ভাবছেন আর জি কর-কাণ্ডে সরকার বিপাকে পড়ছে? ভুল শুধরে নিন: বার্তা WEBCUPA-র

ব্যাখ্যা দিয়ে জানালেন বাংলার অধ্যাপকরা। একই সঙ্গে তাঁদের বার্তা ভুল শুধরে নিন

আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ-খুনে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সব মহলে। চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। কিন্তু মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিরোধীরা। সঙ্গে একশ্রেণির নেট নাগরিক। এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যে আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার বিপাকে। কিন্তু এর কোনও ভিত্তি নেই। ব্যাখ্যা দিয়ে জানালেন বাংলার অধ্যাপকরা। একই সঙ্গে তাঁদের বার্তা ভুল শুধরে নিন

WEBCUPA-র পক্ষে থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়,
“আমাদের মধ্যে অনেকেরই মনে হচ্ছে এই আরজিকর কান্ডে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল বিপাকে পড়েছে। এই ধারণা ছড়ানো হচ্ছে।জনমানসে, মধ্যবিত্তের মাঝে তৃণমূল বিশ্বাস হারিয়েছে। এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে।আমাদের মনে হয় আমাদের শহরকেন্দ্রিক, সমাজমাধ্যম সর্বস্ব, উনিশশতকীয় ভুয়ো ভাঁওতা রেনেসাঁ বিশ্বাসী মনের প্রতিফলন এটি।আমাদের ব্যক্তিগত ধারণার ফসল। মাটি বিচ্যুত সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল একটি ভাবনা। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের মৃত্যু (বীভৎস, নারকীয় ঘটনা ও মৃত্যু) নিয়ে কাঙালিপনা আর হাহাকার। যারা সবাই অলস জীবনে, দেরিদার ভাষায় ইভেন্ট খুঁজি বেড়ায় তাদের বেহায়াপনা। গালভরা কথায় resonate করেছে, তাই রাস্তায় এইসব বলেন। আসলে এটাকে মনস্তত্ত্বের ভাষায় ফ্যাড(fad) বলে। রিয়ালিটি অন্য কথা বলে। গ্রাম বাংলার চিত্র ভিন্ন। এখন চাষের মরশুম। বর্ষার সময়। সবার মুখে ওই ভাত ও সবজি তুলে দেওয়ার কাজে তাঁরা ব্যস্ত। বিনিময়ে তাঁদের রুজি হয় হয়তো। কিন্তু জীবনদায়ী বস্তুর কোনো বিনিময় মূল্য হয় না। যাঁদের শহরে কাজের লোক আছে, মাস মাহিনার নিশ্চিত জীবন আছে, এই ভয়ংকরতম মানবতাবিরোধী ঘটনা নিয়ে তাঁরা মিডিয়া সাথে নিয়ে বিলাসিতা দেখাতে পারেন। মনে মনে ঘটনার পুনর্নিমাণ করেন, ড্রয়িং রুমে নিজেদের হোমে বসে বড় বড় হোম হয়ে উঠছেন। আসলে ওটা একটা রিপ্রেসড যৌনতার চূড়ান্ত সেডিজিম। হ্যাঁ ঘটনার তিনদিন পরে স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে একটি আড়াল থেকে সংগঠিত মুখোশধারী মাকু কিছু স্বতস্ফূর্ত মানুষকে ভিড়ে ঠেলে নিজেদের ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছিলেন মধ্যরাতে। তারপর থেকে পুরোটা রাজনৈতিক খেলা। রামেরা ঘাবড়ে আছে বামেরা বুঝি বেশি স্কোর করলো, আবার মাকুরা ভাবছে শূন্যের মহিমা কীর্তন করতে গিয়ে আমরা পিছিয়ে পড়লাম না তো! এর ফলে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার আমদানি হয়েছে, আর যার শিকার প্রতিদিন আম জনতা অফিস যাওয়া কিংবা ফেরা, বিশেষত ফেরার সময় হচ্ছেন, যাঁদের বাসে ট্রেনে যাতায়াত একটু কান পাতলেই শুনতে পাবেন। এখন এই ফেসবুকীয় হয়াটসঅ্যাপি মানুষজন একটু জেগে উঠেছেন, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমাদের বাংলায় যে স্বদেশী আন্দোলনের হুজুগ উঠেছিল, ঠিক ওই একই রকম কায়দায়, মিছিল আয়োজন করছেন। মিছিলে যোগ দিতে হয়, না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়, তার ডিপি দিতে হয়, স্ট্যাটাস দিতে হয়, ডিপিতে কখনও প্রতিবাদী আলো মোমবাতি আবার কখনও আলো নিভে গেছে নিস্তেল অন্ধকার দেখাতে হয়। রাস্তায় না বেরোলে ঠিক ঠিক প্রতিবাদী হওয়া যায় না। আপনাকে ভার্চুয়ালে সমাজে একঘরে করে দেওয়া হবে। তার ভয় আছে। সবই ওই স্বদেশী সময়ের দৃশ্য, ছবি। সবাইকে দৃশ্য হয়ে উঠতে হবে। অতএব নিজের হিপোক্রিসি লুকিয়ে রেখে শিশুদের শিক্ষার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল পোশাকে মিছিল সামিল করা হচ্ছে। আসলে দৃশ্য বানানো হচ্ছে, যাতে ফিকে না হয়ে যায়। সদ্য বাংলাদেশী ঢঙে স্টুডেন্টসদের সামনের ইঞ্জিন বানিয়ে পেছনের ইঞ্জিন ফুয়েল যোগাচ্ছেন। আর স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে অনিলায়নের ফলে যে বশংবদ দলদাসদের তিন দশকের বেশি সময় এবং এই জমানাতেও চাকরি দেওয়া হয়েছিল, তারা গলা ছেড়ে দালালি করছে।আর আমরা যাঁরা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, পড়াই, এঁদের আওয়াজই আমাদের কানে বেশি পৌঁছাচ্ছে, আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু সার্কেলে এদের সংখ্যাই বেশি। তাই মনে হচ্ছে গেলো গেলো। আর মধ্যবিত্ত। ওটা তো একটা মানসিকতা ওটা টাকা দিয়ে হয় না, যদিও বিত্ত কথাটা ওর সাথে জড়িয়ে আছে বলে অনেকে প্রায়শই ভুল করেন। ওখানে কিছু ভ্যালুস আছে, যা আমাদের কোহেসিভ হতে শেখায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখায়। ধর্ষণ নিয়ে ধ্যাস্টামো করতে শেখায় না। রুচির অবনমন।
একটু গ্রামে আসুন, মেয়েরা মায়েরা ভালো আছে। গত একদশকের বেশি সময় ধরে যে সামাজিক পুনর্গঠন হয়েছে, সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে যে সুষম উন্নয়ন হয়েছে, মানুষ তাতে সুখে আছে। তৃণমূলের সাথে আছে, দিদির সাথে আছে, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আছে, অভিষেক ব্যানার্জির সাথে আছে। কেউ আড়াল করে নি, কাউকে আড়াল করে নি, সত্য উদঘাটিত হোক আমরাও সবাই চাই। প্রথম থেকেই চাই। ফেক নিউজে না থেকে সত্যিটা খুঁজুন। রেপ কেসের আসামি খুঁজতে এসে রামাকুদের সুবিধে করিয়ে দেওয়ার জন্য সময় কিল করে বস্তা পচা দুর্নীতির অনুসন্ধানে ঠেলে দেবেন না। মাকুরা মৃত্যুদণ্ড বিরোধী আর বিজেপির শাসনে রেপের আসামি হাত ফস্কে জল ডুবে মারা যায়। এসব মানুষ জানে। মনীষা অন্তর্ধান এখনও সন্ধান নেই। ধানতলা বানতলা আরো অনেক মানুষ ভোলে নি। ইতিহাসের পাতায় ফুটনোট হওয়ার আগে মাকুদের ছটফটানি বেশ ভালো লাগছে।

গ্রামবাংলার মেয়েরা লক্ষ্মীর ভান্ডারের সাথে আছে, বাজার গরম করে লাভ নেই। জ্বালা আমরা বুঝি, ভোটের সময় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাড়িয়ে দেবো, আর হেরে গিয়ে মাস্টার স্ট্রোকের বিরোধিতা করবো। এসব পুরোনো খেলা আর খেলবেন না। মানুষের পাশে যান মানুষকে বুঝুন সাথে থাকুন , তাতেই রাজনৈতিক স্কোর বাড়বে। খুনির কথা , হতভাগ্য মেয়েটির কথা না বলে কলকাতা তথা বাংলাকে হারিয়ে দেওয়ার, বদনাম করার চক্রান্ত ধরা পড়ে গেছে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচে। চক্রান্ত করে সেই ব্যবস্থাকে অচল করলে গ্রাম শহরের সাধারণ মানুষ আপনাদের ছাড়বে না। এই ফেকু আন্দোলনের বিসর্জনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। শুধু কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রফেসরস অ্যাসোসিয়েন
WEBCUPA”

 

Previous articleসাতসকালে হাইওয়েতে বাস আটকে গুলিবৃষ্টি! পাকিস্তানে খুন ২৩ যাত্রী
Next articleঅভিষেক-কন্যার উদ্দেশে জঘন্য হুমকি! গর্জে উঠল তৃণমূল, স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ শিশুসুরক্ষা কমিশনের