Sunday, November 9, 2025

শুধু স্টার নন, বড় মনের মানুষ ছিলেন আমার ‘মাস্টারমশাই’

Date:

Share post:

জয়িতা মৌলিক: তাঁর কাছে যখন আবৃত্তি শিখতে যাই, তখন কোনও ধারনাই ছিল না বাচিকশিল্পী হিসেবে পার্থ ঘোষ (Partha Ghosh) কোন মাপের মানুষ। তখন তিনি নক্ষত্র, আর আমার বয়স সাড়ে তিন। সেই সময় নিজে পড়ে কবিতা মুখস্থ করতে পারতাম না। মাস্টারমশাই ক্লাসে পড়ে শুনিয়ে দিতেন, বাড়িতে মা।সেইভাবেই ক্লাসে পিতৃস্নেহ আগলে রেখেছিলেন। প্রথম বড় স্টেজ পারফরম্যান্স করেছিলাম তাঁর সঙ্গেই। অসম্ভব দক্ষতা ছিল স্বরের উপর। একই সঙ্গে নীচের ‘ধা’ থেকে উপরের ‘ধা’ পর্যন্ত গলা চলত তাঁর। সরগম দিয়ে বললাম এই কারণেই, যে মাস্টারমশাইও মনে করতেন সরগম একজন বাচিকশিল্পী কণ্ঠকে তৈরি করে দেয়।

জানি আবৃত্তির শিক্ষক বা গুরুকে মাস্টারমশাই বলাটা একটু অদ্ভুত। কিন্তু আমি তাই বলতাম, তাই শেখানো হয়েছিল। বয়স বেড়েছে অনেক। কিন্তু কোনও দিনই তিনি ‘পার্থদা’ নন, আমার কাছে মাস্টারমশাই। কঠিন অসুখে পড়লেন আমার মা। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হবে ভেল্লোর। বাড়িতে ছুটে এলেন মাস্টারমশাই। দেখা করলেন। বাবাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা বললেন, “কোনও দরকার হলে বলুন, আমি প্রস্তুত হয়েই এসেছি”। সেদিন আমার বাবার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ওনার এই পরোপকারের ইচ্ছেটা মুগ্ধ করেছিল আমাদের পুরো পরিবারকে। বহুদিন যোগাযোগ ছিল তাঁর সঙ্গে। নিয়মিত ক্লাসে হয়তো আর যাওয়া হয়নি। কাজের চাপে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু তাও যেখানে দেখেছেন ঠিক চিনতে পেরেছেন। আমি বলে নয়, যেকোনো ছাত্রছাত্রীকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন তিনি। এক একটা ক্লাসে প্রত্যেককে আলাদা করে শেখাতেন। ভুল ধরিয়ে দিতেন। সবচেয়ে বেশি জোর দেন উচ্চারণ আর কবিতা মুখস্থ করার উপর। কারণ তিনি বলতেন, দেখে কবিতা পাঠ হয়, আবৃত্তি হয় না। কত বড় মাপের বাচিকশিল্পী ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না সেই সময় পার্থ ঘোষ গৌরি ঘোষ ছিলেন স্টার। শুধু তাঁদের নামেই হল ভর্তি হয়ে যেত।

বাচিকশিল্পীই নন, ছিলেন বেতার শিল্পী। গল্প দাদুর আসর তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় রেডিও শো। “ছোট্ট বন্ধুরা, কেমন আছ?”- তাঁর এই দুটো শব্দ শোনার জন্য রেডিও-তে কান পাততো ছোটরা, সঙ্গে বড়রাও। আর রেডিওর আর একপাশে বসে আমার মনে হত-, এ আমার মাস্টারমশাইয়ের কণ্ঠস্বর। গৌরী ঘোষের সঙ্গে ‘কর্ণ কুন্তী সংবাদ’- এর কর্ণ যেমন তাঁর বাচনভঙ্গীতে জীবন্ত হয়ে উঠত, একইভাবে জুটি বেঁধে বলতেন ‘প্রেম’। “আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত/ আমি সেইদিন হব শান্ত”- অবলীলায় বলে যেতেন পার্থ ঘোষ। ইদানিং অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গত অগাস্টে স্ত্রী গৌরী ঘোষ চলে যাওয়ার পরে শূন্যতা আরও বেশি করে গ্রাস করে। 31 ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন হয়। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। কালের নিয়মে সবাইকে চলে যেতে হবে। তবু কিছু মানুষের চলে যাওয়া ব্যক্তিজীবনেও বড় দাগ রেখে যায়।

 

spot_img

Related articles

বালিচকের প্লাটফর্মে ধাক্কা মালগাড়ির, অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

রবিবার সকালে খড়্গপুর ডিভিশনে রেল দুর্ঘটনা। নটা নাগাদ বালিচক স্টেশনে বিকট আওয়াজে একটি মালগাড়ির ইঞ্জিন ধাক্কা মারে প্ল্যাটফর্মে।...

তারকেশ্বরে শিশুকন্যাকে অপহরণ করে যৌন নির্যাতন, গ্রেফতার দাদু!

চার বছরের ঘুমন্ত শিশুকন্যাকে মশারি কেটে বের করে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন। তারকেশ্বর স্টেশন (Tarkeswar Station) সংলগ্ন ড্রেন...

রবিবাসরীয় সকালে চাঁদনী চকের CESC অফিসের ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ!

সাতসকালে মহানগরীতে ফের অগ্নিকাণ্ড (Fire incident in Kolkata)। সকাল ৭টা ১০ মিনিট নাগাদ চাঁদনী চকের CESC অফিসের একটি...

গ্রিন লাইনে ট্র্যাফিক ব্লক, রবির শেষ মেট্রোসূচিতে বদল!

ছুটির দিনে মহানগরীর পাতাল পরিষেবায় বদল। হাওড়া ময়দান - সেক্টর ফাইভ (Howrah Maidan to Sector V) রুটে শেষ...