Thursday, December 18, 2025

Tarun Majumdar : ছায়াছবি নয়, পরিবার তৈরি করতেন তরুণ মজুমদার

Date:

Share post:

সিনেমায় যা হয় তার সবটা নাকি সত্যি নয়। কিন্তু সিনেমা (Cinema) এমন কিছু ভাবনার জন্ম দেয় যা সত্যি করতে ইচ্ছে হয় বটে। সেই ভাবনার রূপকার ছিলেন তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar)। বাঙালি মননে পারিবারিক গল্পের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছিলেন তিনি। নায়ক-নায়িকার গ্ল্যামারে বাকি চরিত্রদের সাদামাটা করেন নি কখনও। বরং নির্দেশনার (Direction) নিপুণতায় এক অমলিন ভালো লাগা তৈরি করতে পারতেন।

এরপর একের পর এক হিট ছবি তরুণ মজুমদারের ঝুলিতে। ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শুধু ছবিই নয়, উপহার দিয়েছেন একের পর এক জুটি। কিন্তু ৪ জুলাই ২০২২ এর সকালে সব ‘ চাওয়া পাওয়া ‘ ছেড়ে কাঁচের স্বর্গে চলে গেলেন তিনি। শচীন মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে যাত্রিক গোষ্ঠীতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। প্রথম ছবি উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘চাওয়া-পাওয়া’। শুধু বাংলা ছবির সেরা জুটিকেই নয়, এই ছবিতে বাঙালি দর্শক দেখে ছিলেন নিটোল এক প্রেমের কাহিনী। প্রতিটি পরতে ছিল আকুল অপেক্ষা, এই বুঝি একে অন্যকে বলবে ভালোবাসার কথা। প্রায় তিন দশক ধরে এক পরিচালক সাধারণ বাঙালি জীবনযাত্রার কথা বলে গেছেন। যার মূল ভিত্তি ছিল ভালোবাসা। তরুণ মজুমদারের ছবিতে নারী চরিত্র আলাদা রকমের প্রাধান্য পেয়েছে। ১৯৬৭ তে মুক্তি পায় ‘ বালিকা বধূ ‘ , ১৯৮৫ সালে ‘ ভালোবাসা ভালোবাসা ‘ – প্রজন্মের আমূল পরিবর্তন সত্ত্বেও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Mousumi Chatterjee) থেকে দেবশ্রী রায় (Debashree Roy), যেন আলাদা করেই নিজেদের প্রমাণের জায়গা পেয়েছিলেন। ১৯৮০ তে যখন ‘ দাদার কীর্তি ‘ মুক্তি পায়, সকলেই তাপস পালকে (Tapas Pal)ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু গোটা সিনেমা জুড়ে মহুয়া রায়চৌধুরীর (Mohua Roychowdhury) চরিত্রের যে বলিষ্ঠতা নজর এড়ায়নি কারোর। পরবর্তিকালে তার রেশ ধরে রেখেছে ‘ আলো ‘। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের (Rituparna Sengupta) মতে এই ছবি তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম মাইলফলক। ফুলেশ্বরী (১৯৭৪) অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের (Sandhya ray) জাত চিনিয়েছিল বাঙালি দর্শককে।

শুধু বাণিজ্যিক সাফল্যই নয়, সমালোচক মহলে বহুল প্রশংসিত তরুণ মজুমদারের ছবি। আজকের প্রজন্মের পরিচালকদের মতে, নায়ক নায়িকাকে গ্ল্যামারের আলোয় ভরিয়ে গল্পকে গুরুত্বহীন করে তোলার ঘোর বিরোধী ছিলেন পরিচালক। সৃজিত মুখোপাধ্যায় থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় – পরিবারের গল্প নিয়ে ছবি তৈরির কথা ভাবলে সবার আগে তাঁদের মাথায় আসেন তরুণ মজুমদারের কথা। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা বলছেন, অনেক কাজ বাকি রয়ে গেল। আরও অনেক প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীরা তরুণ মজুমদারের চোখ দিয়ে নিজেদের দেখার সুযোগই পেলেন না। বাংলা সিনে জগতে এই ক্ষতি সত্যিই পূরণ হবার নয়।

তরুণ মজুমদার বাংলা ছবির উজ্জ্বল আলো। যার প্রভাবে আলোকিত হয়েছে বাংলা সংস্কৃতি। ছবির সুরে সুরভিত হয়েছে বাংলা গান। ছবি দেখার আনন্দ ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। বাংলা বিনোদন জগতে মন ভালো করা অনুভূতির পরশমণি ছুঁইয়ে দিয়ে, ‘চাঁদের বাড়ি’ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন ‘ভালোবাসার অনেক নাম ‘।



spot_img

Related articles

বাজেয়াপ্ত যুবভারতীর সিসিটিভি ফুটেজ, নজরে শতদ্রু ঘনিষ্ঠরা

যুবভারতীতে মেসি(Messi) ইভেন্ট চরম বিশৃঙ্খলায় তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার গঠিত সিট(SIT)। যুবভারতীর (Yubha bharati) যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ...

সিইও দফতরের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, শুক্রবার থেকেই মোতায়েন

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর নিরাপত্তায় এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী (central security force) মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে...

২৯ ডিসেম্বরেই দুর্গাঙ্গনের শিলান্যাস, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

২৯ ডিসেম্বর শিলান্যাস হবে দুর্গাঙ্গনের (Durgangan)। বৃহস্পতিবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিল্প কনক্লেভে মঞ্চ থেকেই শিলান্যাস অনুষ্ঠানের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী...

মেদিনীপুর-বর্ধমান ম্যাচ ড্র, জয়ের ধারা বজায় রাখাই লক্ষ্য হাওড়া-হুগলির

বেঙ্গল সুপার লিগের(Bengal Super League) ম্যাচে বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হয়েছিল এফসি মেদিনীপুর এবং বর্ধমান ব্লাস্টার্স। দুই দলই জয়েই ফিরতে...