Sunday Feature: ভূতের বিয়ে! প্রথা আছে এদেশে, বিদেশেও

Date:

Share post:

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “পয়সা থাকলে ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হয়!” কথাটা তির্যকভাবে বলা ঠিকই কিন্তু আত্মাদের নিয়ে বিভিন্ন প্রথা আছে পৃথিবী জুড়ে- তার মধ্যে একটি প্রথা দুটি আত্মার (spirit) বিবাহ। সহজ কথায় বললে, ‘ভূতের বিয়ে’। আশ্চর্য হচ্ছেন? এই প্রথা আছে ভারতেরই দাক্ষিণাত্যে। আবার এর খোঁজ পাওয়া যায় চিনেও। কেন এই উদ্যোগ? দুটি অবিবাহিত মানুষ তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী যাঁদের বিয়ে হয়নি অথবা বাগদান (courtship) সারা হয়েছে কিন্তু গাঁটছড়া (marriage) বাঁধা হয়নি। তার আগেই জীবনে নেমে এসেছে অন্তিম সময়। সেই ‘অতৃপ্ত’ আত্মাদের বিয়ে দেন অভিভাবকরা।

প্রেত মাধিভ- এই প্রথা প্রচলিত কর্ণাটক (Karnataka) ও কেরালার (Kerala) বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রয়াত আত্মাদের মধ্যে বিবাহের অনুষ্ঠানকে অত্যন্ত মর্যাদা দেওয়া হয়। কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে- তা নাকি স্বর্গেই ঠিক করা হয় ৷ পৃথিবীতে তাঁদের মিলন হয়৷ এই দুই উপকূলীয় রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করেন, ধরাধামে সেই বিয়ে না হয়ে কারও মৃত্যু হলে তা খুবই দুঃখের৷ তাই নশ্বর দেহে প্রাণ না থাকলেও আত্মাদের ধুমধাম করে মৃতদের বিয়ে (ghost marriage) দেওয়া হয় ৷

যে সব পরিবারের সন্তান বিয়ের আগেই অল্প বয়সে মারা গিয়েছেন, সেই পরিবারগুলি এই প্রথা মানে৷ মৃত ছেলে- মেয়ের বিয়ের এই প্রথাকে বলা হয় ‘প্রেথা মাদুভে’ বা ভূতের বিয়ে৷ যত দিন না এই বিয়ে হবে, ততদিন পর্যন্ত মৃত মেয়ে বা ছেলের আত্মা অতৃপ্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবে- এটাই তাদের অন্ধবিশ্বাস। এমনকী উপযুক্ত পাত্র বা পাত্রীর সন্ধান চেয়ে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় ৷

দক্ষিণ ভারতের থেকে ভৌগলিক অবস্থানে যত দূরেই হোক না কেন এই প্রথার সঙ্গে অদ্ভুত মিল আছে চিনের কিছু অংশের। সেখানেও এই ভাবেই বিয়ে দেওয়া হয় মৃতদের। এটি কুসংস্কার হলেও এতেই বিশ্বাস করে এখনও দেশটিতে ভূতের বিয়ের রীতি প্রচলিত রয়েছে। সাউথ চায়না মনিং পোস্টের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, চিনের কিছু অঞ্চলের মানুষ ভূতের বিয়ের প্রথায় বিশ্বাস করে। মূলত এই প্রথাটি চালু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২২১-২০৭-তে। চিনের কিছু অঞ্চলের মানুষেরা বিশ্বাস করেন- কেউ যদি অবিবাহিত থেকে মারা যান তবে তাঁর আত্মা পরকালে শান্তি পায় না। তাই আত্মার শান্তির জন্য জীবিত মানুষের সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। উত্তর চিন শানসি, শানডং এবং হেবেই প্রদেশে এখনও ভূত বিয়ের প্রচলিত রয়েছে।

দুই ধরনের ভূতের বিয়ে এসব অঞ্চলে প্রচলিত। প্রথমত, যাঁরা বাগদানের আগে বা বাগদানের পরে মারা যান তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয়। মৃত মানুষটির পরিবারের লোকজন বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এরপর একসঙ্গে কবর দেন।

আরেকটি প্রথা হল, যেসব মানুষ বিয়ের আগেই মারা যান, তাদের কারও সঙ্গে বাগদানও হয়নি- মৃত্যুর পরে রীতিমতো ঘটকালী করে তাঁদের মরণোত্তর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রথায় ঘটকরা মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক হাতিয়ে নেন।

আরও পড়ুন: কৃষ্ণনগর ছাত্রী খুন: সাতদিন পালিয়েও অবশেষে পুলিশের জালে দেশরাজের বাবা

বিয়ের একটি প্রতিষ্ঠান সামাজিক ও আইনত দুটি মানুষের একত্রে বাসের স্বীকৃতি। সভ্যতার শুরুর দিকে বিয়ের কোনও প্রচলন না থাকলেও যত বিবর্তন এসেছে, সমাজ গড়ে উঠেছে- ততই বিয়ের উদাহরণ দেখা গিয়েছে। যা আধুনিক সমাজেও বর্তমান। আর সেই বিয়ের হওয়া বা না হওয়াকে কেন্দ্র করে সমাজে বিভিন্ন রকম কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসও গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের আলোতেও যা মোছা যাচ্ছে না। আত্মার বিয়ে তেমনই এক কুসংস্কার বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

spot_img

Related articles

বাংলা মডেলে দিল্লির দুর্গাপুজোতে ছাড় ঘোষণা রেখা গুপ্তার, সঙ্গে আজব ফরমান!

মডেল বাংলা। সেই পথে হেঁটেই দিল্লির (Delhi) দুর্গাপুজোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার (Rekha Gupta)। সঙ্গে...

ভারত-পাক ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে কে? আম্পায়ারের নাম শুনলে চমকে যাবেন

মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে  এশিয়া কাপ (Asia Cup)। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত-পাকিস্তানের ( IND vs PAK) মেগা ম্যাচ।...

মঙ্গলে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন: থাকবেন তৃণমূলের ৪১ সাংসদ, সোমে সংসদে মক পোল

মঙ্গলবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিরোধীদের জোট শিবিরের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডিকে ভোট দিতে তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার মোট ৪১...

সুপার কাপ নিয়ে ক্লাবদের চিঠি, কী জানতে চাইল এআইএফএফ?

আইএসএল (ISL) নিয়ে জট এখনও কাটেনি। সুপ্রিম কোর্টের ( Supreme Court) নির্দেশের পরেই আইএসএল নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে এআইএফএফ...