কাশ্মীরে ঝরছে রক্ত, বৈঠক এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত বিহারের ভোট বাক্স ভরাতে

কাশ্মীর শান্তিতে আছে বলে এতদিন যে মিথ্যে দাবি করছিলেন বিরোধীদের মুখোমুখি হলে জবাবদিহি করতে হবে বলে বৈঠক এড়িয়ে গেলেন মোদি, উঠছে প্রশ্ন।

মানুষের মৃত্যুর থেকে বড় হতে পারে কি রাজনীতি, সর্বদলীয় বৈঠক এড়িয়ে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) বিহার সফরে ঘিরে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনে। পহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিহত ২৬ পর্যটকের রক্তের দাগ এখনও তাজা, উপত্যকায় কান পাতলেই বারবার যেন ফিরে আসছে ৪০ রাউন্ড গুলি চলার ভয়াবহ স্মৃতি। ফুঁসছে গোটা দেশ। কেমন ভাবে পাল্টা জবাব দিবে ভারত,তা নিয়ে আজ সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্র। অথচ সেই বৈঠক এড়িয়ে বিহারে ‘ভোট প্রচারে’ ব্যস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে মসনদে বসতে নীতিশ সমর্থন পেতে হয়েছে মোদি সরকারকে। তাই কি ক্ষমতা ধরে রাখতে বিহার তোষামদে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী? নাকি কাশ্মীর শান্তিতে আছে বলে এতদিন যে মিথ্যে দাবি করছিলেন বিরোধীদের মুখোমুখি হলে জবাবদিহি করতে হবে বলে বৈঠক এড়িয়ে গেলেন মোদি, উঠছে প্রশ্ন।

কাশ্মীরে হামলার জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। পাকিস্তানিরা যে এ দেশে অবাঞ্ছিত তা স্পষ্ট করে ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে এমনকি সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখা থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্লক করা হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে।বুধবার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠকে একাধিক কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবার বৃহস্পতিবার বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছে। কিন্তু সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমনকি বিদেশমন্ত্রীর উপস্থিতির কথা জানা গেলেও প্রধানমন্ত্রী না থাকায় একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ৪৮ ঘণ্টা আগে ভূস্বর্গের ভয়াবহ ঘটনার শোকের আবহ থেকে এখনও বেরোতে পারিনি দেশের আমজনতা অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজের ভোট বাক্স ভরাতে সব ছেড়ে বিহারে চললেন প্রচারে? পিএমও সূত্রের খবর, বিহারের মধুবনীতে প্রধানমন্ত্রীর পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। সেখানে একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মোদি। পঞ্চায়েতি রাজ দিবসের অনুষ্ঠানেও যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। এই কারণেই জঙ্গি হামলায় নিহত পর্যটকদের মৃত্যুর মতো স্পর্শকাতর বেদনাদায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠককে প্রাধান্য না দিয়ে মোদি চলে গেলেন বিহারে। তোপ দেগেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রচার বিভাগের প্রধান জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh) সোশ্যাল মিডিয়া লেখেন, “পহেলগাঁও ইস্যুর স্পর্শকাতরতা এবং গভীরতা বুঝে প্রধানমন্ত্রীর উচিত এই ইস্যুতে সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত থাকা। কংগ্রেস তেমনটাই প্রত্যাশা করে। দেশবাসীর মানসিকতাও তেমনই।” প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে ব্যস্ততার কারণে এনডিএর জোটসঙ্গী জেডিইউ সর্বদলীয় বৈঠকে কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে না। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবার পরও, মানুষের নিরাপত্তা আর জীবনের মূল্য না দিয়ে নরেন্দ্র মোদি কী করে ভোট বাক্সের হিসেব ঠিক রাখতে বিহার সফরে যেতে পারেন। আসলে নীতিশ তোষণ না করলে যে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না, তাই আমজনতার মৃত্যুর থেকেও নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি বেশি প্রয়োজনীয় মোদির কাছে।এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মকেন্দ্রিক জনবিরোধী মানসিকতা ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।