কোভিশিল্ড নিয়েছেন? রক্ত জমাট বেঁধে শরীরে বিরল রোগ জন্ম নিচ্ছে না তো!

অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের তৈরি কোভিশিল্ড প্রত্যাহার করেছে সপ্তাহখানেক আগেই। কিন্তু আলোচনা থামছে না। গবেষণার কচকচানি যাই বলুক যাঁরা এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁরা কি আদৌ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত? অজান্তেই শরীরে বিরল রোগ জন্ম নিচ্ছে না তো? অ্যাস্ট্রাজেনেকা আগেই জানিয়েছিল, তাদের এই টিকার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ বা টিটিএস (TTS) নামে এক বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। এই রোগে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। কিন্তু এবারের গবেষণায় উঠে এলো আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে শুধু TTS নয় এর পাশাপাশি বিরল রক্ত জমাট বাঁধার ব্যাধি ‘ভ্যাকসিন-ইনডিউসড ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া এবং থ্রম্বোসিস’ বা ভিআইটিটি (VITT) হওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়। রিপোর্ট প্রকাশে আসতেই উদ্বেগ স্বাস্থ্য মহলের।

মানবদেহে সাধারণ কিছু রোগের উপসর্গ যেমন মাথা ব্যথা, বমি, পেটে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদির মধ্যেও যে VITT হতে পারে তা অস্ট্রেলিয়ার ‘ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা জার্নালে প্রকাশ করেছেন। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, রক্তের এক ক্ষতিকারক অটোঅ্যান্টিবডি থেকে ভিআইটিটি হয়। এই ক্ষতিকারক অটোঅ্যান্টিবডি, ‘প্লেটলেট ফ্যাক্টর ৪’ নামে এক ধরনের প্রোটিনের ক্ষতি করে। মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভুলবশতঃ শরীরের সুস্থ কোষ ও কলাগুলিকে আক্রমণ করে। কারণ সুস্থ কোষ-কলাগুলিকেও তারা বাইরের কোনও রোগ-জীবাণু বলেই মনে করে। এই ধরনের অ্যান্টিবডিগুলিকে, অটোঅ্যান্টিবডি বলে। এরা অটোইমিউন রোগ সৃষ্টি করে। সেই ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের সুস্থ কোষ এবং কলাগুলিরই ক্ষতি করে। অটোইমিউন রোগে আক্রান্তদের রক্তে ডি-ডাইমার নামক একটি পদার্থের মাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যায়। যার ফলে, তাদের মস্তিষ্কে বা পেটে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।প্রাকৃতিকভাবে অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণ হলে প্লেটলেট ফ্যাক্টর ৪ অ্যান্টিবডিতে এক বিশেষ ধরনের আণবিক স্বাক্ষর দেখা যায়।অর্থাৎ ভাইরাস এবং ভ্যাকসিন, উভয়ই ক্ষতিকারক অ্যান্টিবডিগুলির প্রতিক্রিয়াকে উসকে দেয়। একই রকম জেনেটিক রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। এবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভিআইটিটি-র লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রবল মাথাব্যথা, দৃষ্ঠির পরিবর্তন, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বোধ হতে পারে। তাই সতর্ক করা হয়েছে যে এই ধরনের কোনও লক্ষণ যদি সাধারণ মানুষের দেহে শনাক্ত করতে পারলে, দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।