Tuesday, August 26, 2025

রাজার মতো মৃত্যু হয়েছে কেকে-র, আমরা শিল্পীরা আসলে জনসমুদ্রে মিশে যেতে চাই: নচিকেতা

Date:

Share post:

কলকাতায় কলেজের অনুষ্ঠান করতে এসে মৃত্যু হয় এই প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে-র। শিল্পীর মৃত্যু নিয়ে পরিবারের প্রতি সমবেদনা কম, বরং কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত রাজনীতির কারবারীরা। কিন্তু একটু অন্য পথে হাঁটলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। তাঁর শহরে কেকে-র অকাল প্রয়াণে গভীরভাবে মর্মাহত নচিকেতা। সমস্ত বিতর্ককে দূরে সরিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লম্বা পোস্ট করেছেন শিল্পী নচিকেতা।


আরও পড়ুন:১০জুন প্রকাশিত হবে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল


নীচে নচিকেতার পুরো পোস্ট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হল–

“কেকে-র কলকাতা সফর নিয়ে রূপঙ্করের মন্তব্যকে বাঙালি তীব্র ভাবে আক্রমণ করছে। ওকে দুচ্ছাই করছে। কিন্তু ওর অভিমানকে যদি আমরা বুঝতে না পারি, তা হলে তো ধরে নিতে হবে, আমাদের অনুভূতি বোধটাই উবে গিয়েছে। আমরা কি গাধা হয়ে গিয়েছি! না না, গাধা নয়, গাম্বাট! এক জন বাঙালি শিল্পী তার অভিমানের জায়গা থেকে একটা কথা বলল। আর আমরা সেটাকে ধরতেই পারলাম না। অন্য ব্যাখ্যা করছি! আরে রূপঙ্কর জ্যোতিষী নাকি! ও কী করে জানবে, কেকে মারা যাবে! বিজেপি আর সিপিএম তো ময়দানে নেমে পড়েছে। এমন একটা ভাব যেন, ভিড়ের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। কেন্দ্রীয় সরকার এ বার না একটা আইন এনে ফেলে। প্রেক্ষাগৃহে ২০ জনের বেশি লোক এক জন শিল্পীর গান শুনতে যেতে পারবে না। আরে ভিড় হলে তবেই না শিল্পীর মন ভরবে! পেট ভরবে। এরা কারা!

রাজার মতো মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। এমন মৃত্যুই তো সকলে চায়। আমরা শিল্পীরা আসলে জনসমুদ্রে মিশে যেতে চাই। ওই ভিড়ে পিষ্ট হতে চাই। ভিড়ের চাপে মরে যেতে চাই। ওখানেই তো শিল্পীর সার্থকতা। শ্রোতাদের ভিড়ে এক জন শিল্পী মিশে গিয়ে জীবনের শেষ গান শোনাচ্ছেন, এটাই শিল্পীর স্বপ্ন। কেউ কেউ বলছেন, ভিড়ের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কেকে-র। মোটেও নয়। গাঁধীজি জনসমুদ্রে মিশেছেন। ইন্দিরা গাঁধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনকি নরেন্দ্র মোদীও জনসমুদ্রে মিশে যেতে চান। যানও। ওঁরা রাজনৈতিক ‘পারফর্মার’। আমরাও ‘পারফর্মার’, তবে সাংস্কৃতিক। আমাদের সকলেরই এই ভিড়ের খিদে থাকে। মাইকেল জ্যাকসনের ছিল। এলভিস প্রেসলির ছিল। কেকে-র ছিল। আমার আছে। আমি গত ৩০ বছর ধরে এই জনসমুদ্রে মিশছি। দুর্ভাগ্য, কেকে-র মতো মৃত্যু হল না। ও আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট ছিল। তা-ও বলব, রাজার মতো গিয়েছে। ওর মৃত্যু আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। বাঙালি যে ওকে এত ভালবাসে, সেটা দেখে ভালও লাগছে।

আমি পাহাড়ে বেড়াতে এসেছি। কাল রাতেই কেকে-র কথা শুনেছি। আজ জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ফোন করেছিল। ও-ই আমাকে বলল, ‘‘দাদা তোমার গান কেকে খুব পছন্দ করত। বিশেষ করে রাজশ্রী।’’ আমি তো শুনে চমকে উঠলাম। ও আমার গান শুনত! কেকে এত ভাল গান গাইত! আমি তো ওর ফ্যান ছিলাম। কিন্তু ও আমার গান শুনত জানতে পেরে, ভাল লাগছে। আসলে বাঙালিকে সারা ভারত শোনে। শুধু বাঙালিই সেটা বুঝতে পারে না। আর সেই কথাটাই রূপঙ্কর বলতে চেয়েছিল। বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলতে চেয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, ও কেকে-কে কোনও ভাবেই ব্যক্তি আক্রমণ করতে চায়নি। ও শুধু একটা অভিমানের কথা বলতে চেয়েছে। বাঙালি শিল্পী যখন অন্য রাজ্যে যায়, তখন ক’টাকা পারিশ্রমিক পায়! আর বম্বের শিল্পী এখানে এলে কত পায়! সাধারণ মানুষ এ সব জানেন না। অভিমানটা আছে। থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক।


রূপঙ্করও আমার থেকে ছোট। ছোটদের অভিমান অনেক বেশি। ওরা বাংলার কথা বলতে চায়। বাংলা সংস্কৃতিকে ওরা আন্তর্জাতিক করতে চায়। আসলে কী জানেন তো, রবীন্দ্রনাথ নোবেল না পেলে তিনিও আঞ্চলিক কবি হয়ে থেকে যেতেন। সত্যজিৎ রায় এই কলকাতায় পুরনো বাড়িতে থাকতেন। আর সুভাষ ঘাই বাংলোয় থাকতেন। কার পরিচিতি সর্বভারতীয় স্তরে বেশি? বাঙালিদের অভিমান আছে। থাকবে। আমার নেই। কিন্তু কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখি, রূপঙ্কর যাদের হয়ে কথাটা বলল, আজ তারাই ওর পাশে নেই! এটা ঠিক হল না। রাঘব, ইমনদের তো ওর পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল।

একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তাতে রূপঙ্কেরর কোনও দোষ নেই। হ্যাঁ, আমি নচিকেতা বলছি। আমি রূপঙ্করের পাশে আছি।”

spot_img

Related articles

কেনিয়ায় ছুটির মুডে অরিন্দম, পরিচালকের লেন্সে বন্দি প্রকৃতির সৌন্দর্য

'যেন অন্য কোনও জগতে আছি। প্রকৃতির সৃষ্টির মাঝে অস্তিত্বহীন মনে হচ্ছে নিজেকে। যেন মহাবিশ্ব আশীর্বাদ করছে, সুযোগ করে...

বিজেপির ললিপপ হবেন না: নির্বাচন কমিশনকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর

বিজেপির (BJP) ললিপপ হবেন না। মঙ্গলবার, পূর্ব বর্ধমানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে তোপ দাগলেন...

গণতান্ত্রিক দেশে কেন দেখাবেন না ডিগ্রি: নিজের ডিগ্রি তুলে চ্যালেঞ্জ সাগরিকার

কী লুকাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি? এক সময় তো নিজেকে চাওয়ালা, পাহারাদার কিছু বলতেই বাদ রাখেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra...

অমানবিক রেল পুলিশ! স্ত্রীর দেহ কাঁধে তুলে স্টেশনে ঘুরছেন স্বামী

রেল পুলিশের (Rail Police) চরম অমানবিকতা। সোমবার বরাভূম স্টেশনে শান্তা কর্মকার নামে একটি মহিলার মৃত্যু হয়। এই  মৃত্যুই...