বিরোধীদের চাপে অবশেষে সংসদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি সরকার

বিরোধীদের লাগাতার ধরনার চাপে নতি স্বীকার করল মোদি সরকার(Modi Govt)। ৫০ ঘন্টা ধরনার পর আগামী সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার(Central govt)। সেই অনুযায়ী সোমবার লোকসভায় এবং মঙ্গলবার রাজ্যসভায় মূল্যবৃদ্ধি(Price Hike) নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।

শুক্রবার দুপুর ১২.৩০ নাগাদ ৫০ ঘন্টা সম্পূর্ণ হওয়ার পর অবস্থানরত সাংসদরা, সংসদ চত্বরের গান্ধী মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তারপর সেখান থেকে হেঁটে বিজয় চক পর্যন্ত মিছিল করেন। বিজয় চকে সমগ্র বিরোধী শিবিরের তরফে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ডিএমকের তিরুচি শিবা এবং সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব। সংবাদমাধ্যমে রামগোপাল যাদব বলেন, “মুড়ি, চিড়ের মতো খাদ্য সামগ্রির প্যাকেটে জিএসটি বসিয়েছে মোদি সরকার। বাচ্চার মুখ থেকে দুধ কেড়ে নিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির চাপে দমবন্ধ পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের।”

জুলাইয়ের শেষে দিল্লির ভ্যাপসা গরমে টানা ৫০ ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে ধরনা অবস্থান করে গান্ধী মূর্তিতে মাল্যদানের পর তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন জানালেন, ” জাতির জনককে মাল্যদান করে এই আশীর্বাদ চেয়েছি যেন আমরা ভারতবাসীরাই শেষ কথা বলতে পারি দেশের জন্য।”

ধর্নার দ্বিতীয় রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিজেরাই মশারির ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন সাংসদরা।বৃহস্পতিবার ছিল ধর্নার দ্বিতীয় রাত। একাধিক সাংসদকেই খোলা আকাশের নীচে বিছানা পেতে, মশারির ভিতরে শুয়ে রাত কাটাতে দেখা যায়।

এদিকে শুক্রবার সকালে সভা শুরু হতেই মূল্যবৃদ্ধি, জিএসটি, অগ্নিপথ সহ নানান ইস্যুতে উভয়কক্ষে প্রবল বিক্ষোভ এবং স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী দলের সাংসদরা। ফলে সোমবার পর্যন্ত উভয়কক্ষই মুলতুবি হয়ে যায়। সোমবার ফের সংসদে যোগ দেবেন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদরা। এই ধরনাকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের গরিমা রক্ষার পাশাপাশি জরুরি বিষয়গুলি আলোচনার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেন, “এই ধরনার মধ্য দিয়ে সংসদের গরিমা রক্ষা এবং জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা তালিকাভুক্ত করতে সরকারকে বাধ্য করেছি।” প্রসঙ্গত আগামী সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

উল্লেখ্য, রাতভর ধরনাস্থলে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। সূত্রের খবর, প্রথমদিন ধরনারত সাংসদদের সহযোগিতা করায় রাজ্যসভার সচিবালয়ের কর্মীদের বকুনি খেতে হয়েছে। সেই কারণেই দ্বিতীয়দিন আর সাংসদদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করেননি সচিবালয়ের কর্মীরা। ৪টি পাখা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। এমনকী, ধরনাস্থল পরিষ্কারও করে দেওয়া হয়নি। সাংসদরা নিজেরাই পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন। তুলে নেওয়া হয় ফেরি কার সার্ভিস। ফলে সমস্যায় পড়েন সাংসদরা। স্থানীয় দল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ধনাস্থলে ৪টি পাখার ব্যবস্থা করে আম আদমি পার্টি।

ধরনাস্থলে তৃণমূল ছাড়াও ছিল ডিএমকে, কংগ্রেস, টিআরএস, আপ, সিপিএম, সিপিআই, আরজেডি, আরএলডি, কেরল কংগ্রেস, জেএমএম, শিবসেনা এবং নির্দলের একজন সাংসদ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খার্গে। একটি বিশেষ ভিডিও বার্তায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন বলেন, ” বিজেপি গত আট বছরে প্রচুর মিথ্যা কথা বলেছে। মিথ্যা বলা ওদের স্বভাব। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি বলে সরকার আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ। সেই জন্যই আমাদের বের করে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, দুধ, মুড়ি, চিড়ের ওপর জিএসটি বসানো হয়েছে। সেগুলি নিয়ে আলোচনা করতে চাওয়ার জন্যই বিরোধীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- কাঁথি পুরসভা: সারদা-বহুতলের ফাইল উধাও মামলায় সুদীপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেল পুলিশ

Previous articleকাঁথি পুরসভা: সারদা-বহুতলের ফাইল উধাও মামলায় সুদীপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেল পুলিশ
Next articleচার টাকা লিটার প্রতি গোমূত্র কিনছে ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস সরকার