Thursday, August 21, 2025

হিটলারি আঘাত: ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী’ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় গর্জে উঠলেন মমতা

Date:

Share post:

“কালো দিন, কালো বিল“ লোকসভায় সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার পরেই গর্জে উঠলেন বাংলা মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিরোধীদের তুমুল আপত্তির মধ্যেই বুধবার, লোকসভায় তিনটি বিল (Bill) পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রধানমন্ত্রী বা কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা ৩০ দিনের বেশি জেলে থাকলে পদ হারাতে হবে- রয়েছে এই বিলে। বিরোধীদের বিক্ষোভের মধ্যেই ওই পেশ হয়। আর তারপরেই স্যোশাল মিডিয়ায় গর্জে ওঠেন মমতা। এটাকে গণতন্ত্রের কালো দিন বলে তীব্র নিন্দা করেন মমতা।

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (X-Handle) মমতা লেখেন,
“আজ কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা ১৩০তম সাংবিধান সংশোধনী বিলের নিন্দা জানাই। আমি এটিকে জরুরি অবস্থার চেয়েও বেশি পদক্ষেপ হিসেবে নিন্দা জানাই। ভারতের গণতন্ত্রকে চিরতরে শেষ করার একটি পদক্ষেপ। এই কঠোর পদক্ষেপ ভারতে গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়তার জন্য মৃত্যুঘণ্টা।
বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)-এর নামে ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পরে এটি কেন্দ্রের আরেকটি অতি-কঠোর পদক্ষেপ।“

এই বিল দেশেরে আইন ব্যবস্থাকে শেষ করতে চায় বলে অভিযোগ জানিয়েছে বাংলার মুথ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) লেখেন,
“এই বিলটি এখন আমাদের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষ করতে চায়। আমরা যা দেখছি তা নজিরবিহীন – বিলটি ভারতীয় গণতন্ত্রের আত্মার উপর হিটলারের আক্রমণের চেয়ে কম কিছু নয়। বিলটি বিচার বিভাগের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে – ন্যায়বিচার এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্যের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বিষয়গুলির বিচারে আদালতের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাইছে। দলের হাতে এই ক্ষমতা দিয়ে বিলটি গণতন্ত্রকে বিকৃত করেছে।“

মমতার কথায়, “এটি সংস্কার নয়। এটি এমন একটি ব্যবস্থার প্রতি পশ্চাদপসরণ যেখানে আইন আর স্বাধীন আদালতের হাতে থাকে না বরং স্বার্থান্বেষীদের হাতে চলে যায়। এটি এমন একটি শাসন প্রতিষ্ঠার একটি ভয়ঙ্কর অপচেষ্টা যেখানে বিচারের তদন্তকে স্তব্ধ করে। সাংবিধানিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা এবং জনগণের অধিকার পদদলিত করা হয়। এইভাবে কায়েমী শাসনব্যবস্থা, এমনকী ইতিহাসে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাও ক্ষমতাকে এক করে দেয়। বিংশ শতাব্দীর অন্ধকারতম অধ্যায়গুলিতে বিশ্ব একসময় যে মানসিকতার নিন্দা করেছিল, এটি তারই গন্ধমাখা।“

আদালতের স্বাধীনতার উপর আঘাত বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আদালতকে দুর্বল করা মানে জনগণকে দুর্বল করা। তাদের ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানে গণতন্ত্রকেই অস্বীকার করা। বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো – ফেডারেলিজম, ক্ষমতা পৃথকীকরণ এবং বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা – নীতিগুলিকে আঘাত করে – যা সংসদও অগ্রাহ্য করতে পারে না। যদি এটি পাশ করা হয়, তবে এটি ভারতে সাংবিধানিক শাসনের জন্য মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা হবে।
আমাদের এই বিপজ্জনক সীমালঙ্ঘনকে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের সংবিধান ক্ষমতার অস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিতদের সম্পত্তি নয়। এটি ভারতের জনগণের।
বিলের উদ্দেশ্য হল এক ব্যক্তি-এক-দল-এক সরকার ব্যবস্থাকে সুসংহত করা। বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে পদদলিত করে।
বিলটি নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষকে  (ইডি, সিবিআই – যাদের সুপ্রিম কোর্ট ‘খাঁচাবদ্ধ তোতা’ বলে বর্ণনা করেছে) ব্যাপক ক্ষমতা দেয়। এটি আমাদের সংবিধানের মৌলিক নীতির বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অশুভ উপায়ে ক্ষমতায়িত করার একটি পদক্ষেপ।“ তীব্র বিরোধিতা মমতার।

তৃণমূল (TMC) সভানেত্রীর স্পষ্ট বার্তা, “যেকোনও মূল্যে বিলটি প্রতিহত করতে হবে! এই মুহূর্তে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে! জনগণ তাদের আদালত, তাদের অধিকার এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টাকে ক্ষমা করবে না।
জয় হিন্দ!“

spot_img

Related articles

যোগীরাজ্যের পাঠ্যপুস্তকে বাদ কেন রবীন্দ্রনাথকে? সাংসদ ঋতব্রতর প্রশ্নে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

উত্তরপ্রদেশের দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বাদ দেওয়া হয়েছে? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নে স্পষ্টতই...

প্রয়াত সিপিএম নেতা-প্রাক্তন মন্ত্রী দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া

প্রয়াত সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া। বুধবার এনআরএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।...

উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে ডাক মেলেনি! শীর্ষ আদালতে শান্তা দত্ত 

স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্বে ডাক পাননি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত। যোগ্য হয়েও তাঁকে সুযোগ দেওয়া...

১৫ দিনেই রেকর্ড সাফল্য! রাজ্যে সাড়া ফেলল ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি

মাত্র পনেরো দিনেই নজির গড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন কর্মসূচি, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’। রাজ্যের মানুষের হাতে উন্নয়নের...