প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পকে ঘিরে এবার উঠছে তীব্র প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্য বলছে, এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকেই ভারতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে মহিলা ও কন্যাশিশু নিখোঁজের ঘটনা। আর সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্য মধ্যপ্রদেশ।

২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ১০,৬১,৬৪৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা এবং ২,৫১,৪৩০ জন নাবালিকা নিখোঁজ হয়েছেন বলে লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক স্বীকার করেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে নিখোঁজ মহিলার সংখ্যা পৌঁছেছে ১৩.১৩ লক্ষে।এই বিপুল সংখ্যার ভিতর সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হল, মধ্যপ্রদেশে তিন বছরে ১,৬০,১৮০ জন মহিলা ও ৩৮,২৩৪ জন নাবালিকা নিখোঁজ হয়েছেন। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ৩১ জন মহিলা এবং চারজন কন্যাশিশু নিখোঁজ হচ্ছেন রাজ্যজুড়ে।

কিন্তু আরও চাঞ্চল্যকর হল, এই বিপুল ঘটনার বিপরীতে মাত্র ৭৩০টি নিখোঁজ মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। শুধুমাত্র উজ্জয়িনী জেলাতেই বিগত ৩৪ মাসে নিখোঁজ হয়েছেন ৬৭৬ জন, অথচ নেই একটি অভিযোগও! ইন্দোর শহরে নিখোঁজের সংখ্যা ২,৩৮৪, কিন্তু মামলা দায়ের হয়েছে মাত্র ১৫টি। চলতি বছরের মে মাসে একটি ছ’বছরের শিশুকন্যা নিখোঁজ হওয়ার পর মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় মহিলা কমিশন নোটিস পাঠায়। সেখানে জানানো হয়, গত তিন বছরে রাজ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মহিলা ও কিশোরী নিখোঁজ হয়েছেন, অথচ প্রশাসনের হাতে নেই তাঁদের হদিশ। ২০০৩ সাল থেকে একটানা বিজেপির শাসনে থাকা মধ্যপ্রদেশে ২০১৪ থেকে চলছে তথাকথিত ডবল ইঞ্জিন সরকার। অথচ সেই শাসনেই নারী নিরাপত্তা বিপন্ন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা চূড়ান্ত।

সম্প্রতি একাধিক বেসরকারি হোম থেকে শিশু ও কিশোরীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর চিত্র। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মেলার পরও বহুক্ষেত্রে নিখোঁজদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের ব্যর্থতায় হারিয়ে গিয়েছেন অজস্র ‘বেটি’। সমালোচক মহলের প্রশ্ন— “বেটি বাঁচাও” প্রকল্পের আড়ালে কি আসলে এই নিখোঁজের পর্দা ফেলার প্রচেষ্টা? বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে যেখানে নারী নিখোঁজ, পাচার ও নিগ্রহের ঘটনা বেড়েই চলেছে, সেখানে এই প্রকল্প কি নিছকই প্রচার কৌশল?

এদিকে, বাংলাকে নিয়ে বারবার অভিযোগের তির ছোঁড়া বিজেপি নিজেদের শাসিত রাজ্যগুলিতে নারীদের নিরাপত্তার বিপর্যয় নিয়ে এখন নীরব। প্রশ্ন উঠছে, যেখানে নারীদের সন্ধানই মিলছে না, সেখানে উন্নয়নের স্বপ্ন কীভাবে দেখানো হচ্ছে? বিরোধীদের দাবি, মুখে ‘নারী সুরক্ষা’-র বুলি আর পর্দার আড়ালে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা, এই দ্বিচারিতাই আজ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে দেশের বহু প্রান্তে।

আরও পড়ুন – বাংলা বলায় বিপদ! দিল্লিতে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক কোচবিহারের ৭ শ্রমিক

_

_

_

_

_
_
_
_
_