লজ্জা ‘দল’ বদলাও! আত্মপরিচয় প্রকাশ করে ধর্ষিতা গিজেলই সাহসের প্রতীক

গোটা দেশ তাঁর সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়ে পথে বেরিয়েছে। আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহও হয়েছে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে

একদিন বা দুইদিন নয়, প্রায় এক দশক ধরে লাগাতার ধর্ষিতা হয়েছেন। অজানা অচেনা পুরুষদের লালসার শিকার হয়েছেন। নেপথ্যে তাঁর স্বামী। মাদক খাইয়ে ঘরে অচেনা পুরুষদের ডেকে ধর্ষণ করিয়েছেন নিজের স্ত্রীকে। সেই ধর্ষণের ভিডিও তুলেছেন নিজে। এরকম বিকৃত লালসার স্বামীর বিরুদ্ধে শুধু আদালতে গিয়েই থেমে থাকেননি ফ্রান্সের গিজেল পেলিকট। নাম প্রকাশ করে গোটা সমাজকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, লজ্জাটা ধর্ষিতার নয়। ধর্ষকদের।

ফ্রান্সের অ্যাভিগনন শহরের আদালতে যখন সদর্পে পা রাখেন ৭২ বছরের গিজেল, সঙ্গী থাকেন তাঁর সন্তান, নাতি-নাতনি ও আইনজীবীরা। আদালতে উপস্থিত জনতা বা সাংবাদিকদের দিকে তাঁর কোনও ভ্রুক্ষেপই থাকে না। তাঁর একার অপরাধীর সংখ্য়াই ৫১ জন, যার মধ্য়ে রয়েছেন স্বামী ডমিনিক পেলিকটও। পুলিশের হাতে উঠে আসা ভিডিওতে এরকম অভিযুক্তের সংখ্যাটা ৮৩, যার মধ্যে মাত্র ৫০ জনকে পুলিশ সনাক্ত করতে পেরেছে।

আদালতেই দশ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে হওয়া নারকীয় অত্যাচারের কাঁটাছেঁড়া হয়। কখনও কখনও তুলে ধরা হয় সেই সময়ের ভিডিও। তারপরেও দমিয়ে রাখা যায়নি গিজেলকে। সমাজের চোখে ধর্ষিতাদের পরিচয় যে লজ্জিত হয়ে থাকার নয়, তা তিনি প্রমাণ করেই ছাড়বেন। স্বামী তাঁকে মাদক খাইয়ে পরপুরুষদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, এই লজ্জা তাঁর থেকেই সেই পুরুষ সমাজের যারা সেই সুযোগ নিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যা প্রমাণ করতে গিয়ে আজ তিনি নিজেই ফ্রান্সের নতুন আইডল।

শুধুমাত্র গিজেল নন, তাঁর স্বামীর বিকৃত লালসার শিকার তাঁদের মেয়েও। যদিও মেয়েকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ স্বীকার করেননি ডমিনিক। তবে গিজেলের সঙ্গে সব অপরাধই যে তাঁর কীর্তি তা আদালতের সামনে তিনি স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত ৫০ জন পুরুষের মধ্যে অনেকেও নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন। তাঁদের অনেকের স্ত্রী এই নিয়ে আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন।

এত বড় ঘৃণ্য ঘটনা সামনে এসেছে এবং তার সঠিক বিচার পাওয়া গিজেলের পক্ষে সম্ভব হয়েছে, যখন তিনি তথাকথিত লজ্জার পর্দা সরিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন। গোটা দেশ তাঁর সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়ে পথে বেরিয়েছে। আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহও হয়েছে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে। এই মামলা সামনে আসার পরে ফ্রান্সের চিকিৎসকদের দাবি শুধুমাত্র ২০২২ সালেই ১২২৯ জন মহিলা দাবি করেছিলেন মাদক খাইয়ে ধর্ষিতা হওয়ার। কিন্তু প্রকাশ্যে না আসায় সেই সব মামলা ঠাঁই পায়নি। গিজেল শুধু নিজের পরিচয় প্রকাশ করে সাহসিকতারই পরিচয় দেননি, ধর্ষকদের অপরাধের লজ্জা উপলব্ধি করিয়ে ধর্ষিতাদের প্রকাশ্যে আসার সাহসও জুগিয়েছেন, দাবি ফরাসি মহিলা সংগঠনগুলির।

Previous articleহিজাব না পরায় মহিলাকে কান ধরে ওঠবোস! বাংলাদেশে নারী সুরক্ষা প্রশ্নচিহ্নে
Next articleসঞ্জয়ের জামাকাপড় বাজেয়াপ্ত করতে কেন এত সময় লাগল? জানতে চাইছে সিবিআই