Thursday, December 25, 2025

কথাসাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুভূতিতে ‘কথাসন্ধি’

Date:

Share post:

কিছু কথা লেখা যায়, কিছু কথা অনুভুতিতেই থেকে যায়। যখন পাঠক শ্রোতা হয়ে ওঠেন তখন লেখক কী অপরূপ বাগ্মিতার পরিচয় দিয়ে একটা সন্ধ্যে মাতিয়ে দিতে পারেন, তা বোঝা গেল ২৭ এপ্রিল সাহিত্য একাডেমীতে (Sahitya academy) পৌঁছে। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সমালোচক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Ranjan Bandyopadhyay) নিজস্ব লেখা, অনুভূতি আর কিছু বিতর্ক- এই সব নিয়েই সাহিত্য একাডেমীর(Sahitya academy) পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠান যার নাম কথাসন্ধি (Kathasandhi)।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যপ্রেমী সুবোধ সরকার (Subodh Sarkar) রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আর তাঁর সাথে জড়িয়ে থাকা নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেন। এরপরই সাহিত্য একাডেমী তে উপস্থিত শ্রোতাদের সঙ্গে আলাপচারিতা আর কথোপকথনে মেতে ওঠেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

লেখক কথা শুরু করেন শ্রীরামকৃষ্ণ-সারদা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন নবজাগরণের সময় নারীকেই ভোগ্য বস্তু হিসেবে গণ্য করেছেন সকলে। হয়তো সেই তালিকা থেকে বাদ যান নি রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ কেউই। কিন্তু ব্যতিক্রম শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। তিনি নারীকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন শক্তির আধার রূপে।

পরবর্তীতে কথার প্রাসঙ্গিকতা থেকে উঠে আসে নরেনের সন্ন্যাসী হওয়ার সাধনার ইতিহাস। রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় সেই প্রসঙ্গে বলেন, বিবেকানন্দের নবীন তাপসে ফুটে ওঠা কঠোর রূপের রৌদ্র দীপ্তির কথা। বিরজা মন্ত্রে এক জীবনেই মৃত্যুর পর পাড়ে শান্তায়িত হওয়ার বীজ মন্ত্র বপনের সেই উপলব্ধি সত্যিই স্বর্গীয়, স্বীকার করেন লেখক।

ঝরা পালক’: ব্রাত্যর অভিনয়ে অন্য মাত্রা পেয়েছে কবির চরিত্র

এরপর তিনি বলেন অঙ্কের জনক রামানুজনের কথা। তাঁর মা গণিত শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য লাভ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সামাজিক পটভূমিতে তা সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তখন তিনি ব্রম্ভার কাছে এমন সন্তান কামনা করেন যে হবে গণিত শ্রেষ্ঠ। কিন্তু ঈশ্বর বর দিয়ে বলেন গণিত শ্রেষ্ঠ সন্তান পেতে গেলে, তাঁর স্বল্পায়ু হবে। অবশেষে মা স্বল্পায়ু কামনা করেন তার সন্তানের জন্য। সেই নিয়ে নিজের লেখা কিছু কথা তুলে ধরেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। রামানুজনের কাছে অঙ্ক ছিল অনুভূতি, উপলব্ধি। তিনি বলতেন, অঙ্ক বিজ্ঞান নয় আসলে প্রজ্ঞা। এই প্রসঙ্গে পুরাণের কথাও বলেন লেখক।


কথার পরে কথার তালে সময় ঘড়ির কাঁটা তখন অনেকটা এগিয়ে গেছে। হাসির ছলে প্রশ্ন করেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ” আমার সময় কি শেষ?” । সমবেত শ্রোতারা রবি ঠাকুরের কথা জানতে চান তাঁর কাছে।  রবীন্দ্রনাথের নিঃসঙ্গ নির্বাসন নিয়ে, পদ্মার প্রেমিক রূপ নিয়ে কথা বলেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পী বা কবি নন, মানুষ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনা। অনায়াসেই মধুর কিছু স্মৃতিচারণায় চোখের সামনেই যেন ধরা দেন স্বয়ং গুরুদেব ।

সবশেষে, নিজের কথা জানতে চাওয়া হলে বিশিষ্ট লেখক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি কর্মের পূজারী। যতদিন বাঁচবেন থেকে যাবেন তাঁর কাজের পরিমণ্ডলেই। ১৭বার ঠিকানা বদলেছেন যে মানুষটি, তিনি  অনায়াসে বলতে পারেন, “আমি জলছুট মাছ, আজীবন সংসারের সাথে মানিয়ে চলতে বুকে চাপ লাগে। তাই থিতু হতে পারলাম না। প্রেম নিয়ে আমার স্পষ্ট বিশ্বাস, যেকোনো মিলনে প্রেম ভোঁতা হয় বিরহেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব।” অকপটে নারীসঙ্গের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে জানান তিনি মহিলা সঙ্গ উপভোগ করেন, তবে সব সম্পর্ক যৌনতার দিশা দেখায় না, কিছু থাকে মৌন হয়ে নিভৃতে, বন্ধুত্বের পরশ লাগিয়ে। কারণ আসল সত্যি এটাই, যতদূরে হেঁটে যাই না কেন , পা বাড়ালে শুন্য। আর সেই পরম শূন্যেই জীবনের পূর্ণতা, বলে গেলেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (Ranjan Bandyopadhyay)।

spot_img

Related articles

এক দশক পর শীতলতম বড়দিন পেল বাংলা!

যিশু জন্মদিনের সকালে (Christmas morning) কলকাতার তাপমাত্রা (Kolkata temperature) নামলো ১৩.৭ ডিগ্রিতে। শীতের আমেজে জমজমাট বড়দিনের আবহাওয়া। দক্ষিণবঙ্গে...

মধ্যরাতে কর্নাটকের ট্রাক-বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঝলসে মৃত্যু অন্তত ১০ জনের

বড়দিনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা কর্নাটকে। বেসরকারি একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষের (bus truck accident) ফলে বাসে আগুন ধরে যাওয়ায়...

ক্রিসমাসে রক্তাক্ত ঢাকা, চার্চ টার্গেট করে বিস্ফোরণে মৃত ১

বড়দিনের উৎসব শুরু হবার আগেই বুধবার সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণে রক্তাক্ত বাংলাদেশের ঢাকা (Blast in Dhaka, Bangladesh)। মগবাজার ফ্লাইওভারে...

ক্রিসমাসে ঝলমলে পার্কস্ট্রিট, সান্টা টুপি মাথায় বড়দিনের সকালে পিকনিক মুডে বাঙালি

দেখতে দেখতে বছর প্রায় শেষ হতে চলল। ক্রিসমাসের মধ্য দিয়েই যেন বর্ষবরণের আনন্দ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে যায়। বড়দিনের...