পশ্চিম এশিয়ার কট্টর মুসলমান দেশ হিসাবে পরিচিতি। এখনও সে দেশের মেয়েদের ঘরের বাইরে পা দিলেই হিজাবে(Hizab) শরীর ঢাকা দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক নিয়ম মেনে চলতে হয়। আর তা অমান্য করলেই সর্বনাশ। সে ছোট হোক বা বড়, যে কোনও বয়সের মেয়ে নিয়ম না মানলে জোটে কঠিন শাস্তি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন দেশটির নাম ইরান (Iran)। একসময় সেই কট্টরপন্থী দেশে পশ্চিমি সংস্কৃতি (Western Culture) মেনে চলা হলেও এখন সেদেশের শাসন দেখলে তা বোঝা একেবারেই দুঃসাধ্য। কিন্তু যেখানকার সংস্কৃতি এত আধুনিক ছিল, আচমকা কী এমন ঘটল যা একেবারে বদলে দিল গোটা দেশটাকেই? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই না জানা কাহিনী। যা শুনলে আপনিও চমকে উঠতে বাধ্য।

সূত্রের খবর, এর পিছনে দায়ী একটি জমকালো অনুষ্ঠান (party)। যা রাতারাতি বদলে দিয়েছিল একটা দেশের ভাগ্য। ১৯৭১ সালের ঘটনা। জানা গিয়েছে, ইরানের রাজা শাহ মহম্মদ রেজা পহ্লভি জমকালো ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। জানা যায়, পশ্চিমি আদবকায়দার পাশাপাশি সেই ঘরানার পূজারী ছিলেন ইরানের তৎকালীন রাজা। তাঁর আমলে ইরানে অভিজাত মেয়েরা হাঁটু সমান স্কার্ট পরে বাড়ির বাইরে নির্দ্বিধায় বেরতেন। ছিল না হিজাবের বালাইও। তবে প্রকাশ্যে না বললেও রাজার এই আধুনিক নিয়মকানুনে কিছুটা বিরক্তই হতেন দেশের গোঁড়া মুসলিমরা। ১৯৭১ সালে ইরানে পারস্যরাজের ২৫০০ বছর পূর্তি ছিল। আর সেই উপলক্ষেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছিল। তবে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে ইরানের রাজার মনে হল মরুভূমিতেই আয়োজন করা হবে বিশাল পার্টি। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ। মরুভূমির বুকেই ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে গড়ে তোলা হল তাঁবুর শহর। অতিথিদের থাকার জায়গা থেকে শুরু করে পানভোজনের ঘর বা মনোরঞ্জনের জায়গা— সবই এক বছর ধরে তৈরি করা হল ওই তাঁবু-শহরের ভিতরে।

মরুভূমিতে শুধু শহর নয়, একটা অস্থায়ী রাজপ্রাসাদই বানিয়ে ফেলেছিলেন রাজা। সব মিলিয়ে, ৬৫টি দেশের প্রধানরা ছিলেন আমন্ত্রিতের তালিকায়। তবে অতিথিদের মরুভূমিতে আমন্ত্রণ জানালে রাজা চেয়েছিলেন তাঁর জঙ্গলে ঘেরা রাজপ্রাসাদের অনুভব পান আমন্ত্রিত অতিথিরা। আর মরুভূমিতে যখন রাজার এই কর্মকাণ্ড চলছে, তখন ইরানের সাধারণ মানুষের দিন কাটছিল অতি কষ্টে। দেশের অন্য অংশের অবস্থা তখন এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে, অনেকের কাছে পানীয় জল পাওয়াও ছিল বিলাসিতা। খাওয়াদাওয়া তো দূরস্ত। কিন্তু রাজার মাথায় তখন একটাই চিন্তা— বিদেশি অতিথিদের চোখে সেটা হবেন কী করে। আর তারপরই হাজার কোটি টাকা খরচ করে আমন্ত্রিতদের চোখে সেরা হয়ে উঠলেন তিনি। তবে এমনিতেই রাজার চালচলন নিয়ে গোঁড়া মুসলমানদের মনে ক্ষোভ ছিল। আর এই অনুষ্ঠান যেন সেই রাগে ঘি ঢালল বলা চলে।

ঠিক সেই সময় রাজার সমালোচক এক শিয়া ধর্মগুরু আয়াতোল্লা রুহোল্লা মুসাভি খোমেইনি আচমকাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর নেতৃত্বে জনতার রোষ একটা সময় এতটাই বেড়ে যায় যে, প্রাসাদ ছেড়ে পালাতে হয় রাজা-রানিকে। ইরানে এরপরেই খোমেইনির নেতৃত্বে তৈরি হয় নতুন সরকার— ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান। দেশ জুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসলামিক আইন। যার জেরেই বদলে যায় ইরানের ভাগ্য। আজও ইরানে এক জন মহিলার হিজাব না পরার শাস্তি কমপক্ষে ৭৪ ঘা চাবুক, পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১৬ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে। কিন্তু ওই একটা পার্টিই বদলে দিল ইরানের ভাগ্য।