৷ কেন্দ্রের এইভাবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দল রাজ্যে পাঠানোর পিছনে এমন ছক লুকিয়ে থাকতেই পারে বলে অনেকেই মনে করছেন৷ এমন চেষ্টা নিশ্চিতভাবেই আগুন নিয়ে খেলা হবে৷ নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর এতখানি ‘সাহস’ কেন্দ্র দেখানোর কথা ভাবলে, একশো শতাংশ ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে মোদি-শাহের দিকেই৷ কিন্তু এমন ছকের কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ কেন্দ্রীয়দলের ‘তথাকথিত’ সন্ত্রাসের রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজ্য প্রশাসনকে ‘চাপে’ রাখতে, বাস্তবে নাহলেও, মুখে অন্তত এমন কথা বলতেই পারে কেন্দ্র ৷ এই ধরনের কোনও হুমকি দিতেই পারে কেন্দ্র ৷ তবে ওই হুমকি পর্যন্তই, এর বেশি এগোনোর ‘সাহস’ কেন্দ্র দেখাবে না৷

Advt

Previous articleটানা ৪ দিন ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষের বেশি, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৪,০৯২ জনের
Next articleযেদিন তিনি ২৬ বছর পূর্ণ করেন, সেদিনই প্রথম আত্মীয়দের মধ্যে পালিত হয় রবীন্দ্র- জন্মদিন