প্রয়াত কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএমের শতায়ু নেতা ভি এস অচুত্যানন্দন (V. S. Achuthanandan)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলের সঙ্গে যোগ ছিল তাঁর। দু’বার দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি পলিটব্যুরো থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন অচুত্যানন্দন। কিন্তু জনমানসে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কখনও কমেনি। কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

অচুত্যানন্দনের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনালগ্নে। ১৯৪০-এর দশকে তিনি পার্টিতে যোগ দেন। বামপন্থী রাজনীতির কঠোর অনুশাসনের মধ্যেও নিজের মত ও নৈতিক অবস্থানে আপোষ করেননি কখনও। দলীয় মতবিরোধ বা নেতাদের সঙ্গে দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও, নিজস্ব অবস্থানে ছিলেন অবিচল।

সিপিএম-এর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মত বিরোধের জেরে ২০০৭ সালে অচুত্যানন্দনকে প্রথমবার পলিটব্যুরো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও কিছুদিন পরে তাঁকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়, কিন্তু ২০০৯ সালে SNC Lavalin দুর্নীতি কাণ্ডে নিজের অবস্থান থেকে না সরে তিনি আবারও পলিটব্যুরো থেকে বহিষ্কৃত হন। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েও একাধিকবার সাধারণ মানুষের পক্ষে সরব হয়েছিলেন তিনি। পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান তাঁকে ‘জননেতা’ হিসেবে গড়ে তোলে। বারবার বহিষ্কৃত হয়েও দলের সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা থেকে যায় অটুট।

২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভি এস। প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনা, ভূমি সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান তাঁর সময়কালের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেই তিনি বহু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা তাঁর নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। অচুত্যানন্দনের মৃত্যুতে কেরালা তথা ভারতীয় বাম রাজনীতি এক নীতিবান, সাহসী ও আপোষহীন নেতাকে হারাল। যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মানলেও চোখ বুজে সমর্থন করতেন না, নিজের বোধ ও দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যুত হননি কখনও।

কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ”কেরালার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা ভিএস অচ্যুতানন্দনের পরিবার, স্বজন এবং সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানাই। এই প্রবীণ নেতার মৃত্যু জনজীবনে এক শূন্যতা তৈরি করবে।” আরও পড়ুন: রাম-বাম-শ্যামকে একযোগে নিশানা, জানুন দলের ইতিহাস, বার্তা তৃণমূল সভানেত্রীর

–

–

–

–

–

–
–
–
–
–