অভয়ার নামে তোলা বিপুল অর্থ কি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য? আশঙ্কা প্রকাশ নয়া সংগঠন WBJDA-এর

থ্রেট কালচারের অভিযোগ তুলে তাঁদের মেডিক্যাল কলেজে থেকে সাসপেন্ড-বহিষ্কার করা হয়। পরে কলকাতা হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে কলেজ কর্তৃপক্ষের সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ পড়ে। কিন্তু কেন তাঁরাই টার্গেট হলেন? শনিবার, কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে এর ব্যাখ্যা দিলেন নবগঠিত সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশন’ (West Bengal Junior Doctors’ Association)-এর সদস্যরা। একই সঙ্গে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন অভয়ার নামে তোলা কোটি কোটি টাকা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। পাশাপাশি, আর জি করে অনিকেত-বাহিনীর হাতে হেনস্থা ও হুমকির মুখোমুখি হওয়ারও অভিযোগ করেন এই জুনিয়র ডাক্তাররা। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে শুধু আর জি কর নয়, সাগর দত্ত, মুর্শিদাবাদ, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররাও কলেজে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতার্দশের ‘দাদাদের’ দ্বারা কোণঠাসা হওয়ার অভিযোগ তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, আজ যাঁরা থ্রেট কালচারের অভিযোগ জানাচ্ছেন তাঁরাই আদতে হুমকি সংস্কৃতি চালাচ্ছেন কলেজে। এদিন নাম করেই অনিকেত মাহাতর বিরুদ্ধে সরব হন বেশিরভার চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। একই সঙ্গে অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতেও আওয়াজ তোলে WBJDA।সাংবাদিক বৈঠকের প্রথমেই গত ৯ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ঘটে যাওয়া নৃশংস-নারকীয় ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। এই ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় CBI অতি দ্রুত তদন্ত করে কে বা কারা দোষী তাদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করুক- এই দাবিও জানানো হয়।এর পরেই অনিকেতদের আন্দোলনে দেওয়া টাকা উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলে WBJDA। তারা প্রশ্ন তোলে, অভয়ার নামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে মাধ্যমে যেভাবে টাকা তোলা হয়েছে তার উৎস কী? WBJDA-এর সদস্যদের অশাঙ্কা এই টাকা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য তোলা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন বা কেন্দ্রীয় সংস্থা এই টাকার উৎস তদন্ত করুক- সাংবাদিক বৈঠক থেকে দাবি জানান শ্রীশ, প্রণয়, সৌরভ, অতনু, অরিত্ররা।

এরপরেই এই চিকিৎসকরা জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন অভয়ার ন্যায় বিচার দাবির পাশাপাশি হাসপাতালে পরিষেবা সচল-স্বাভাবিক থাকুক। WBJDA-র সদস্য শ্রীশ, প্রণয়, সৌরভ, অতনুদের মতে, এতে বাংলার মানুষের সমর্থন আরও বেশি করে তাঁদের আন্দোলনের পক্ষে থাকত। কিন্তু এই আন্দোলনের তথাকথিত হোতারা সেটা চাননি বলে অভিযোগ এই জুনিয়র ডাক্তারদের। আর তার পরেই ওই ৫৪জন জুনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে কলেজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়।

WBJDA-র থ্রেট কালচারের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছিল। রাজনৈতিক মদতপুষ্ট তদন্ত কমিটির দ্বারা বহিষ্কার/সাসপেন্ড করা যাবে না বলেও জানান জানান WBJDA-র সদস্যরা। একই সঙ্গে এই বিষয়ে প্রাক্তন বিচারপতিদের নিয়ে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে তদন্তের দাবি জানান তাঁরা।

একই সঙ্গে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের মতোই প্রতিটি হাসপাতালে শূন্য বেডের সংখ্যা ও কোন কোন ওষুধ উপলব্ধ আছে তা সাধারণ মানুষের কাছে ডিজিটাল ভাবে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত রেফারেল সিস্টেম কার্যকর করার দাবি জানায় WBJDA। তাদের দাবি, হাসপাতালের সব কাজ টেন্ডারের কাজ স্বচ্ছ ই-টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে।

অতি শীঘ্রই সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে WBJDA গণকনভেনশনের ডাক দেবে বলে জানানো হয়। তাদের মূল দাবি, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে তিলোত্তমার ন্যায় বিচার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি। আর আন্দোলনের নামে কেনও পরিস্থিতিতে রোগীর পরিষেবা বন্ধ নয়।

এই সংগঠন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তবে তিনি জানান, এরা সকলেই জুনিয়র ডাক্তার, কৃতি ছাত্র। সকলেই জয়েন্ট দিয়ে বা দক্ষতার পরিচয় দিয়ে ডাক্তারি পড়েছে। তাঁদের মধ্যে থেকে কেউ ফ্রন্টের নামে আছেন। কেউ অ্যাসোসিয়েশনের নামে আছেন। ফলে ওনারা কিছু বলছেন। এনারা কিছু বলছেন। আমরা নিশ্চিতভাবে সবাই সব খবর রাখছি। কিন্তু তরুণ ডাক্তারদের মত পার্থক্য একেবারেই তাদের fraternity-র ব্যাপার। তবে রাজ্য সরকার সব সময়ই দুটি বিষয়ে পরিষ্কার। আর জি করের তিলোত্তমার ন্যায় বিচার। অন্যটি পরিকাঠামো বাড়ানো। সেই বিষয়ে কাজ হচ্ছিলই। এখন আরও দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে তৃণমূলনের সম্পর্ক নেই। আরেকটি সংগঠন যারা করছিলেন সেখানে অন্য একটি ছাত্র সংগঠন থেকে আসা লোক ছিলেন। তাঁরা অন্যদের দিকে আঙুল তুলতে পারেন না।