জয়িতা মৌলিক

ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে সব ময়দানেই কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে দুলাল দে-র (Dulal De)। তবে, ছবি পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন পিচে ব্যাট করতে নামলেন তিনি। আর শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে অভিষেক ম্যাচেই জিতে নিলেন দর্শকের মন। শুক্রবার সন্ধ্যে দক্ষিণ কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্সের ছবির প্রিমিয়ারে কলাকুশলীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas), CPIM নেতা শতরূপ ঘোষ (Shatarup Ghosh), অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী, দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, জয়জিৎ, সুমন, সংগীত পরিচালক সমীধ-সহ অনেকে।

শহরে নতুন গোয়েন্দা ‘অরণ্য চ্যাটার্জি’। তাঁকে পর্দায় নিয়ে এলেন দুলাল দে (Dulal De)। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অরণ্য-র প্রাচীন প্রবাদ’ মুক্তি পেল শুক্রবার। ছবির কাহিনী এবং চিত্রনাট্য দুটোই লিখেছেন স্বয়ং পরিচালক। খেলার মাঠে খবরের খুঁটিনাটি নিজের কলমে তুলে আনা দুলাল এবার গ্রাম বাংলার দৃশ্যপটে রচনা করলেন এক থ্রিলারের।

গোয়েন্দা গল্পের সব রসদই রয়েছে ‘অরণ্য-র প্রাচীন প্রবাদ’-এ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রজন্মের ২ হার্ট থ্রব জীতু কমল ও সুহোত্র মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়। তাঁদের যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। শিলাজিৎ, লোকনাথ- এঁদের অভিনয়ও নজর কেড়েছে।

সেলুলয়েড দুলালের কাছে নতুন নয়। এর আগে ‘গোলন্দাজ’ ছবিতে তিনি স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, অভিনয় করেছেন। গত তিন বছর ধরেই টালিগঞ্জের চিত্রনাট্য লেখায় হাত পাকিয়েছেন এই ক্রীড়া সাংবাদিক। পরিচালক হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে গোয়েন্দা গল্পেও মিশিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটকে।

ছবির প্রেক্ষাপট কলকাতা থেকে কিছু দূরে এক মফঃস্বল শহর পানাঘাট। সেখানে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে আসেন তরুণ ডাক্তার অমিত রায়। কিন্তু সততার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয় তাঁকে। এক বছরেও সেই মৃত্যুরহস্যের সমাধান হয়নি। সেই তদন্ত করতে আসেন সিআইডি আধিকারিক সুদর্শন হালদার। সঙ্গী হয় সুদর্শনের শ্যালক ডাক্তারি পড়ুয়া, ক্রিকেট খেলোয়াড় অরণ্য। তদন্ত যত এগোয়, ততই বোঝা যায় গ্রামের মানুষের কাছে ভগবান ছিলেন ডাক্তার অমিত। তাহলে কে সরালো তাঁকে? হাসপাতালের নার্স দেবযানীর সঙ্গে সম্পর্ক হয় অমিতের। বিয়ে করেন তাঁরা। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল বাদ দিয়ে স্থানীয় নার্সিংহোমে কাজ করতে রাজি ছিলেন না সৎ ডাক্তার। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, হাসপাতালের দুই সহকর্মী চিকিৎসক আর নার্সিংহোম মালিকদের চক্ষুশূল হয়ে পড়েন তিনি। শেষে পাওয়া যায় তাঁর বস্তাবন্দি ছিন্নভিন্ন দেহ।

নতুন গোয়েন্দা অরণ্য চ্যাটার্জির ভূমিকায় অসাধারণ জীতু কমল। ‘অরণ্য’র জন্য মহিলা ফ্যানের সংখ্যা আরও বাড়বে তা বলাই যায়। তবে ডাক্তারি পড়ুয়া হিসেবে তাঁকে একটু বয়স্ক লাগে পর্দায়। শিলাজিৎ-কে আগের ছবি ‘অযোগ্য’-তে যতটা ভালো লেগেছিল ‘অরণ্য-র প্রাচীন প্রবাদ’-এর সুদর্শনকে ততটা সাবলীল লাগলো না। একজন সিআইডি অফিসার হিসেবে যে স্মার্টনেসের দরকার ছিল তার খামতি ধরা পড়েছে শিলাজিতের অভিনয়ে।

অমিতের ভূমিকায় সুহোত্র আগাগোড়া সাবলীল। তাঁর এ যাবৎকালের কাজগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে প্রথম তিনে থাকবে ডাক্তার অমিতের চরিত্রটি। মিথিলা অভিনয়ে বরাবরই অন্তর্মুখী। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। চরিত্র অনুযায়ী যথাযথ তিনি। হাসপাতালের সুপারের চরিত্রে নজর কাড়েন লোকনাথ দে। তবে সুহোত্র ছাড়া সব চরিত্রেরই মেকআপ কখনও কখনও বেশ চড়া লাগে। দুটি চরিত্রে রয়েছেন কলকাতা ২ কাউন্সিলর- অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অয়ন চক্রবর্তী। হাসপাতালের সুপারের স্ত্রীর ভূমিকায় অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় পারফেক্ট। পেশায় আইনজীবী অয়ন পর্দাতেও সেই ভূমিকাতেই রয়েছেন। সুতরাং আলাদা করে আর অভিনয় করতে হয়নি তাঁকে। প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ে ক্যামেরায় গ্রাম বাংলার সবুজ দৃশ্যপট অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছে। ছবিতে গানের ভূমিকা তেমন না থাকলেও শুভদীপ গুহর মিউজিক ভালো।

ছবিতে খামতি বলতে চিত্রনাট্য। গোয়েন্দা কাহিনী হিসেবে আর একটু আঁটোসাঁটো হলে জমতো বেশি। তবে প্রথম ছবি হিসেবে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন দুলাল দে। থ্রিলার হিসেবে ছবির শেষ অংশ প্রশংসার দাবি রাখে। এই ছবির সিকুয়াল হলে জিতুর পাশাপাশি সুহোত্রকেও দর্শক আশা করবে।
