Sunday, November 9, 2025

‘অ্যারেস্ট-ওয়ারেন্ট’ ছাড়াই ৪ নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়, হাইকোর্টে মেনে নিলো CBI

Date:

Share post:

গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গত ১৭ মে রাজ্যের ৪ নেতা-মন্ত্রীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিলো৷ ওইদিন নিম্ন আদালতে জামিনের শুনানির সময় ‘কেস-ডায়রি’-ও পেশ করা হয়নি৷

বুধবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতিদের প্রশ্নের জবাবে চাঞ্চল্যকর এই স্বীকারোক্তি CBI-এর আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতার৷

CBI-এর এই স্বীকারোক্তির ফলে চার নেতা-মন্ত্রীর গ্রেফতারি এবং টানা ১১ দিন হেফাজতে থাকার ঘটনা আইনি প্রশ্নের সামনে পড়লো বলেই মনে করছে আইনজীবী মহল৷ পাশাপাশি, ওইদিন নিম্ন আদালতে CBI কেন নারদ- মামলার ‘কেস- ডায়েরি’ পেশ করেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেলো৷ আইনজীবী মহলের অভিমত, নিম্ন আদালতকে পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্ত করতেই সেদিন CBI-আধিকারিকরা এই আইনবিরুদ্ধ কাজ করেছেন৷ হাই-প্রোফাইল এই মামলায় CBI-এর এই ধরনের কাজের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেই মন্তব্য করেছে বিশেষজ্ঞ মহল৷

হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে নারদ মামলা স্থানান্তরের শুনানি বুধবার শুরু হতেই ফের বিচারপতিদের প্রশ্নের মুখে পড়েন CBI-কৌঁসুলি তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা৷ এদিন বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতিদের একের পর এক প্রশ্নে কার্যত খেই হারান সলিসিটর জেনারেল৷ এক সময় মেহেতা স্বীকার করে নেন, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াই CBI-এর তদন্তকারী অফিসার তাঁর অধিকার বলে গ্রেফতার করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে৷

স্বীকারোক্তির এখানেই শেষ নয়৷ একটু পরে তুষার মেহেতা একথাও মেনে নেন, ওইদিন নিম্ন আদালতে জামিনের শুনানি চলার সময় নিয়ম মেনে CBI নারদ-মামলার ‘কেস- ডায়েরি’-ও পেশ করেনি৷

হাইকোর্টে এদিন শুনানি চলাকালীন
প্রশ্নের মুখে পড়েন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা৷

◾বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় – সেদিন চারজনকে গ্রেফতার করার সময় কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল? না এমনই গ্রেফতার করা হয়েছিল?

◾মেহেতা – না মাই লর্ড, গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিলোনা৷ অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াই তদন্তকারী অফিসার তাঁর অধিকার বলে এদের গ্রেফতার করেছেন৷

◾বিচারপতি সৌমেন সেন – নিম্ন আদালত থেকে এই চারজনকে জামিন দেওয়া হয়েছিল? না’কি অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল ?

◾মেহেতা – চারজনকেই অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল।

◾বিচারপতি সৌমেন সেন – তার মানে জামিনের আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি তিনি করেননি। তাঁর কাছে মামলার পরবর্তী শুনানি আবার হওয়ার কথা।

◾বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় – বিচারক সেদিন অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিলেন৷ মামলা তাঁর কাছে ফের শুনানি হত। আপনারা (CBI) তো সেখানেও প্রত্যেক দিন শুনানির আবেদন জানাতে পারতেন। আপনাদের বক্তব্য জানাতে পারতেন৷ তা করলেন না কেন ?

◾মেহেতা – নিম্ন আদালতে রোজ শুনানি কার্যত অসম্ভব।

বিচারপতি সৌমেন সেন – নিম্ন আদালতে CBI এই মামলার কেস-ডায়েরি পেশ করেছিলো ?

◾মেহেতা – না, আমরা (CBI) সেদিন কেস-ডায়েরি পেশ করতে পারিনি৷

◾বিচারপতি সৌমেন সেন – CBI নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করতে পারলো, কিন্তু কেস-ডায়েরি পেশ করলো না। কেস-ডায়েরি দেখেই তো জামিন দেওয়া হয়ে থাকে?

◾বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন – CBI হলফনামায় বলেছে, ওইদিন জামিনের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। কিন্তু তুষার মেহেতা এখানে বলছেন যে আপনারা (CBI) সেদিন ভালো করে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতেই পারেননি। এটা স্ব-বিরোধী অবস্থান হয়ে যাচ্ছে না ?

বিচারপতি সৌমেন সেন – আপনারা (CBI) নিম্ন আদালতে চার্জশিটের হার্ড কপি পেশ করছিলেন ?

◾মেহেতা – হ্যাঁ, কিন্তু ততক্ষণে মামলার শুনানি শেষ হয়ে যায়।

◾বিচারপতি সৌমেন সেন – আপনারা (CBI) নিম্ন আদালতে উপস্থিত থেকে সন্ধ্যা ৬টায় চার্জশিট পেশ করেছেন৷ নিম্ন আদালতের বিচারক সন্ধ্যা ৭ টায় তাঁর রায় দিয়েছেন। আপনারা সেই সময় কেন কেস ডায়েরি পেশ করেননি? তাহলে বিচারক কেস ডায়েরি দেখে তাঁর রায় দিতে পারতেন । বা আপনারা মামলা পিছিয়ে দেওয়ার আর্জিও জানাতে পারতেন৷ কেন কেস ডায়েরি পেশ করলেন না ?

এদিন শুনানি শুরু হতেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মামলা স্থানান্তর নিয়ে নিজের যুক্তির স্বপক্ষে একাধিক আদালতের নির্দেশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও ছিলো৷ তাঁর সওয়াল, “যে পরিস্থিতি সেদিন তৈরি হয়েছিল তাতে সাধারণ মানুষের অন্যরকম ধারনা হতেই পারে। মানুষের মনে হতে পারে, সেদিনের ওই পরিস্থিতিতে বিচারকের পক্ষে সুবিচার সম্ভব হয়নি।”
◾বিচারপতি সৌমেন সেন, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাকে – “আপনি বারবার সাধারন মানুষের ধারণার কথা বলছেন। এটা কি মিডিয়া-ট্রায়ালের ওপর নির্ভর করে সাধারণ মানুষের ধারণার কথা বলছেন?

◾মেহেতা – সেদিন যে পরিস্থিতি সেদিন তৈরি হয়েছিল, তাতে সাধারণ মানুষের মনে হতেই পারে যে সেদিনের বিচারপর্বে বিচারকের পক্ষে সুবিচার করা সম্ভব হয়নি ।

◾তখনই বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায় মেহেতাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনার সব অভিযোগ যদি সত্যি বলে ধরেও নিই, তাহলে এই সাধারণ মানুষ কারা? তার সংজ্ঞা কি? তিনি কি শিক্ষিত মানুষ ? তিনি কি রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ ? তিনি কি কোন দলের সমর্থক ? মানুষের মনে কী ধারণা তৈরি হবে তার জন্য কি আইন কানুন ভুলে যেতে হবে ?

◾বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন – মি: মেহেতা, মনে করুন আদালতে একটি জামিনের মামলা হচ্ছে৷ ওদিকে বাইরে প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা জামিন চাইছে। বিচারক কি করবেন? জামিন না দিলে বিক্ষোভ বাড়তে পারে, আবার জামিন দিলে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে। কি করা উচিৎ ?
◾মেহেতা – এটা তো পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

বৃহস্পতিবার ফের শুনানি চলবে৷

Advt

spot_img

Related articles

বালিচকের প্লাটফর্মে ধাক্কা মালগাড়ির, অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

রবিবার সকালে খড়্গপুর ডিভিশনে রেল দুর্ঘটনা। নটা নাগাদ বালিচক স্টেশনে বিকট আওয়াজে একটি মালগাড়ির ইঞ্জিন ধাক্কা মারে প্ল্যাটফর্মে।...

তারকেশ্বরে শিশুকন্যাকে অপহরণ করে যৌন নির্যাতন, গ্রেফতার দাদু!

চার বছরের ঘুমন্ত শিশুকন্যাকে মশারি কেটে বের করে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন। তারকেশ্বর স্টেশন (Tarkeswar Station) সংলগ্ন ড্রেন...

রবিবাসরীয় সকালে চাঁদনী চকের CESC অফিসের ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ!

সাতসকালে মহানগরীতে ফের অগ্নিকাণ্ড (Fire incident in Kolkata)। সকাল ৭টা ১০ মিনিট নাগাদ চাঁদনী চকের CESC অফিসের একটি...

গ্রিন লাইনে ট্র্যাফিক ব্লক, রবির শেষ মেট্রোসূচিতে বদল!

ছুটির দিনে মহানগরীর পাতাল পরিষেবায় বদল। হাওড়া ময়দান - সেক্টর ফাইভ (Howrah Maidan to Sector V) রুটে শেষ...