সদ্যজাত শিশু থেকে মৃত্যুপথযাত্রী, রাজ্যের সব মানুষের জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করতে, তাঁদের জীবনকে সহজ করার জন্য বরাবর যেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), তেমনভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আজ পর্যন্ত কোনও রাষ্ট্রনেতাকে দেখা যায়নি। সেই মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫২ চাকরিহারা শিক্ষকদের (teachers) পাশে অভিভাবকের ভূমিকায় এসে দাঁড়াবেন তা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের কনভেনশনে চাকরি হারানো শিক্ষকদের পরিবারের অন্দরের ব্যথা তুলে ধরলেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) হিসাবে তাঁদের হাত কখনই ছাড়বেন না তিনি।

এই পরিস্থিতিতে চাকরিহারা শিক্ষকদের যেমন আইনি পথে চাকরি ফিরে পাওয়ার পথ দেখানো কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই তাঁদের মানসিক জোর দেওয়াও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই জায়গা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বলেন, সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) যদি স্বচ্ছতা দেয় আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। আর যদি স্বচ্ছতা না দেয় তাহলে আমাদের রাস্তা থেকেই রাস্তা বের করে নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াব যাতে আপনাদের কোনও অসুবিধা না হয়। দুমাস সাফার করলে বিশ বছর সাফার করতে হবে না। আর ওই দুমাসও পুষিয়ে দেব। আমার জীবনে কথা মানে কথা। আমি যেটা কথা দিই আমি শেষ পর্যন্ত সেই কাজটা করে দেখাই।

শিক্ষক সমাজ জাতির মেরুদণ্ড। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আজ বাংলার সেই শিক্ষক সমাজ চরম অপমানের মুখে। সোমবারের কনভেনশনে শিক্ষক প্রতিনিধিরা সেই কথাও তুলে ধরেন। আর সেই কথা বলতে বলতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তাঁকে চোখের জল ফেলতে দেখে কাছে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister)। চোখের জল না ফেলে প্রশাসনের উপর আস্থা রাখার বার্তা দেন।

চাকরিহারা শিক্ষকরা যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরই দায়িত্ব, তা এদিনের কনভেনশন থেকে স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আগে যে তাঁদের পরিবারের কথাই যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গুরুত্ব পেয়েছে, এদিন শিক্ষকদের সামনে তা তিনি তুলে ধরেন। যেভাবে কোথাও প্রশাসনিক কাজে গেলে স্থানীয় মানুষদের খোঁজ নিতে দেখা যায় জনদরদি মুখ্যমন্ত্রীকে, এদিনও সেভাবেই শিক্ষকদের কথা তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি জানি অনেক পরিবার আছে যারা গাড়ির জন্য লোন নিয়েছেন, বাড়ির জন্য লোন (loan) নিয়েছেন। বাচ্চার পড়াশোনা চালান। বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখেন। ওষুধের খরচ দেন। সংসার চালান। নতুন করে বিয়ে করেছেন। তাদের সংসার তৈরি করেছেন।


যাদের পরিবারের প্রতিটি অসুবিধার খবর এভাবে রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদের নির্ভরতা দেওয়ার জন্যই যে নেতাজি ইন্ডোরে শিক্ষকদের ডেকেছিলেন এদিন তিনি তা নিয়েও অপব্যাখ্যা করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। সব কুৎসার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন, আপনারা কী ভাবেন। আমি এত বোকা। তাদের সবটা বাতিল করে দেব, তারা অযোগ্য (tainted) নয় জেনেও। এটা হতে পারে না। যারা যোগ্য (untainted) নিশ্চিন্তে থাকুন। ভরসা রাখুন। আস্থা রাখুন। পাবেনই। চিন্তা করবেন না। কারো চাকরি কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। আপনারা পড়াশোনা করুন। আপনারা বাচ্চাদের মানুষ করুন।


সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) সিদ্ধান্তের পরেই চাকরিহারা শিক্ষকদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister)। আর তাতেই পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে অনেক রাজনৈতিক দলের। যেভাবে শিক্ষকদের কাছে টেনে নিয়ে তাঁদের চোখের জল মোছানোর ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে তাঁর উপরই আস্থা রেখেছেন চাকরি হারানো শিক্ষক সমাজ। তার পিছনে যে কোনও রাজনীতি নেই এদিন স্পষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই। সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে তিনি বলেন, এই আঘাত আপনাদের উপর আঘাত নয়। এই আঘাত আমার উপর মানসিকভাবে আঘাত। আমাদের সরকারকে আঘাত করেছে। এই আঘাতের প্রত্যুত্তর আমরা ফিরিয়ে দেব – কাজের মধ্যে দিয়ে, সম্মানের মধ্যে দিয়ে, জীবন-জীবিকার মধ্যে দিয়ে।

–

–

–
–

–
