সিএবির উদ্যোগে এই প্রথম বেঙ্গল প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই টুর্নামেন্টে অন্যান্য দলের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে অ্যাডামাস হাওড়া ওয়ারিয়ার্স। এই টুর্নামেন্ট প্রসঙ্গে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর সমিত রায় বলেন, আমি এই উদ্যোগকে অত্যন্ত স্পিরিটের সঙ্গে দেখছি। কারণ, এই খেলার আয়োজনের জন্য বেশ কিছু কর্পোরেট হাউস বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে। এর ফলে জেলার তরুণ ক্রিকেটাররা কিছু অর্থ যেমন পাবে, তেমন কলকাতায় তাদের পাঁচতারা হোটেলে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। এগুলো তাদের খেলাধুলার প্রতি আরও বেশি অনুপ্রাণিত করবে।

তিনি স্পষ্ট জানান, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে শেষ সাত আট বছর ধরে বাংলা থেকে কোনও ভাল ক্রিকেটার উঠে আসেনি। বলা যেতে পারে ক্রিকেটারের আকাল চলছে। তাই টিম তৈরি করার সময়ও সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন এমন খেলোয়াড়কে যেমন দলে নিতে হয়েছে, তেমনি অনূর্ধ্ব ১৯ খেলেছে এমন দুজনকে দলে রাখতে হয়েছে। এই যে তরুণ ক্রিকেটাররা, ভাল খেলোয়াড়দের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাচ্ছেন, এটা তাদের ভাল খেলতে আরও বেশি সাহায্য করবে। তাই সিএবির এই ভাবনা, নতুন খেলোয়াড়দের তুলে নিয়ে আসার এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যোগ্য ক্রিকেটাররা যাতে খেলার সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, আমরা পড়াশোনা সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত। তাই আমাদের একটা সোশ্যাল কমিটমেন্ট আছে। সোশ্যাল সোসাইটির যদি ডেভেলপমেন্ট না হয়, বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রে আমরা মনে করি শিক্ষাটা শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় । কারণ, আগামী দিনে দেশের আন্তর্জাতিক পরিচিতি নির্ভর করে কত আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় উঠে আসল তার ওপর।
অলিম্পিকে কতগুলো স্বর্ণপদক পাওয়া গেল, কতজন সায়েন্টিস্ট তৈরি হল, নোবেল প্রাইজ কতজন পাচ্ছে। এইভাবে কিন্তু একটা দেশের পরিচিতি বিশ্বের দরবারে পৌঁছায়। সেদিক থেকে আমাদের মনে হয়েছে, খেলাধুলা এবং পড়াশোনা একটা আরেকটার সঙ্গে রিলেটেড। তাই আমরা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার প্রতিও জোর দিয়ে থাকি। যার ফলও পেয়েছি। দেশের ৮২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খেলো ইন্ডিয়াতে আমরা নয় নম্বরে আছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৭৫ বছর, কিন্তু এইরকম পারফরমেন্স কলকাতা বা যাদবপুর ইউনিভার্সিটিও কিন্তু করতে পারছে না।


আমাদের প্রায় সাড়ে পাঁচশ ন্যাশনাল প্লেয়ার আছে। যারা পাঞ্জাব থেকে কেরল থেকে এখানে পড়তে এসেছে। বছরে ৮ কোটি টাকা তাদের স্কলারশিপ দেওয়া হয় খেলাধূলার জন্য। সে দিক থেকে আমাদের মনে হয়েছে খেলাধুলা করলে পড়ুয়াদের মন অনেক ভালো থাকে। যেভাবে নতুন প্রজন্ম মোবাইল, ড্রাগ অ্যাডিকশনে ভোগে সেখানে তাদের কাছে খেলাধুলাটা পৌঁছে দেওয়া উচিত বলে মনে করি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার না হয়েও একটা স্বচ্ছ সচ্ছল জীবন যে গড়ে তোলা সম্ভব সেটা তাদের বোঝানো উচিত। সেই মেসেজটা দেওয়ার জন্যই আমরা এই ক্রিকেট টিমটা নিয়েছি। আমাদের ফুটবল টিম এবার কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে উঠেছে। সেটা হচ্ছে অ্যাডামাস ইউনাইটেড ক্লাব। অ্যাডামাস স্কুলকে আমরা রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে পরিণত করেছি। সেখানে খেলাধুলার চারটি নার্সারি আমরা তৈরি করেছি। যাতে স্কুল থেকে পড়াশোনা করে কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে তারা পৌঁছতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা দাবা, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট এবং ফুটবল এই চারটি একাডেমি তৈরি করেছি।

এখানকার পড়ুয়ারা পড়াশোনার পাশাপাশি যদি সিএবির এই নতুন লিগে খেলার সুযোগ পায়। কলকাতা ফুটবল লিগে প্রথম ডিভিশনে খেলার সুযোগ পায়, সেটা তাদের কাছে বাড়তি অনুপ্রেরণা হবে।। সেই ভাবনা থেকেই এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।ক্রিকেট টিমের নাম অ্যাডামাস হাওড়া ওয়ারিয়ার্স। কোন ভাবনা থেকে এমন নাম? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই হাওড়া চেয়েছি, কারণ কলকাতা থেকে অনেক প্রাচীন ইতিহাস হাওড়ার সঙ্গে জড়িয়ে। হাওড়ার ইতিহাস পৃথিবীর অনেকেই জানেন কারণ, হাওড়াকে ইন্ডাস্ট্রির ম্যানচেস্টার বলা হত। হাওড়ার সঙ্গে আমি পুরুলিয়া-বাঁকুড়া এই দুটো জেলার মেন্টরশিপ নিয়েছি। আসলে পুরুলিয়া,বাঁকুড়া থেকে রাইসে অনেকেই পড়তে আসে। অনেকেই ব্লক লেভেল অফিসার, ডব্লিউবিসিএস অফিসার হয়েছেন রাইস থেকে পড়াশোনা করে। সেদিক থেকে আমার মনে হয়েছে সেটার একটা প্রাসঙ্গিকতা আছে। আর ওয়ারিয়র্স মানে তো যুদ্ধ, জীবন মানেই তো যুদ্ধ। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, তারপর কলেজ সব ক্ষেত্রেই একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধ থেকে যদি আমরা অনুপ্রাণিত হই, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা একটা সুস্থ জীবনযাপন করব।


তিনি বলেন, বাংলার ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য সিস্টেমকে ডেভলপ করা দরকার। স্বচ্ছতা আনা দরকার ক্রিকেট পরিচালনার ক্ষেত্রে। এই যে ফার্স্ট ডিভিশন থেকে সেকেন্ড ডিভিশন লিগ গুলো খেলা হয়, তাতে কোথাও যেন একটা আমরা আটকে গিয়েছি। অনেক কমিটি তৈরি হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। শেষ কয়েক বছরে ভাল খেলোয়াড় না পেলেও এটাও ঠিক মহম্মদ শামি ভাল খেলছে, সেও এখানকার খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা। মুকেশ সেও ন্যাশনাল টিমে খেলছে। আইপিএলে বাংলার দুতিন জন অন্য টিমের হয়ে ভাল খেলেছে। তাই এই ধরনের টুর্নামেন্ট যত বেশি খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে আশা করব তিন-চার বছরের মধ্যে বাংলায় আবার ভাল খেলোয়াড় তৈরি হবে। যে কোনও প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ উদ্যোগ না থাকলে ভালো ফল পাওয়া যায় না বলে আমি মনে করি। যদি স্বার্থন্বেষী মানুষের স্বার্থকে প্রায়োরিটি দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু অনেক ভালো উদ্যোগও লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। এটার ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।
