‘সোনার নীরজ’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

” ভিতরে এখনও অনেক থ্রো বেঁচে আছে । ৮৯ মিটার থেকে আরও এগোতে হবে । একটা জার্নিতে , একটা দীর্ঘ যাত্রায় আনন্দ থাকে , আবার দুঃখও থাকে । আমিও ব্যতিক্রম নই ।উপরওয়ালা যা দিয়েছেন , তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ ।‌ কিন্তু এখনও অনেক কিছু করা বাকি আছে । ”

” একদিক দিয়ে স্বস্তি এই যে , দেশের হয়ে পদক জিততে পেরেছি । কিন্তু খচখচানিটা যাচ্ছে না যে , সোনা হারালাম। আমার ভিতরে সবসময় এই বিশ্বাসটা ছিল যে , আমি পারবো । সোনা জিততে পারবো । নাদিম রেকর্ড থ্রো ( ৯০ মিটারের বেশি ) করার পরেও আমি হাল ছাড়িনি । ভিতর থেকে কেউ একটা বলছিল , তুমি পারবে , তুমিও পারবে ৯০ মিটারের উপরে ছুঁড়তে । অন্দর মে জোশ থা , কর দেঙ্গে । নব্বই মিটার কখনও পারিনি তো কী , আজ ঠিক করে দেবো । আজ ৯০ মিটার হলো না । কিন্তু একদিন হবে । খুব শিগগিরই হবে । জীবনের সেরা থ্রো এখনও করি নি আমি । তা আমার ভিতরেই থেকে গিয়েছে ।‌ একদিন সেটা বেরোবে । যতক্ষণ না বেরোচ্ছে , আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না । আজ আমার দিন ছিল না , নাদিমের ছিল । ”

” ফাউল থ্রো-র জন্য কোনো ব্যাঘাত ঘটে নি । আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল চোট , কুঁচকির এই চোট আমাকে বারবার ভুগিয়েছে। আমার মাথার মধ্যে ঘুরছিল চোটের ব্যাপারটা । চল্লিশ-পঞ্চাশ শতাংশ মন ওদিকে ঘুরে গিয়েছিল। অলিম্পিকের কথা ভেবেই অপারেশন করাই নি । মনে হয়েছিল চিকিৎসা করিয়ে চোটের মাত্রা কমিয়ে কাজ চালিয়ে দিই।‌ অপারেশন করালে যদি অলিম্পিক্সে নামতে না পারি ।

এবার আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে । ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলবো , যদি অপারেশন করতেই হয় , তাহলে করিয়ে নেবো । আর দেরি করতে চাই না । ” ” সোনা জিততে পারলাম না । জ্যাভলিন খুব চোট-আঘাত প্রবণ খেলা । শরীরের ওপর খুব ধকল যায় । যবতক চলেগা করেঙ্গে । হাতের ঝটকায় ৯০ মিটার পার করে দেবো ভেবেছিলাম । কিন্তু আজ হওয়ার ছিল না । ”

” আর্শাদ ( পাকিস্তানের জ্যাভলিন থ্রোয়ার ) খুব পরিশ্রম করেছে এই দিনটা দেখবে বলে । আমি ওর জন্য খুশি । ওকে অভিনন্দন জানানো উচিত সকলের । টোকিওতে আমি জিতেছিলাম , এখানে আর্শাদ জিতলো । খেলার মাঠ এ রকম। কখনও আমি জিতবো , কখনও আর্শাদ । মেনে নিতেই হয় ।”

এই হলো চ্যাম্পিয়নের কথা । চ্যাম্পিয়ন নীরজ চোপড়া , সোনার ছেলে । দেশের গৌরব। হরিয়ানার গ্রাম থেকে এসে অলিম্পিক্সে পরপর দু’বার সোনা ও রুপো জয়ী নীরজ । আজ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ইভেন্টে ভারতের কারও যে কৃতিত্ব নেই ।

আরও পড়ুন- আর জি কর সংলগ্ন এলাকায় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা কলকাতা পুলিশের

আর কি বললেন চ্যাম্পিয়ন ? ” যখনই সফল হই , মনে করার চেষ্টা করি কোথা থেকে এসেছি । কখনও তো ভাবিই নি এই জায়গায় বসে কথা বলবো একদিন । জানি না কীভাবে যেন সব হয়ে গেল ।”

৮৯.৪৫ মিটার ছুঁড়েছেন কুঁচকির ব্যথা সহ্য করে । সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে আরও বড়ো কিছু হতেই পারতো । নীরজের বয়স এখন ২৬ । চার বছর পর আবার অলিম্পিক্স । তখন নীরজের বয়স হবে ৩০ । অবশ্য এখনো রয়েছে সম্ভাবনার হাজার দরজা খোলা । স্তাদ দে ফ্রান্সে একটুর জন্য হলো না । কিন্তু চ্যাম্পিয়নের ভিতরে রয়ে গেল অসাধ্য সাধনের অসীম ক্ষমতা , জেদ , নিষ্ঠা , নিবিড় একাগ্রতা ও অপ্রতিরোধ্য প্রত্যয় । আমরা কোটি কোটি ভারতবাসী স্বপ্ন দেখি , লস এঞ্জেলেস অলিম্পিক্সে বর্শা হাতে ছুটতে শুরু করেছেন আমাদের সোনার ছেলে নীরজ। রানওয়ে ধরে ছুটছেন তিনি বর্শা হাতে। মনে উদ্যম , বুকে প্রত্যয় । সঙ্গে চ্যাম্পিয়নের গর্ব , দেশের জন্য সোনা ফিরিয়ে আনার তীব্র জেদ , স্বপ্ন , একবুক আকাঙ্ক্ষা।

এত কামনা এত সাধনা কখনও ব্যর্থ হবার নয় । ছুটছেন নীরজ , ছুটছেন দুরন্ত গতিতে , নীরজ তো নয় , যেন ছুটছে একটা খোঁচা খাওয়া রক্তাক্ত , ক্ষতবিক্ষত বাঘ । রানওয়ের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে একটা দুর্দান্ত ঝাঁকুনি দিয়ে হাতটা পিছনে টেনে তীব্র এক ঝটকায় মহাশূন্যে ছুঁড়ে ফেললেন বর্শাটা । এবার ?

বর্শাটা যেন পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে চলেছে দূর থেকে দূরে , ওই তো, মহাশূন্যেই ৯০ মিটার , ৯২ মিটার পেরিয়ে কোথায় চলেছে আজ নীরজের প্রিয় বর্শা , আমাদের স্বপ্নসাধ , আশা-আকাঙ্খা ? ওই তো , আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি , নীরজের বর্শা মাটিতে পড়ার আগেই মহাশূন্যে ছুঁয়ে ফেললো স্বপ্নরেখা , এখনও উড়ছে , আমরা দেখে ফেলেছি এক অন্তহীন জ্যাভলিন থ্রো , যা সমস্ত কাঁটাতার অতিক্রম করে , সমস্ত সীমানা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে অসীমের পথে । আহ্ , এটা দেখার জন্যেই তো আমরা রাত জাগছি , তুমি শুনতে পাচ্ছো নীরজ ? তুমি কি শুনতে পাচ্ছো তোমাকে ঘিরে আমাদের জয়ের উল্লাস ?

 

 

 

Previous articleআর জি কর সংলগ্ন এলাকায় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা কলকাতা পুলিশের
Next articleBreakfast news : ব্রেকফাস্ট নিউজ