Tuesday, August 26, 2025

দীর্ঘ লড়াই ও স্বপ্নের উড়ান: সাফাই কর্মী থেকে SBI-এর AGM পদে প্রতীক্ষা

Date:

Share post:

এ যেন এক স্বপ্নের উড়ান! মাত্র ২০ বছর বয়সে স্বামীর মৃত্যুর পর স্টেট ব্যাঙ্কে(State Bank of India) সাফাই কর্মী(Sweeper) হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন প্রতীক্ষা তোন্ডলকর(pratiksha tondwalker)। তখন হয়তো তিনি কল্পনাও করতে পারেননি ৩৭ বছর পর এই ব্যাংকেরই শীর্ষ আধিকারিক পদে আসবেন তিনি। তবে অকল্পনীয় হলেও এটাই বাস্তব সত্য। সাফাই কর্মী থেকে আজ স্টেট ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার পদে বসলেন লড়াকু মহিলা প্রতীক্ষা তোন্ডলকর।

প্রতীক্ষা যখন সাফাই কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন তখন তিনি স্কুলের গণ্ডিও পার করেননি। এই পরিস্থিতিতে সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে শুরু হয় তাঁর কঠিন লড়াই। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করে আজ স্টেট ব্যাংকের শীর্ষ পদে এলেন তিনি। তাঁর এ লড়াই নিঃসন্দেহে দেশের অন্যান্য মহিলাদের কাছে বড় নজির তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৯৬৪ সালে পুনেতে এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন প্রতীক্ষা। দশম শ্রেণী পাস করার আগেই ১৬ বছর বয়সে সদাশিব কডু নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তাঁর। স্টেট ব্যাংকের বুক বাইন্ডার হিসেবে কাজ করতেন সদাশিব। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেন প্রতীক্ষা। এরপর গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রতীক্ষার স্বামীর। লড়াইটাও শুরু হয় তখন থেকেই। স্বামীর মৃত্যুর পর state bank-এ জীবনধারণের জন্য সামান্য চাকরি জোটে তাঁর। তবে পড়াশোনা না থাকায় ভালো চাকরি যোগাড় করতে পারেননি তিনি। মাত্র ২০ বছর বয়সে ব্যাংকের সাফাই কর্মী হিসেবে অফিস ঝাট দেওয়া, বাথরুম পরিষ্কার করতেন তিনি। বেতন পেতেন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। তখন থেকেই পরিকল্পনা করেন ফের পড়াশোনায় ফিরবেন তিনি। এদিক থেকে ব্যাংকের কিছু আধিকারিকের সাহায্য পান প্রতীক্ষা। এবং দশম শ্রেণী পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ নম্বর পান। একইভাবে পাশ করেন দ্বাদশ শ্রেণী। এরপর ১৯৯৫ সালে মনোবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েট হন প্রতীক্ষা। যার জেরে সাফাই কর্মী থেকে ক্লার্ক হিসেবে পদোন্নতি হয় তাঁর।

এ প্রসঙ্গে প্রতীক্ষা বলেন, একজন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে আমার কাছে সমস্ত বাধা পার করে নিজের জন্য একটা লক্ষ্য স্থির করার দরকার ছিল। বিশেষ করে পড়াশোনার জন্য বাধা ছিল প্রচুর। ছিল প্রচুর সামাজিক চাপ। প্রতিমুহূর্তে আমার ছেলে (বিনায়ক) ও চাকরির মধ্যে কিছু একটা বেছে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। তবে আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম যা করছি তা আমার ছেলের জন্য।

১৯৯৩ সালে প্রতীক্ষা প্রমোধ তোন্ডলকর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রমোদ তাঁকে সাহায্য করে ব্যাংকের পরীক্ষায় বসতে। ছেলে ও স্বামীর উৎসাহে ব্যাংকের পদোন্নতির পরীক্ষায় বসে ক্লার্ক থেকে আধিকারিক হন প্রতীক্ষা। দফায় দফায় পরীক্ষা ও সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে সব শেষে গত জুন মাসে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি হয় লড়াকু মহিলা প্রতীক্ষা তোন্ডলকরের।

অবসর নিতে আর দু’বছর বাকি প্রতীক্ষার। ব্যাঙ্কিং-এর পাশাপাশি ২০২১ সালে ন্যাচারালোপ্যাথির কোর্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। অবসরের পর আপাতত এটিকে অবলম্বন করেই কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রতীক্ষা বলেন, আমি যখন পেছনে ফিরে আমার যাত্রাপথকে দেখি তখন গোটা বিষয়টি আমার কাছে অসম্ভব লাগে। যদি কেউ হতাশ ও অবসাদগ্রস্থ হয় তবে আমার এই কাহিনী তাদের কাছে হয়তো আশার সঞ্চার করতে পারে।


spot_img

Related articles

ট্রাম্পের ছোঁয়া পলকাটা হিরেতে! মোদির গুজরাটেই বেকার অন্তত ১ লক্ষ শ্রমিক

বন্ধুত্বের বাহানায় বিপুল ক্ষতির মুখে গোটা দেশকে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বসানো শুল্কের...

ভয় পেয়েই কুকথা শান্তনুর! ফাঁস মতুয়াদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি

মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করতে মাঠে নেমেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে আধিপত্য কায়েমে বিজেপির নোংরা রাজনীতি দীর্ঘদিনের। ঠাকুরবাড়ির...

নীরবে প্রস্তুতি শামির, দলীপ দিয়েই কামব্যাকের লড়াই

কয়েকদিন আগে এশিয়া কাপের(Asia Cup) দল ঘোষণা হয়েছে। সেখানে সুযোগ পাননি মহম্মদ সামি(Mohammed Shami)। ভারতীয় দলে তিনি ফিরবেন...

রবি ঠাকুরের ‘কঙ্কাল’ থেকে ‘কনকচাপা’: পার্থর নাটক দেখতে ভিড় জিডি বিড়লা সভাঘরে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য ভাণ্ডার অবলম্বনে একের পর এক নাটক তৈরি হয়েছে— শারদোৎসব, রাজা, ডাকঘর, অচলায়তন, ফাল্গুনী, রক্তকরবী আজও...