ত্রিপুরায় জঙ্গলরাজের চরম উদাহরণ রবিবার দিনভর দেখল দেশ। দিনের পর রাতেও আগরতলায় পূর্ব মহিলা থানায় ঢুকে তৃণমূল নেতাদের উপর হামলা চালায় বিজেপি। রক্তাক্ত হয়েছেন সাংবাদিকরাও। আহত হয়েছেন মহিলা পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, যে একটা সময় প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা করছিলেন থানার মধ্যে থাকা তৃণমূল নেতৃত্ব- কুণাল ঘোষ, জয়া দত্তরা। থানার এক দিকের আলো নিভিয়ে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল যুব নেত্রী সায়নী ঘোষকে অন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। একটি ঘরে বন্দি হয়ে থাকেন কুণালরা। পরে এসডিপিও নিরাপত্তা দিয়ে কনভয় করে তৃণমূল নেতৃত্বকে থানা থেকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেন। সোমবার, আগরতলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা বাতিল করেছে বিপ্লব দেবের পুলিশ।

এদিন, সকালে পুলিশের অনুরোধে সৌজন্যে দেখিয়ে তৃণমূল যুব নেত্রী সায়নী ঘোষকে নিয়ে আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় যান তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh), অর্পিতা ঘোষরা (Arpita Ghosh)। সায়নীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন আচমকাই থানা আক্রমণ করে বিজেপির গুন্ডাবাহিনী। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পরে সন্ধের মুখে গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে।

আরও পড়ুন- Tripura: রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র! হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার সায়নী, আগামিকাল সকালেই আগরতলায় যাচ্ছেন অভিষেক
এই ঘটনার পরে সন্ধেয় যখন সোমবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি এবং রবিবার বিজেপির বর্বরোচিত হামলার নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সামনে সঙ্গে কথা বলছিলেন কুণাল ঘোষ, তখনই থানার সামনে ফের তাঁদের দিকে তেড়ে যায় বিজেপির গুন্ডাবাহিনী। চলে ইটবৃষ্টি। রীতিমতো ধারালো অস্ত্র নিয়ে থানা চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। তাঁদের আক্রমণে রক্তাক্ত হন সাংবাদিকরা। আহত হয়েছেন মহিলা পুলিশকর্মী। কোনরকমে প্রাণ হাতে নিয়ে থানার ভিতর একটি ঘরে ঢুকে পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব। পরপর টুইট করে পরিস্থিতি জানান কুণাল। তাঁর তিনটি টুইটে উৎকণ্ঠা ছড়ায় তৃণমূল শিবিরে। প্রথম টুইটে কুণাল লেখেন,
“আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় আবার ঢুকে এসে মারছে বিজেপি। জখম একাধিক। জীবন মরণ সমস্যা আমাদের।”

আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় আবার ঢুকে এসে মারছে বিজেপি।
জখম একাধিক।
জীবন মরণ সমস্যা আমাদের।— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) November 21, 2021
দ্বিতীয় টুইটে তৃণমূল নেতা লেখেন,
“সকালের মতই রাতে আবার মারছে। সবার জীবন বিপন্ন। ভয়াবহ অবস্থা। থানায় ঢুকে মারছে।”
সকালের মতই রাতে আবার মারছে।
সবার জীবন বিপন্ন।
ভয়াবহ অবস্থা।
থানায় ঢুকে মারছে।— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) November 21, 2021
তৃতীয় টুইটে কুণাল লেখেন,
“আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় বিজেপির তাণ্ডব চলছে। বাইরে সাহায্য দরকার। পুলিশ প্রশাসন দেখুন। সাংবাদিকও রক্তাক্ত। পুলিশ আতঙ্কিত।”

আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় বিজেপির তাণ্ডব চলছে।
বাইরের সাহায্য দরকার।
পুলিশ, প্রশাসন দেখুন।সাংবাদিকও রক্তাক্ত।
পুলিশ আতঙ্কিত।— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) November 21, 2021
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জানান, “সায়নীকে নিরাপত্তার অভাবে আগরতলা পূর্ব মহিলা থানা থেকে অন্য থানায় (নাম লিখছি না) নিয়ে গেল পুলিশ। পূর্ব থানায় জীবন মরণ সমস্যা। বিজেপি সশস্ত্র। ঘিরে। সভা করছে। বাজি ফাটাচ্ছে। বোমা গুলির আওয়াজ ঢাকার চেষ্টা? জানি না আমরা বাঁচব কি না।”

সায়নীকে নিরাপত্তার অভাবে আগরতলা পূর্ব মহিলা থানা থেকে অন্য থানায় ( নাম লিখছি না) নিয়ে গেল পুলিশ।
পূর্ব থানায় জীবন মরণ সমস্যা।
বিজেপি সশস্ত্র।
ঘিরে।
সভা করছে।
বাজি ফাটাচ্ছে।
বোমা, গুলির আওয়াজ ঢাকার চেষ্টা?জানি না আমরা বাঁচব কি না।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) November 21, 2021
থানার ভিতরে যখন এই অবস্থা যখন বাইরে, তৃণমূলের ত্রিপুরার স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বিজেপি।

আগরতলা আক্রান্ত তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে লাগাতার ফোনে যোগাযোগ রাখেন অভিষেক। তাঁদের সব রকম এভাবে সাহায্যের আশ্বাস দেন। রবিবার, রাতেই আগরতলায় যেতে চেয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু রাতে বিমান অবতরণে আগরতলা বিমানবন্দরের অনুমতি না মেলায় সোমবার সকালে যাচ্ছেন তিনি। এদিকে অনুমতি দেওয়ার পরেও ফের অভিষেকের পদযাত্রা বাতিল করেছে বিজেপির পুলিশ। তৃণমূল মুখপাত্রের মতে, বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। সেই কারণে তারা ভয় পাচ্ছে। পুরসভা ভোটের আগেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সেখানে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কুণাল।

দুপুরে হামলার পরেই কুণাল অভিযোগ করেন, পরিকল্পিত ভাবে তাঁদের থানায় ডেকে মেরে ফেলার ছক কষেছে বিপ্লব দেবের সরকার। বিজেপির গুন্ডাবাহিনী প্রকাশ্যে লাঠি হাতে, হেলমেট মাথায় থানায় ঢুকে তৃণমূলের উপর হামলা চালিয়েছে। ত্রিপুরায় জঙ্গলরাজ চলছে।


আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি: রাজ্যের এজি
