Saturday, August 23, 2025

Birthday of Birsa Munda : বিরসা-ভগবান প্রবীর ঘোষ রায়ের কলম

Date:

Share post:

 

 

আচ্ছা, আপনি সুগানা মুণ্ডা নামে কাউকে চেনেন, বা তাঁর স্ত্রী করমি বাহাতুকে? মনে পড়ছে না? শুধু ‘মুণ্ডা’ শব্দটা একটু চেনা-চেনা? ওই যে স্কুলে থাকতে পড়েছিলেন – কোল, ভীল, সাঁওতাল, মুণ্ডা…! ঠিক।

সে দিনটা ছিল ১৮৭৫-এর ১৫ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার। করমির ছেলে হয়েছে। বৃহস্পতিবারে জন্ম, আদিবাসী নিয়ম মেনে তাই ছেলের নাম রাখা হ’ল ‘বিরসা’। হ্যাঁ, এইবার চেনা গেল। কী? কে? – আরে, ওই যে যাঁর নামে বিমান বন্দর, সিধো-কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়, বীরসা মুণ্ডা সেন্টার ফর ট্রাইবাল অ্যাফেয়ার্স, হাতিঘিশার বিরসা মুণ্ডা কলেজ, আরো কতো কী! আর তা ছাড়া একটা গোটা রাজ্যের জন্ম তো তাঁরই জন্মদিনে। ১৫ নভেম্বর ২০০০ – ঝাড়খণ্ড। বিরসা ভগবানের ১২৫।

কিন্তু তা বাদে? আসলে কী ক’রেছিলেন এই লোকটা? যার জন্য অ্যাতো? আরে জানি জানি। আদিবাসী বিদ্রোহ! খোদ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। বিরাট ব্যাপার! না, ভুল হচ্ছে, তার আগে অনেক কিছু, পরেও। আর লোকটা নয় তাঁর উপাখ্যানের শুরু হচ্ছে যখন, তখন সে নেহাত বালক বা মেরেকেটে কিশোর। হাতে একতারা, কোমরে বাঁশি। বাঁশির সুরে দোলা লাগে অরণ্যের বুকে, সুরের নেশায় মাতাল হয় জঙ্গলমহলের মানুষ, মহুয়া লাগে না। সে কি? বিরসা তো বিপ্লবী! আর আপনি তো কৃষ্ণের গল্প বলছেন। ঠিকই তো ‘ধরতি আবা’ মানে জগতের পিতার গল্পই তো বলছি। কৃষ্ণও তো কালো মানুষ ছিলেন। ধরা যাক ‘ধরতি আবা’ তাঁরই এক অবতার। কী, ভাবতে কষ্ট হচ্ছে? হবেই তো! আমরা তো ‘দিকু’। হ্যাঁ, শুধু সেই সময়ের ব্রিটিশরা নয়, তাদের পা-চাটা কিছু ভারতীয়, আর স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও ধনতন্ত্রের দালাল শাসক, সবাই তাঁদের কাছে দিকু – বহিরাগত, শত্রু, লুটেরা – যারা বারবার কেড়ে নিতে চায় মাটির সন্তানের মাটির অধিকার।

একদম। বয়সের হিসেবে লোক তো নয়ই, পঁচিশেই যে জীবন শেষ হয়ে যায় বা যে জীবন অমরত্বের সন্ধান পেয়ে যায়, সে তো তখনও ভাঙা-গড়ার খেলাতেই মেতে ছিল।

সামলং স্কুলের মুণ্ডা বালক, চাঁইবাসা স্কুলের খ্রিস্টান ডেভিড দাউদ, ফের মুন্সী আনন্দ পাওরের ডাকে বৈষ্ণব, সেখান থেকে আবার নিজের ঘরে ফিরে ‘সার্না পন্থা’, যতো মত ততো পথ। উপজাতীয় একেশ্বরবাদ – কুড়ির কিশোর মানুষের ভালোবাসায় ‘ধরতি আবা’। যেমন যুগপুরুষ কৃষ্ণ। মুণ্ডা, ওঁরাও, খরাই সবাই তখন ‘বিরসাইত’ – ভগবান বিরসার সন্তান।

 

ভগবানকে তাঁর সন্তানদের কষ্টে মাটিতে নামতেই হয়। যে মহাভারতের ভিত্তিই হ’ল বিনাযুদ্ধে সূঁচ্যগ্র ভূমির অধিকারও ছাড়তে না চাওয়া, সেই ভারতের একজন মূলবাসী জননেতা তাঁদের খুন্তিকাঠি জমি লোভি ঠিকাদারদের গ্রাস ক’রতে দেবেন কেন? ‘বেথ বেগারি’-র অত্যাচার সইতে হবে কেন তাঁর মাটির মানুষদের? ১৮৯৯ – ১৯০০ রাঁচি-সিংভূমে জ্বলে উঠলো উলগুলানের আগুন।

কিন্তু ব্রিটিশ আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে মুণ্ডার তীরধনুক আর কতোদিন পারে যুঝতে? ‘আবুয়া ডিসান’-কে লাল ধুলোয় মিশিয়ে দিতে শুরু হয় গণহত্যা। শত-শত মৃতদেহের ভার বুকে নিয়ে ডোম্বরি পাহাড় হয়ে যায় ‘টপ্‌ড বুরু’ বা লাশের স্তূপ।

তারপরের ইতিহাস? যেমন হয়! অতি সংক্ষিপ্ত। পলাতক ভগবান ধরা পড়লেন সেনেত্রার জঙ্গলে, ক্লান্ত, অবসন্ন, ঘুমন্ত অবস্থায়। যীশুর যেমন জুডাস এস্কেরিয়ট, সিজারের ব্রুটাস তেমনি দুটো পয়সা আর দুমুঠো খাবারের লোভে মনমারু-জারকাইলের কিছু ক্ষুধার্ত মানুষ শয়তানের হাতে বিক্রি ক’রে দিল নিজেদের ভগবানকে। ক্ষুধার চেয়ে মহান ভগবান বা শক্তিশালী শয়তান বোধহয় মহাবিশ্বে আর নেই।

৯ জুন ১৯০০। ব্রিটিশ কারাগারে বিষপ্রয়োগে যুগপুরুষের দেহাবসান। এও তো নতুন নয়। বহু নতুন পথের পথিককে নিয়ে ইতিহাস বহুবার একই গল্প লিখেছে। আদিবাসী নিয়ম মেনে মাটির কবরেও ঠাঁই হ’ল না ভগবানের। সব প্রমাণ লোপাটের জন্য রাত্রি ভোর হবার আগেই আগুনে ছাই হয়ে গেল বিরসার পার্থিব দেহ।

কিন্তু উলগুলান? তার তো শেষ নাই।

তাই ভগবানেরও মৃত্যু নাই। তাই বিরসা মুণ্ডারও মৃত্যু নাই।

আজকের ধ্বস্ত ধরিত্রীর বড় প্রয়োজন বিরসার মতো সহস্র ‘ধরতি আবা’র – পৃথিবীর ভগবানেরা সম্ভূত হোন পৃথিবীর বুকে।

** আজ বিরসা মুণ্ডার জন্মদিন। রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে এই দিনটিতে

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...