Thursday, December 18, 2025

মহারাষ্ট্র পুলিশের বেপরোয়া অত্যাচার! প্রাণ গেল আরও এক বাংলার শ্রমিকের

Date:

Share post:

মাত্র চার দিনে মহারাষ্ট্র পুলিশের এত অত্যাচার যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মন্ডলকে। কিছুটা সুস্থ হলেও শেষ রক্ষা হলো না। সোমবার মারা গেলেন উত্তর ২৪ পরগনার পরিযায়ী শ্রমিক (migrant labour) গোলাম মন্ডল। শুধুমাত্র বাংলা (Bengali) বলার অপরাধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাংলার শ্রমিকদের উপর মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বিজেপি প্রশাসন কতটা অত্যাচার চালিয়েছে, তা মৃত্যুর আগে দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের সাংবাদিক বৈঠকে এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গোলাম।

মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে (Mumbai) মিরা রোড গার্ডেন এলাকায় কাজ করতেন পরিযায়ী শ্রমিক গোলাম মন্ডল। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া এলাকার আর পাঁচজন শ্রমিকের মতোই অনেক বছর ধরে সেখানকার শ্রমিক ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনদিনও শুধুমাত্র বাংলা বলার অপরাধে এমন পরিণতি হবে তা ভাবতে পারেননি গোলাম। চলতি বছর ঈদের (Eid) পরদিন যে এলাকায় গোলামের বসতি ছিল, সেখান থেকে চারশ জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে তুলে নিয়ে যায় মহারাষ্ট্র পুলিশ। দিনরাত রোদ-বৃষ্টি-জলে মাঠের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তাঁকে বসিয়ে রাখে। বসিয়ে রাখে আরও ৪০০ বাংলার শ্রমিককে।

রাজ্যের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে মহারাষ্ট্র থেকে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে বাংলায় ফিরে আসার পর সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছিলেন গোলাম মন্ডল। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের পক্ষ থেকে যে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন তিন দিন তিন রাত শুধুমাত্র ভাত খেতে দিয়ে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট দল করে বসিয়ে রেখেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। চতুর্থ দিন জানানো হয়েছিল পরের দিন ছাড়া হবে। অথচ এই শ্রমিকদের সকলেরই দেশের নাগরিকত্বের বৈধ কাগজপত্র ছিল।

চাঞ্চল্যকরভাবে মহারাষ্ট্র পুলিশকে (Maharashtra police) আধার কার্ড (Aadhaar card) দেখানোয় তারা দাবি করেছিল, মহারাষ্ট্রে এই পরিচয়পত্র ৫০ টাকা দিলে পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ তো ছিলই। মহারাষ্ট্র পুলিশ তাদের জানিয়েছিল, তোমরা দিদির এলাকার লোক। দিদির এলাকায় ডালভাত খাও। এখানে থাকলে আজ ছাড়ছি, পরে আবার ধরে আনব, জানিয়েছিলেন গোলাম মন্ডল।

আরও পড়ুন: পুণ্যের টানে ৬১জন একই ট্রাক্টরে! ট্রাকের ধাক্কায় যোগীরাজ্যে মৃত ৮

চার দিনের পুলিশি অত্যাচারে বাংলায় ফিরেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল গোলামকে। ৭-৮ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বাড়ি ফিরেও চলছিল ওষুধ। চিকিৎসক তাঁকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মনের ব্যথা ব্যক্ত করেছিলেন গোলাম। তবে শেষ পর্যন্ত কত বছর আর তাঁকে ওষুধ খেতে হল না। সেই অসুস্থতা আর কাটলো না। সোমবার উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ার বাড়িতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার।

গোলাম মণ্ডলের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের (Desh Banchao Ganomancho)। সদস্য ও সাংসদ দোলা সেন (Dola Sen) জানান, পুলিশি অত্যাচারেই অসুস্থ ছিল। আর সেই অত্যাচার শুধুমাত্র বাংলা বলার কারণে। এর আগে গোলাম মণ্ডলের অন্য কোনও অসুস্থতা ছিল না। এভাবেই বিজেপির প্রশাসনের বাংলা বিরোধী নীতিতে আরও এক বাংলার শ্রমিকের মৃত্যু হল।

spot_img

Related articles

মানহানির অভিযোগে প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ কুমার শানু

সংগীতজগতে দীর্ঘ চার দশকের সাফল্যের কাহিনি থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কে ফের শিরোনামে কিংবদন্তি গায়ক কুমার শানু। প্রাক্তন স্ত্রী...

বড়দিন ও বর্ষবরণে আইনশৃঙ্খলা আঁটসাঁট, পুলিশের ছুটিতে নিষেধাজ্ঞা রাজ্য জুড়ে 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেল বড়দিনের উৎসব। কলকাতার অ্যালেন পার্ক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের...

বাজেয়াপ্ত যুবভারতীর সিসিটিভি ফুটেজ, নজরে শতদ্রু ঘনিষ্ঠরা

যুবভারতীতে মেসি(Messi) ইভেন্ট চরম বিশৃঙ্খলায় তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার গঠিত সিট(SIT)। যুবভারতীর (Yubha bharati) যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ...

সিইও দফতরের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, শুক্রবার থেকেই মোতায়েন

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর নিরাপত্তায় এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী (central security force) মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে...