সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতিসাধনের সঙ্গে জড়িত যে কাউকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করেছেন।সিরিয়ায় কয়েক দিনের সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানির পর এমন অঙ্গীকার করেন শারা। অভিযোগ, গত কয়েক দিনে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী সংখ্যালঘু আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এটি ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সম্প্রদায়।সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার পশ্চিম উপকূলে আলাউইত সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ‘নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে’ ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ‘প্রতিশোধ-হত্যার’ শিকার হচ্ছে আলওয়াইট নামে এক সংখ্যালঘু শ্রেণি, যাদের বাস মূলত সিরিয়ার উপকূলবর্তী এলাকা লাটাকিয়া এবং টারটসে।কয়েকদিন ধরেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই মানুষদের উপর লাগাতার হামলা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে বেছে বেছে খুন করা হচ্ছে আলওয়াইটদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, যে সমস্ত গ্রামে আলওয়াইটদের বাস, সেখানে দেহ স্তূপাকার হয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি স্থানীয়দের দেহ নিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।


সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ আলওয়াইটরা। কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীটি আসাদের আমলে বেশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। আসাদ নিজে এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় তার আমলে প্রশাসন এবং সামরিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেতে থাকেন আলওয়াইটরা। কিন্তু আসাদ পরিবারের আমলে পাঁচ দশক ধরে চলা এই ‘পক্ষপাত’ সহ্য হয়নি ইসলামপ্রধান দেশটির সুন্নি জনগোষ্ঠীর। কিন্তু আসাদের প্রভাবে পাল্টা কোনও পদক্ষেপও করতে পারেনি তারা।

গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ সরকারকে উৎখাত করে শারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পরে শারা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।রবিবার সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বক্তব্যে শারা দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে ধরারও অঙ্গীকার করেন। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের হিসাব অনুসারে, গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ২৩১ জন সদস্য এবং ২৫০ জন আসাদপন্থী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ৩১১।


আসাদ সরকারের পতনের পরে সিরিয়ায় ক্ষমতায় আসে গোঁড়া ইসলামিক রীতি মেনে চলা সুন্নি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। তার পরেই সরকারি বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায় অন্য গোঁড়া গোষ্ঠীগুলি। আক্রমণ নেমে আসে তুলনায় উদার মনোভাবাপন্ন আলওয়াইটদের উপর।ফ্রান্স গণহত্যার উপযুক্ত তদন্ত করার জন্য সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে।যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, দেশের বেশির ভাগ অংশেই নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে পৌঁছোনোর রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে।

–

–

–

–

–

–

–