ফের বোমা হিন্ডেনবার্গের! আদানি কেলেঙ্কারিতে সরাসরি যোগ সেবি প্রধানের, নিন্দায় সরব তৃণমূল

ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ (Hindenburg Research)। এবার আদানি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল সেবি (Securities and Exchange Board of India (Sebi) -র। সংস্থার চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ (Madhabi Puri Buch) এর একটি বিনিয়োগ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে তার ইঙ্গিত দিতে গিয়ে হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছিল, ভারতে ফের বিরাট কিছু ঘটতে চলেছে। তার পরই রাতের দিকে বড়সড় বোমা ফাটাল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।

এক গোপন সূত্রে পাওয়া নথি এসেছে হিন্ডেনবার্গের। আর সেখানে এই বিনিয়োগের উল্লেখ আছে বলে অভিযোগ। আদানি গ্রুপের আর্থিক দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তাতে শুধু সেবির চেয়ারপার্সনই নয়, তাঁর স্বামীর নাম জড়িয়েছে। বিদেশী সংস্থায় তাঁদের বিনিয়োগের প্রমাণ মিলেছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে এই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টেই দাবি করা হয়েছিল, আদানি কীভাবে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে ভুয়ো কোম্পানি খুলে টাকা সরিয়েছে। শনিবার হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘আমাদের নজরে আগেই এসেছে সেবির চেয়ারপার্সনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ফলে তারা এটা নিশ্চিত ছিল যে আদানির যে কর্মকাণ্ড তাতে নজরদারির কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না যে সেবির চেয়ারপার্সন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কিছু গোপন ব্যাপার ছিল বারমুডা ও মরিশাস ফান্ড সম্পর্কিত ব্যাপারগুলি নিয়ে। দেখা গিয়েছে, ৫ জুন ২০১৫ সালে মাধবী ও তাঁর স্বামী ধাবাল প্রথম আইপিই প্লাস ফান্ডের ১-এর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। আর সেই ফান্ডের উৎস ছিল স্যালারি। দম্পতির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।’

হিন্ডেনবার্গের দাবি, মাধবী বুচ ও তাঁর স্বামী মরিশাস ও বারমুডার এমন সব ভুয়ো বিদেশি সংস্থায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন যাদের সঙ্গে গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির প্রত্যক্ষ যোগ ছিল। এই সব বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। তার পর ২০১৭ সালে সেবির পূর্ণ সময়ের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করা হয় মাধবী বুচকে। পরে ২০২২ সালে সেবির চেয়ারপার্সন হন মাধবী। এখানেই থামেনি হিন্ডেনবার্গ। তাদের দাবি, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট সংস্থার ব্যাপারে মাধবীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই সংস্থা ব্ল্যাকস্টোন নামে একটি কোম্পানিকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল, যাতে তাঁর স্বামী ছিলেন পরামর্শদাতা।

এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে সরব হলেন সুখেন্দু শেখর রায়। তিনি এই প্রতিবেদন তুলে ধরে লেখেন, ”হুইসেল ব্লোয়ার নথি প্রকাশ করেছে যে আদানি মানি সিফোনিং কেলেঙ্কারিতে ব্যবহৃত অস্পষ্ট অফশোর সত্তাগুলিতে সেবি-র চেয়ারপার্সনের অংশীদারি ছিল – হিন্ডেনবার্গ গবেষণা। সাংবিধানিক নৈতিকতার দাবি অন্তত এখন সুপ্রিম কোর্ট যেন জাতীয় স্বার্থে কাজ শুরু করে।”

সুস্মিতা দেব এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ”এখন আমরা জানি SEBI কেন হিন্ডেনবার্গ কেলেঙ্কারির পর ক্লিন চিট দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সবথেকে সবচেয়ে কাছের সংস্থাকে!”

সাকেত গোখেল নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ”এটি একটি বিস্ফোরক ঘটনা! SEBI-এর চেয়ারপার্সন কেন প্রতিনিধিত্ব সত্ত্বেও বিজেপির কথিত এক্সিট পোল-স্টক মার্কেট কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে অস্বীকার করেছেন সেই নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। এমনকি মুম্বইতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস ও জোট সাংসদের সাথে বৈঠক করার পরেও সেবির কোনরকম পদক্ষেপ না নেওয়ার পেছনে কারণ এবার স্পষ্ট৷”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ গত বছরের ২৪ জানুয়ারি আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার বিক্রির ঠিক আগে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। হিন্ডেনবার্গের (Hindenburg Research) ওই রিপোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ারের দামে হেরফেরসহ নানা অভিযোগ তোলা হয়। এমতাবস্থায়, আদানি গ্রুপ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। কিন্তু এই রিপোর্টের কারণে গ্রুপের মার্কেট ক্যাপ ১৫০ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। যার কারণে গৌতম আদানির সম্পদে ব্যাপক পতন ঘটে এবং তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় অনেকটা নিচে নেমে যান। যদিও, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আদানি গ্রুপের শেয়ারগুলি তাদের ক্ষতি অনেকাংশে পুষিয়ে নিয়েছে।

আরও পড়ুন- সরকারি চাকরি ফেরালেন অলিম্পিক্সে পদক জয়ী, মন দিতে চান শুটিং-এ

 

Previous articleআজও হল না ফয়সলা, ঝুলে রইল বিনেশের ভাগ্য
Next articleদুর্গাপুজোর খুঁটি পুজো অনুষ্ঠিত হল ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যাণ সমিতিতে