আর এক ফরাসি বিপ্লব? বিশ্ব রাজনীতির নজর আটকে ফ্রান্সের নির্বাচনে

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের(Precident election) প্রথম পর্যায়ে ভোটাভুটি সদ্য সম্পন্ন হয়েছে ফ্রান্সে(France)। যেখানে ২২% ভোট পেলেন বর্ষীয়ান অতি-বাম রাজনীতিক জাঁ-লিক মেলশঁ। পাশাপাশি ২৩.৫% ভোট পেলেন দক্ষিনপন্থী মেরিন ল্য পেঁ এবং ২৭.১% সমর্থন পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। আর এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। এর প্রভাব হতে চলেছে সুবিশাল। এর প্রধান কারণ অবশ্যই আজকের ফ্রান্স তথা ইউরোপের অভিবাসী-অধ্যুষিত চরিত্র, যা বিপন্ন করে তুলেছে দেশটির সামাজিক ভারসাম্যকে।

ফরাসি দেশে অতি দক্ষিণপন্থার এই সাম্প্রতিক শ্রীবৃদ্ধির অনেকটাই অবশ্য উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের শতাব্দী-লালিত উপনিবেশের উত্তরাধিকারে সম্পৃক্ত। দেশ জুড়ে আজ আফ্রিকান অভিবাসীর বন্যা। ফরাসি ফুটবলে জিনেদিন জিদান, থিয়েরঁ অঁরি, কিলিয়ান এমবাপের মতো মহাতারকার আবির্ভাব মুদ্রার এক পিঠ মাত্র। অন্য পিঠে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে দেশটার জনবিন্যাস, ধর্মীয় চরিত্র, শ্বেতাঙ্গ বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস, কথ্য ভাষা, সংস্কৃতির প্রতিটা স্তর, সামাজিক পরিমণ্ডল, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেত্রী মেরিন ল্য পেঁ-র বক্তব্য, ফ্রান্স ফরাসিদেরই জন্য। সাধারণ ফরাসি জনতা আরও বেশি করে শরিক হচ্ছেন এই চিন্তাধারার। ক্রমেই তাই নড়বড়ে হয়ে পড়ছে সামাজিক সুস্থিতি, সহাবস্থানের পরিবেশ। শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম অতিমারি কিংবা ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা একটা যুদ্ধ, আর তার সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় এই সামাজিক টানাপড়েন। তীব্র দক্ষিণপন্থার সহচর হয়ে পাশে থাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ। আর এই পথ ধরেই প্রথম পর্যায়ে এ বার ২৩.৫% ভোট পেলেন মেরিন ল্য পেঁ। যিনি অভিবাসনের বিরুদ্ধে, নিষিদ্ধ করতে চান হিজাব। যার জেরে আশঙ্কায় ভুগছেন সে দেশের মুসলিম এবং ইহুদিরা। অন্যদিকে বর্তমান শাসক ইমানুয়েল মাকরঁ অতি-ডান আর অতি-বামের প্রবল মেরুকরণে দীর্ণ ফরাসি সমাজের অনিবার্য এক ভাঙনকে আপাতত রুখে দিলেও, তাঁর শাসনে নেওয়া একাধিক সিদ্ধান্তে ক্ষোভ কিছুটা রয়েছে মানুষের মধ্যে। আর সেখান থেকেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অতি ডানপন্থা।

আরও পড়ুন:আদি-তৎকাল দ্বন্দ্ব চরমে: এবার শুভেন্দু-মালব্যদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিজেপি

উল্লেখ্য, ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় সর্বাধিক দুই পর্বে। নির্বাচনে জনতা সরাসরি ভোট দেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে। প্রথম পর্বে কোনও প্রার্থী ৫০%-এর বেশি ভোট না পেলে সর্বাধিক ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর সরাসরি লড়াই হয় দ্বিতীয় পর্বে, দু’সপ্তাহ পরে। ২৪ এপ্রিলের দ্বিতীয় পর্বের ভোট বদলে দিতে পারে ফরাসি সমাজকে, সেই সঙ্গে ইউরোপেরও রাজনীতি আর সামাজিক প্রেক্ষিতকেও। এখানেই সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হতে চলেছে ২৩.৫% ভোট পাওয়া দক্ষিনপন্থী মেরিন ল্য পেঁ এবং ২৭.১% সমর্থন পাওয়া ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরেঁর মধ্যে।

এ বারের নির্বাচন তাই যেন ২০২২-এর ফরাসি বিপ্লব। এই নির্বাচনে মাকরঁ জিতলে অতি-দক্ষিণপন্থায় খানিকটা হলেও রাশ পড়বে— ফ্রান্সে, ইউরোপে। ম্যার্কেলের বিদায়ের পরে ইইউ-এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যও মাকরঁর কোনও বিকল্প নেই এই মুহূর্তে। যদিও তীব্র দক্ষিণপন্থার সঙ্গে কত দিন যুঝবেন মাকরঁ, না কি তাঁর ভারসাম্যের মধ্যপন্থাও একটু একটু করে ক্রমশ আরও দখিন-ঘেঁষা হয়ে পড়বে, সেটাই দেখার।




Previous articleOnline Fraud: সাবধান! বইপাড়ার নামে অনলাইন জালিয়াতি মহানগরীতে
Next articleবিশ্বভারতীর ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার একাদশের পড়ুয়ার  ঝুলন্ত দেহ