Saturday, August 23, 2025

‘ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি’, উৎপল সিনহার কলম

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

‘ মন্দ বলে লোকে , বলুক না
হিংসে করে জ্বলে , জ্বলুক না’

মন্দ লোকে বলে , ডাকওয়ার্থ – লুইস পদ্ধতি নাকি অনেকটা গণতান্ত্রিক-কেন্দ্রিকতা-র মতো । গণতন্ত্র বোঝা যায় , কেন্দ্রিকতাও বোঝা যায় , কিন্তু দুটো মিলে যা হয় তা নাকি স্বয়ং ভগবানও বুঝতে পারেন না !
একবার এক বিখ্যাত ক্রিকেটারের কাছে এই ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি নিয়ে জানতে চান বেশ কয়েকজন সাংবাদিক । জবাবে সেই ক্রিকেটার বলেন , ডাকওয়ার্থ তাঁর জানা , লুইসও জানা , কিন্তু এই দুইয়ে মিলে ঠিক কী হয় তাঁর জানা নেই ।‌ তবে হ্যাঁ , তাঁর পরিচিত আরেক খ্যাতনামা ক্রিকেটার নাকি খুব ভালো বলতে পারবেন এই ব্যাপারটা । এই কথা শুনে সাংবাদিকেরা সঙ্গে সঙ্গে ছোটেন সেই খ্যাতনামার বাড়িতে । গিয়ে দেখেন বিরাট একটা তালা ঝুলছে সেই বাড়ির দরজায় । তাঁর বাড়িতে সাংবাদিকদের আসার খবর সম্ভবত তিনি অনুমান করেছিলেন । তো , এই হইলো গিয়া ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়ম ! কেউ জানে না এটা খায় না মাথায় দেয় । দুর্জনেরা যা বলে বলুক । কিন্তু ব্যাপারটা তো একটু কালটিভেট করতে হয় । এটা ঠিক কতটা জটিল তা নিয়ে একটু তদন্ত করা তো যেতেই পারে ক্রিকেটপ্রেমীদের কথা ভেবে ।

১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সময় পরিসংখ্যানবিদ ফ্রাঙ্ক ডাকওয়ার্থ এবং টনি লুইস মিলে একটি পদ্ধতি তৈরি করেন , যা বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচগুলির মিমাংসায় সহায়ক হবে । মূল কথা হলো , ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি ( ডি এল এস মেথড ) একটি গাণিতিক ফর্মুলা , যা আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত সীমিত ওভারের ক্রিকেট ম্যাচে দ্বিতীয় ব্যাট করা দলের জন্য লক্ষ্য ( স্কোর ) নির্ধারণ করে দেয় । পরবর্তীতে অস্ট্রেলীয় অধ্যাপক স্টিভেন স্টার্ন এই পদ্ধতির আরও সংস্কার করেন । তাই ২০১৪ সালে এই পদ্ধতির নব নামকরণ হয় ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথড বা পদ্ধতি ।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বৃষ্টিবিঘ্নিত সেমিফাইনালে একেবারে জেতা ম্যাচটি হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা । গোটা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় একটি সিদ্ধান্তে এবং প্রচুর সমালোচনা হয় । ধিক্কার জানানো হয় এই ডি এল এস মেথডকে । শুরু হয় বিতর্ক । ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এক পর্যায়ে মাত্র ১ বলে ২১ রান করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় । অথচ ১ বলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬ রান তোলা যায় । নির্দিষ্ট সময়ে খেলা শেষ হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রানের । কিন্তু কিছুক্ষণের বৃষ্টির ফলে তাদের ১ বলে ২১ রান করার অসম্ভব একটা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় , যা ক্রিকেটবিশ্বে স্থায়ী এক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায় । এখান থেকেই নতুন ভাবনা আসে এবং বিতর্কের অবসানের লক্ষ্যে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির উদ্ভাবন হয় ।

২০০৮ সালে ভারত বনাম ইংল্যান্ড একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে বৃষ্টির ফলে দু’দফা খেলা বন্ধ থাকে। এই খেলায় ভারত ২২ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৬ রান করে । পরে ডিএলএস মেথডে ইংল্যান্ডকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ২২ ওভারে ১৯৮ রান । ২০১১ সালে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে দু’বার হানা দেয় বৃষ্টি । ফলে ৫০ ওভারের ম্যাচটিকে নিয়ে আসা হয় ৪৬ ওভারে । দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫০ রান করে । পরে আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হয় ম্যাচ এবং ডিএলএস মেথড অনুসরণ করা হয় । ভারতকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ২৬৮ রানের । ভারত এই ম্যাচে ২৩৪ রানে অলআউট হয়ে যায় এবং ৩৪ রানে ম্যাচটি হেরে যায় ।

এখন টি-২০ ম্যাচেও এই ডিএলএস মেথডের আশ্রয় নেওয়া হয় আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ বিঘ্নিত হলে ।
এই পদ্ধতি আসার আগে বৃষ্টি অথবা আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত ম্যাচগুলির ন্যায্য মিমাংসার জন্য ক্রিকেট সংগঠকেরা দুটি সাধারণ পন্থা অনুসরণ করতেন । সেগুলো হলো , এক , গড় রানরেট পদ্ধতি এবং দুই , সর্বাধিক উৎপাদনশীল ওভার পদ্ধতি । এ দুই পদ্ধতির কোনোটাই ত্রুটিমুক্ত ছিল না । ম্যাচের যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা তথা ন্যায্য মিমাংসার ক্ষেত্রে এই দুটি পদ্ধতি নিয়ে সকলেই সন্দিহান থাকতেন । তাই নিয়ে আসা হয় ডিএলএস মেথড । তবু বিতর্ক রয়েই গেছে । অনেকেই ভাবছেন , ডিএলএস বাস্তবসম্মত কোনো পদ্ধতি নয় , এই পদ্ধতি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ এবং এতে ন্যায়বিচার ব্যাহত হচ্ছে।

সংক্ষেপে এই নিয়মটা হলো এইরকম :
Team B par Score = Team A Score × ( Team B resources / Team A resources )

আরও পড়ুন- ব্যস্ত রাস্তায় সরজেমিনে নজর! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পথে পরিবহন মন্ত্রী

_

_

_

_

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...