Tuesday, August 26, 2025

খরুন গ্রামে শোলার মূর্তিতে পুজো! এক বছর পর মহালয়ার দিন মায়ের নিরঞ্জন

Date:

Share post:

দেবর্ষি মজুমদার: বাংলার কোণায় কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক প্রাচীন ও বনেদি বাড়ির পুজো। প্রতিটিরই কোনও না কোনও বিশেষত্ব রয়েছে। খরুন গ্রামের রায় জমিদার বাড়িতেও রয়েছে এমন একটি বিশেষত্ব। আর তার পিছনে রয়েছে একটি বহু প্রাচীন লোককথা। তা সত্যিই গল্প নাকি সত্যি ঘটনা তা অবশ্য আর জানা যায় না। রায় জমিদার বাড়িতে মাটির মূর্তিতে পুজো হয় না। ধাতুর মূর্তিতেও হয় না। তার বদলে পুজো হয় শোলার মূর্তিতে।

ঠিক একবছর পর এবার মা দুর্গার নিরঞ্জন হবে মহালয়ার দিন। তবে কোনও মৃন্ময়ী মূর্তি নয়। পটের একচালা দেবী মূর্তি হয় বীরভূমের রামপুরহাট থানার অন্তর্গত গ্রাম খরুণে। সারা বছর পটের মূর্তি মন্দিরে রেখে দেওয়া হয় ও তাঁর পুজো হয়। মহালয়ার দিন বিকেলে সেই  একচালা পট মূর্তি নিরঞ্জন হয়।এটাই এই পুজোর রীতি। এরপর পিতৃপক্ষের শেষে প্রতিপদের সূচনায় ঘটে জল ভরে এবং বলিদানের মধ্য দিয়ে পুজোর সূচনা হয়।

এখানে বিগত ৩৫৪ বছর ধরে শোলার মূর্তিতে পুজো হয়ে আসছে। এই চিরাচরিত প্রথা বা রীতি নিয়ে একটি উপকথা লোকমুখে শোনা যায়। গ্রামের জমিদার রাম নিধি রায় ও রামকানাই রায় এই পুজোর প্রবর্তন করেন। কথিত, রায় বংশের এক কুমারী মেয়ে মন্দিরে মাটির  দেবীকে সন্ধ্যারতি করতে যান। তারপর তিনি  আর মন্দির থেকে বের হননি। জমিদার বাড়ির লোক মন্দিরে ঢুকে দেখতে পান ওই কুমারীর পরিধেয় শাড়ির লাল পাড়ের অংশ বিশেষ। আর তারা বুঝতে পারেন, কি হয়েছে। তারপর থেকেই কাগজের পুজোর প্রচলন হয়।

পটে স্থানাভাবে রায়বাড়ির এই পুজোয় কার্তিক ও গণেশ নেই। সেই রীতির ব‍্যতিক্রম আজও হয়নি। তবে বর্তমানে কাগজের পরিবর্তে দেবীর শোলার পট মূর্তি হয়ে থাকে। গ্রামে রায় বাড়ি ছাড়া আরও চারটি সাবেকি পূজা হয়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ওই চার পুজো বাড়ির প্রতিনিধি রায় মণ্ডপে হাজির হন। তারপর সবাই  মিলে নব পত্রিকা নিয়ে দোলার ঘট ভরা হয়। এই পুজোর  আরেকটি  উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ  হলো সর্বত্র দশমীতে সিঁদুর খেলা হলেও, এখানে  সপ্তমীতে মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন।

জমিদার বাড়ির  অন‍্যতম বংশধর তরুণ কুমার রায় বলেন,  মায়ের তিন দিন ভোগ হয়। একদিন লুচি ও দুদিন অন্ন ভোগ হয়। মায়ের ভোগে নবমীর দিন মাছ পোড়া ও মেটে ভাজা হয়। অষ্টমীতে সন্ধী পুজোর ছাগ বলি হয়। সপ্তমী, নবমীতেও হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত  রায় বংশের কোনও বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। পরিবারের  প্রায় ৩০০ সদস্য এক জায়গাই পাত পেড়ে খান।

 

spot_img

Related articles

দুদিন ছুটি বৃষ্টির! তবুও থাকছে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস

বঙ্গোপসাগরে ফের তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত। তার জেরে ফের ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। যার প্রভাব ওড়িশা ও বাংলার...

অনেক প্রেরণা তাঁরই: জন্মদিবসে মাদার টেরেসাকে স্মরণ মুখ্যমন্ত্রীর

তিনি যত না ছিলেন ম্যাসিডোনিয়ার তার থেকেও বেশি ছিলেন ভারতের, এই বাংলার। যাঁদের বেঁচে থাকার কোনও আশাই ছিল...

সবার ভালোবাসা লালবাগচা রাজাকে, মুম্বইয়ের গণেশ পুজোয় টক্কর দিতে তৈরি অন্যরাও

মুম্বইয়ের লালবাগের রাজাকে (Lalbaugcha Raja) কে না চেনে। সারাবছর আখ্খা মুম্বইকর অপেক্ষা করেন তাঁর ঝলক দর্শনের জন্য। এবছরও...

প্রাথমিক টেট-এর তথ্য ফাঁস হয়নি, বিভ্রান্তি কাটিয়ে জানালো পর্ষদ

নতুন জালিয়াতির বিরুদ্ধে কড়া রাজ্যের শিক্ষা দফতর। প্রাথমিক টেট-এর (Primary TET) তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি...