নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিতেই মহিলা হেনস্থা, গর্জে উঠল বাংলা বিনোদন জগত

বিনোদন জগতে (Entertainment Industry) প্রতিমুহূর্তে চলছে যৌন হেনস্থা, মহিলাদের সুরক্ষা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার নিজেদের ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধেই সরব বাংলা সিনেমা, সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ এবং নাট্য জগতের মহিলা কলাকুশলীরা। আর জি কর হাসপাতালে (RG Kar hospital) কর্মরত অবস্থায় চিকিৎসক তরুনীর ধর্ষণ খুনের ঘটনায় মহিলা সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন যেভাবে মেয়েদের হেনস্থার শিকার হতে হয় তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি প্রত্যেকেই। সমস্যা শুধু বাংলার নয় গোটা দেশের। যারা কলকাতায় চিকিৎসক ধর্ষণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন, পথে নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন, রাত তখনই অংশ নিয়েছিলেন এবার সেই বিনোদন জগতের শিল্পীরাই নিজেদের ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন। নারী সুরক্ষার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরব হওয়ার পাশাপাশি এবার উইমেন ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কার্সের (WFSW) তরফে বাংলা বিনো দুনিয়ার (টেলিভিশন, ওটিটি এবং সিনেমা) কলাকুশলীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ দাবি সহ চিঠি দেওয়া হল রাজ্য সরকারের টেলি অ্যাকাডেমির (Tele Academy, Government of West Bengal) চেয়ারম্যানকে। পাশাপাশি চিঠি দেওয়া হয়েছে ফেডারেশন গিল্ড (FCWTEI), ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন পিকচার্স আর্টিস্ট ফোরাম (West Bengal Motion Pictures Artist Forum) এবং ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনকেও (Eastern India Motion Pictures Association)।

জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করা মহিলাকে হেনস্থা করার অভিযোগ প্রযোজক অভিনেতার বিরুদ্ধে। আবার মালায়ালাম ছবিতে কাজ করতে গিয়ে কী ভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছিল শ্রীলেখা মিত্রকে, অভিনেত্রীর নিজেই তা জানিয়েছেন। সোমবার তিনি কোচি সিটি পুলিশ কমিশনারের কাছে মালয়ালি পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে টলিপাড়ার অন্তরে যেভাবে মহিলা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে কলাকুশলীদের কীভাবে পণ্য হিসেবে দেখা হয়, তাঁদের যৌব হেনস্থার শিকার হতে হয় তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী (Ritabhari Chakraborty) । এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। এবার স্টুডিও পাড়ায় মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এবং ফোরামকে চিঠি দিলেন অপর্ণা সেন (Aparna Sen), শাশ্বতী গুহ ঠাকুরতা, চৈতালি দাশগুপ্ত, অনুরাধা রায়, শকুন্তলা বড়ুয়া, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta), সোহিনী সরকার (Sohini Sarkar ), স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়-সহ টালিগঞ্জের সব অভিনেত্রীরাই। বাদ যাননি লেখিকা, হেয়ার স্টাইলিস্ট, সিনেমাটোগ্রাফার-সহ নাট্য জগতের ব্যক্তিত্বরাও। চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত যে নিয়মের কথা আইনে রয়েছে তার বাস্তব প্রতিফলন স্টুডিও পাড়ায় দেখা যায় না। প্রতিদিনই শিশুশিল্পী থেকে শুরু করে টালিগঞ্জের একাধিক নতুন – পুরনো অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। তাই WFSF এর দাবি —

  • PoSH Act অনুযায়ী টেলি অ্যাকাডেমি, ফেডারেশন এই ধরনের কোনও অভিযোগ পেলে কী পদক্ষেপ করবেন তা স্পষ্ট করে সকলের সামনে আসা উচিত
  • শুধু শহর নয় জেলা স্তরেও সকল কর্মীদের LCC ( Local Complains Commette) সম্পর্কে অবগত করতে হবে
  • PoSH পলিসি সম্পর্কে সকল কর্মীদের অবগত করতে হবে
  • যৌন নিগ্রহের অভিযোগ পেলে মহিলা শিল্পীর পরিচয়ের গোপনীয়তা বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিষয়টির কিনারা করতে হবে
  • কাজ পাইয়ে দেবার নাম করে যৌন সুবিধা ভোগ করার মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে।
  • শিশুদের উপর যৌন অত্যাচার বা কোন ধরনের পর্নোগ্রাফির কাজে নাবালিকাদের ব্যবহার করা হলে দ্রুত পুলিশকে (Special Juvenile Police Unit) জানাতে হবে।

মালায়ালাম সিনে জগত নিয়ে হেমা কমিটির রিপোর্টের কথা তুলে ধরে চিঠিতে লেখা হয়েছে যে বাংলা বিনোদন জগতের ক্ষেত্রেও মহিলাদের যৌন হেনস্থা বা নিগ্রহ ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। তাই প্রত্যেক দিনই এমন অভিজ্ঞতার শিকার হন টলি, টেলি এবং নাট্যজগতের শিল্পীরা। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি করেছেন উইমেন ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কার্সের সদস্যরা।


Previous articleসাঁতরাগাছিতে পুলিশকে ইট-লাঠি! ‘বিজেপির গুণ্ডাদের’ শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ পুলিশের
Next articleহাওড়া ব্রিজের দু-দিক থেকে ইট-লাঠি নিয়ে হামলা আন্দোলনকারীদের, রক্তাক্ত পুলিশ