নারদ-মামলা অন্যত্র সরানো হবে কি না, তা নিয়েই গত বেশ কয়েকদিন ধরেই হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি চলছে।মঙ্গলবারও যথারীতি শুনানি চলছে৷ আইনজীবী মহলের ধারনা, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সওয়াল শেষ হতে পারে৷ মামলার চূড়ান্ত রায় আগামী সপ্তাহেই ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷

প্রসঙ্গত, নারদ-মামলার জেরে গত ১৭ মে রাজ্যের চার নেতা-মন্ত্রীকে CBI গ্রেফতার করে। হাইকোর্টে CBI-এর তরফে ইতিমধ্যেই দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা সওয়ালে বলেছেন, ওই গ্রেফতারির প্রতিবাদে ধরনা, বিক্ষোভ চলে নিজাম প্যালেসের CBI দফতরের সামনে। মুখ্যমন্ত্রী ওই ধর্নায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ধৃতদের জামিনের জন্য CBI-এর বিশেষ আদালত প্রাঙ্গনে হাজির ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী। এর ফলে বিচার বিভাগের উপর প্রভাব সৃষ্টি করেছে বলে দাবি মেহেতার।

মঙ্গলবার অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি CBI-এর এই সব বক্তব্য খণ্ডন করেন৷ এবং অন্যতম অভিযুক্ত ফিরহাদ হাকিমের তরফে হলফনামা পেশ করেন সিংভি।
◾সিংভি – CBI-এর অভিযোগ, ফিরহাদকে গ্রেফতারের সময় প্রচুর মানুষ সামনে আসে। অথচ তিনি নিজে গাড়ির সামনে গিয়ে হাতজোড় করে সবাইকে ফিরে যেতে বলেন। একথা তো বলা হয়নি ? কেন এ কথা এড়িয়ে যাওয়া হলো ? ২০১৭ সালে FIR-এর পর একবারও তদন্তে অসহযোগিতা করা হয়নি। CBI দফতরের সামনে CCTV-র ফুটেজ সামনে আনা হোক। এজলাসেও কোনও মন্ত্রীরা যাননি।

◾সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা – হেফাজতে যাদের নেওয়া হয়েছিলো, তাঁরা CBI অফিসের ভিতরে ছিলেন। তাঁদের কোনওভাবে জানা উচিত নয়, বাইরে কি হচ্ছে।

◾ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি – অভিযুক্ত ফিরহাদ হাকিম কিভাবে জানলেন কারা কোথায় ছিলেন? এই হলফনামার কোথাও তিনি বলেননি এই তথ্য কোথায় পেলেন?

◾সিংভি – ফিরহাদ হাকিমের আত্মীয়রা সেখানে গিয়েছিলেন৷ সেখান থেকেই জানতে পারেন। অন্তত ৩-৪ ঘন্টা কেউ ঢুকতে পারেনি, এটা তো বলা যায়না। মুখ্যমন্ত্রী তো ফিরহাদের আত্মীয়দের সঙ্গেই বসেছিলেন। সেই সূত্রে জানা সম্ভব৷
◾সিংভি – CBI অফিসাররা তো নিজেরা সশরীরে গিয়েই চার্জশিট দিলেন৷ অথচ নিজেরাই ভার্চুয়াল শুনানির আর্জি জানালেন।

◾সিংভি – প্রভাবশালী মানেই প্রমাণ নষ্ট করে দেবেন, এমন যুক্তি অর্থহীন৷ খাঁচায় বন্দি থাকা খারাপ, তবে আরও খারাপ খাঁচা থেকে বাইরে এসেই ঝড়ের মতো উড়ে প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে ক্ষতি করা৷ এমন ভাবনার ভিত্তি কী?

◾সিংভি – যারা সেদিন নিজাম প্যালেসের সামনে জমায়েত হয়েছিল তারা এজেসি বসু রোডের উপরে ছিলেন। তাঁরা CBI-এর নিজাম প্যালেসের দফতরে কেউ ঢোকেননি।

◾রাজ্য সরকারের পেশ করা হলফনামা প্রসঙ্গে বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় – CBI চাইলে এই হলফনামা গ্রহন করা হবে।

◾মনু – সেদিন ১২৯টি গাড়ি নিজাম প্যালেসে ঢুকেছিল এবং বেরিয়েছিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো৷ কিন্তু এখনও বোঝা যাচ্ছে না CBI কেন ঢুকতে বা বেরোতে পারল না? কেন ভারচুয়াল শুনানি চাইলো? কলকাতা পুলিশ জানতে পারার পর গ্রিন-করিডর করে CBI অফিসারদের চার্জশিট দিতে নিয়ে যায়। সেদিন অন্যান্য কোর্টও চলছিল। অথচ স্পেশাল কোর্টে এ সমস্যা হল বলে অভিযোগ CBI-এর। বলা হচ্ছে, হাজার মানুষের ভিড় ছিল আদালতে। কোথাও তো তা দেখা গেল না। শুধুই সংবাদমাধ্যম উপস্থিত ছিল। তাহলে বিশৃঙ্খলা কোথায়! কলকাতা পুলিশও CBI-এর তরফে এমন কোনও অভিযোগ পায়নি৷

◾বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় – ধরা যাক ভিড়ের অভিযোগ সঠিক নয়। কিন্তু যেহেতু এরা জননেতা, তাই জনমানসে প্রভাব হতেই পারে। সেক্ষেত্রে CBI- এর ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কি বলবেন?
◾ সিংভি – ৫ মে- মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিলেন।
৭ মে- রাজ্যপাল স্বাক্ষর করলেন।
১১ মে- ক্যাবিনেট শপথ নিলো।
১৭ মে- চারজনকে গ্রেফতার করা হল। আইন বলছে, এই ধরনের সাংবিধানিক পদের ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হলে স্পিকার বা চেয়ারম্যানের অনুমতি লাগে। কারণ তারা শপথ নিয়ে মন্ত্রী। সেকাজ CBI করেনি৷

আরও পড়ুন:অবলুপ্তির পথে শতাব্দী প্রাচীন পুতুলনাচ শিল্প! কেমন আছেন শিল্পীরা?
