কাতারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ৮ ভারতীয়: মুক্তির পথে কাঁটা যুদ্ধ, দিল্লির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

কাতারে মৃত্যুদণ্ডের দণ্ডিত হয়েছেন ৮ প্রাক্তন নৌ সেনা আধিকারিক। গত বুধবারই ওই ৮ জনের বিরুদ্ধে এই সাজা ঘোষণা করেছে কাতার আদালত। জানা গিয়েছে ইজরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এই শাস্তি। অবশ্য এই ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করতে কোনও খামতি রাখছে না ভারত সরকার। তবে সে পথে অন্যতম বাধা হয়ে উঠেছে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ। অবশ্য কূটনৈতিক লড়াইয়ে ভারতের সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাকি দেশগুলির কাছে রীতিমত ঈর্ষণীয়। আর এই ধরনের ঘটনায় এর আগে পাকিস্তানে বন্দি প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিক কূলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড আটকে দিয়েছিল ভারত সরকার। তবে কাতারের ক্ষেত্রে লড়াইটা বেশ কঠিন হতে চলেছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

ওই ৮ প্রাক্তন নৌ সেনা আধিকারিকদের মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই রায় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। আট ভারতীয়ের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যাবতীয় আইনি পথ পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। তবে সে পথে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ পরিস্থিতি অন্যতম বাধা হিসেবে দেখছে কূটনৈতিক মহল। তার অন্যতম কারণ, ভারতের ইজরায়েলপন্থী ভূমিকা। ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন যুদ্ধে ভারতের মনোভাব অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’। যুদ্ধ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর পক্ষপাতি ভারত। একদিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী হামাসকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, প্রতিটি ভারতীয় ইজরায়েলের পাশে রয়েছে। তবে মোদির মন্তব্য ভারতের অতীত অবস্থান থেকে ভিন্নমুখী বুঝতে পেরে এরপরই বিদেশ মন্ত্রক জানায়, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে প্যালেস্টাইনের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন করে ভারত। এদিকে আবার গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের হামলা রুখতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে আনা প্রস্তাব এড়িয়ে গিয়েছে ভারত। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই যুদ্ধে ভারতের অবস্থান অনেকটাই ইজরায়েল ঘেঁষা। অন্যদিকে, কাতার আবার পুরোপুরি হামাসপন্থী। এই অবস্থায় আট ভারতীয় বন্দির মৃত্যুদণ্ড ঠেকানো মোদি সরকারের উপর যে বিরাট চাপের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উল্লেখ্য, ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের অগস্ট মাসে। কাতারের দোহায় কর্মরত আট ভারতীয়কে গ্রেফতার করে কাতারের গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের নিভৃত কারাবাসে রাখা হয়েছিল। তবে কী কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে কাতার সরকারের তরফে কিছু জানানো হয়নি। ভারত সরকারও এই বিষয়ে চুপই ছিল। চলতি সপ্তাহে ওই আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ার পরই আসল অভিযোগ সামনে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতে কর্মরত কাতারের এক আধিকারিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানান, কাতার কর্তৃপক্ষের তরফে ওই আট ভারতীয়ের বিরুদ্ধেই ইজরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতর তরফে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হলেও, তারা প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলেই জানান তিনি। এদিকে ভারত সরকারও তৎপর মৃত্যুদণ্ড আটকাতে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি সরকার চায় না এই কূটনৈতিক লড়াই সেখানে কোনভাবে প্রভাব ফেলুক। ফলে এই লড়াইয়ে মোদি সরকারের মুখরক্ষার কৌশল কী হবে সেটাই দেখার।