হুড খোলা জিপ, চোখে রোদ চশমা, মাথায় বাহারি হ্যাট। কখনও অসম, কখনও তামিলনাড়ু বা কখনও জিম করবেট ন্যাশানাল পার্ক। নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) একপাল চিত্রগ্রাহকদের নিয়ে মনের আনন্দে জাঙ্গল সাফারি করেছেন সর্বত্র। অথচ এই সব জঙ্গলে বন্যপ্রাণের অবস্থা যে আদৌ ভালো নয়, তা দেখতেই ভুলে গিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ফল হাতেনাতে। বিশ্বে প্রকৃতি রক্ষায় ভারতের অবস্থান শেষের দিক থেকে পাঁচ নম্বরে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় ভারত ১৭৬ নম্বরে।

ইজরায়েলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষণে তৈরি নেচার কনসার্ভেশন ইন্ডেক্স (Nature Conservation Index) সমীক্ষা চালু করে গোটা বিশ্ব জুড়ে। তাঁদের প্রথম সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ভারতের জমি ব্যবহারের (land management) পদ্ধতি খুব খারাপ। সেই সঙ্গে জীববৈষম্য ভারতে চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার জেরেই ভারত ক্রমতালিকায় এতটা নিচে নেমে গিয়েছে। তবে মূলত এই দুই মাপকাঠিতে ভারতের অবস্থান তলানিতে গেলেও, এই দুই মাপকাঠির জন্য বাকি মাপকাঠিগুলিও নিচে নেমে গিয়েছিল।

মূলত জমি, জীববৈষম্য (bio diversity), ক্ষমতা ও পরিচালনা (capacity and governance) এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা (future trends) – এই মাপকাঠিগুলির বিচারে বিশ্বের ১৮০টি দেশের পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ রক্ষা নিয়ে সমীক্ষা চালায় ওই সংস্থা। ভারতে প্রতিনিয়ত যেভাবে জঙ্গলের জমি দখল, শিল্পের সম্প্রসারণ ও জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের (pesticide) প্রয়োগের কারণে কমছে জঙ্গল, তা উঠে এসেছে সমীক্ষায়। বর্তমানে গোটা দেশের মাত্র ৭.৫ শতাংশ জমি ও ০.২ শতাংশ জলভাগ বন্যপ্রাণ ও প্রকৃতির জন্য সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ধার্য রয়েছে।

জঙ্গল এলাকার জমি কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বন্যপ্রাণের উপর। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গোটা দেশের সবুজে ঢাকা (tree cover) এলাকার ২৩,৩০০ স্কোয়্যার কিলোমিটার মুছে গিয়েছে। এমনকি ঘাস জমি কমে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে প্রবাল প্রাচীরের (coral reef) চরিত্রও। ৬৭.৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের জলের প্রাণী ও ৪৬.৯ শতাংশ বিভিন্ন প্রজাতির স্থলের প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই কারণেই জীববৈষম্য ক্রমশ ভারতে বিপদের মুখে পড়েছে। যে কারণে জীববৈষম্যে ভারত ১০০ নম্বরের মধ্যে মাত্র ৫৪ অর্জন করেছে।
