Tuesday, November 11, 2025

‘সুরসিক বার্নার্ড শ’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

বিশাল ভুঁড়ির অধিকারী মোটাসোটা অ্যালফ্রেড হিচকক একদিন ঠাট্টা করে বার্নার্ড শ’কে বললেন ,
‘ তোমাকে দেখলে মনে হয় ইংল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ চলছে । ‘ জবাবে শ বললেন , ‘ আর তোমাকে দেখলে বোঝা যায় দুর্ভিক্ষের কারণটা কী ! ‘

জর্জ বার্নার্ড শ কাউকে অটোগ্রাফ দিতেন না । নিজের লেখা বইও কখনো কাউকে উপহার দিতেন না ।
তবে বিশ্বখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ১৯২৮ সালে রয়েল সোসাইটির সভায় দেওয়া ভাষণটি শুনে মুগ্ধ হয়ে যান শ । পরদিনই কয়েকটি বই নিয়ে জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়িতে হাজির হন তিনি । তখন বাড়িতে ছিলেন না বিজ্ঞানী । উপহারের বইগুলোতে শ লেখেন,’ জীববিজ্ঞানে পণ্ডিত এক ব্যক্তিকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ এক ব্যক্তি উপহার দিলেন । ‘

একবার এক তরুণ সম্পাদক একটি সংকলনে বার্নার্ড শ’র একটি লেখা ছাপার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন । চিঠিতে উল্লেখ ছিল , সম্পাদকের বয়স কম , তাই তার পক্ষে সাম্মানিক পাঠানো সম্ভব নয় । জবাবে শ লিখলেন , তরুণ সম্পাদকের বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন । একদিন এইচ জি ওয়েলস-এর সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন শ । ওয়েলস তাঁর হাতের লাঠিটা ঘোরাচ্ছিলেন , আর সেটা শ’র নাক ছুঁইছুঁই করছিল । যে কোনো সময় লাঠিটা নাকে লাগতে পারে ভেবে শ ওয়েলসকে লাঠি ঘোরানো বন্ধ করতে বললে ওয়েলস বলেন , লাঠি ঘোরানো তাঁর নাগরিক অধিকার । উত্তরে শ বলেন , ‘ মানলাম , তবে আমার নাকের ডগা যেখানে শেষ , তোমার নাগরিক অধিকার সেখান থেকে শুরু । ‘

বিশ্বখ্যাত আইরিশ নাট্যকার এবং লণ্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জর্জ বার্নার্ড শ ।
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের পর অন্যতম সেরা ইংরেজ নাট্যকার হিসেবেই তাঁর প্রসিদ্ধি । জন্ম ১৮৫৬ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে এবং মৃত্যু ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ড শহরে, ৯৪ বছর বয়সে । তিনি নোবেল ও অস্কার বিজয়ী । শিল্প- সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অগাধ বৈদগ্ধের জন্য তিনি বিশ্ববন্দিত । জর্জ বার্নার্ড শ’র কথা অমৃতসমান।

তাঁর দীর্ঘ বর্ণময় জীবনকথা লিখতে হাজার পৃষ্ঠা লাগবে । তাই আপাতত আবার ফেরা যাক তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও মেধাসঞ্জাত রসিকতাগুলিতে। তাঁর সত্তর বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘ কেমন আছেন আপনি ? ‘ উত্তরে তিনি বলেন , ‘ খুব ভালোভাবে বেঁচেবর্তে আছি । কিন্তু আমাকে বিচলিত করে রেখেছে ডাক্তারেরা । তাঁরা সবসময় আমার কানের পাশে এসে পইপই করে বলতে থাকে , যদি মাংস না খাই তাহলে আমি মরে যাব । ‘

তাঁর নব্বই বছর বয়সে যখন তাঁকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল তখন তিনি বলেন , ‘ আমি খুব ভালো আছি । এখন আর আমাকে কেউ বিচলিত করে না । মাংস না খেলে আমি মরে যাব বলে যে ডাক্তারেরা আমাকে ভয় দেখাতেন , তাঁরা সবাই মরে গেছেন । ‘ শ বলেন , আমি ডিনামাইট তৈরির জন্য আলফ্রেড নোবেলকে ক্ষমা করতে পারি , কিন্তু নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তনকারীকে ক্ষমা করতে পারি না , কারণ একমাত্র মানুষরূপী শয়তানই এই পুরস্কার প্রবর্তন করতে পারে । সুইডিশ রসায়ন বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কারের পর ‘ মৃত্যুর সওদাগর ‘ হিসেবে নিন্দিত হয়েছিলেন ।

লেখক আর্নল্ড বেনেট একদিন বার্নার্ড শ’কে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ আপনি ফুল ভালোবাসেন , অথচ আপনার বাড়ির ফুলদানিতে ফুল রাখেন না কেন ? ‘ শ বললেন , ‘ প্রিয় হলেই কি সেটা বাড়িতে এনে রাখতে হবে ? শিশুরাও তো আমার প্রিয় । তাই বলে ওদের ধরে এনে বাড়িতে সাজিয়ে রাখলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে ? ‘ যেদিন বাজারে পচা ডিম খুব বিক্রি হবে সেদিন ভুলেও বক্তৃতা দিতে যেও না ; একথা কি বার্নার্ড শ বলেছিলেন ? কে জানে ! ‘ Beware of the man whose god is in the skies’ , জর্জ বার্নার্ড শ’র বিখ্যাত ‘ Man and Superman ‘ নাটকের সংলাপ ।

এক বৃটিশ সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন , ‘ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে চাকরি পাবেন কোথায় ? ‘
উত্তরে শ বলেন , ‘ কেরানী যারা হতে চায় , তারা পড়বে , আমি চাই জীবনকে আবিষ্কার করতে । ‘
এক ইংরেজ একদিন শ’কে হেয় করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন , ‘ মিস্টার শ , আপনার বাবা তো দর্জি ছিলেন , তাহলে আপনি কেন দর্জি হলেন না ? ‘

মোক্ষম জবাব দিলেন বার্নার্ড শ । বললেন , ‘ আপনার বাবা তো শুনেছি ভদ্রলোক ছিলেন , তাহলে আপনি তাঁর মতো হলেন না কেন ? ‘

আরও পড়ুন- আজ মোহনবাগান দিবস, সুনীলের হাত দিয়ে প্রকাশিত সুব্রতর আত্মজীবনী

spot_img

Related articles

সঙ্গীত পরিচালকের ভূমিকায় সৃজিত?

১৫ বছর টলিউডে রাজত্ব করেছেন। ঝুলিতে রয়েছে দুর্দান্ত সব ছবি। কিন্তু এবার সঙ্গীত পরিচালকের ভূমিকায় কাজ করতে চলেছেন...

উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমিস্টারের আনসার কী প্রকাশ! মিলিয়ে দেখার সুযোগ পরীক্ষার্থীদের

প্রকাশিত হল উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমিস্টারের আনসার কী। মঙ্গলবার অনলাইনে এই উত্তরপত্র প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা...

কোন ধারায় আমি সাসপেন্ড? পার্থর বিস্ফোরক চিঠি দলীয় নেতৃত্বকে

দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাঠানো চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই। দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেনসেনকে অবৈধ বলে ব্যাখ্যা করেছেন পার্থ।...

দুদফায় ভোটগ্রহণ শেষে বিহারের Exit Polls: নীতীশ না তেজস্বী-শেষ হাসি হাসবেন কে?

দুদফায় ভোটগ্রহণের শেষের পরেই প্রকাশিত বিহারের বুথ ফেরত সমীক্ষা। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে জোট শরিকদের দুর্বলতায় মসনদে বসা...